Samakal:
2025-11-03@19:37:03 GMT

‘কসম’ সংগ্রহে হুড়োহুড়ি

Published: 13th, March 2025 GMT

‘কসম’ সংগ্রহে হুড়োহুড়ি

নান্দাইল উপজেলার নরসুন্দা নদী খনন কাজে পাওয়া যায় এক ধরনের কালো মাটি। স্থানীয়দের কাছে যা ‘কসম’ নামে পরিচিত। রান্নাবান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে নদীতীরের বাসিন্দাদের কসম সংগ্রহে হুড়োহুড়ি চলছে।

‘কসম’ এক ধরনের কালো মাটি, যা প্রাচীন কোনো জলাশয়, নদীর তীর বা তলদেশে পাওয়া যায়। সাধারণ মাটি থেকে কসম একটু কালো এবং ওজনে হালকা। এ মাটি রোদে শুকিয়ে সারাবছর রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নান্দাইলের নরসুন্দা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং সারাবছর নৌ চলাচল সুবিধা রক্ষায় নদীটির ২৩ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০ দিন আগে ১৩টি খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে উপজেলার পূর্ব সীমানা চংভাদেড়া গ্রামে নদী খনন শুরু হয়। খননকাজ এগিয়ে কালিগঞ্জ বাজার পার হয়ে শুভখিলা রেল সেতু পর্যন্ত এসেছে। খনন করতে গিয়ে নদীর কাদামাটির নিচে বা পাশে এক ধরনের হালকা কালো মাটি পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সে মাটি সংগ্রহের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছে। কে কার আগে বেশি সংগ্রহ করবে তা নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে প্রতিযোগিতা।

গত মঙ্গলবার কালিগঞ্জ বাজারের কাছে এবং শুভখিলা গ্রামে রেল সেতুর নিচে গিয়ে দেখা যায় খনন কাজ চলছে। খনন যন্ত্রের আশপাশে দুই পারের বিভিন্ন বয়সের লোক কোদাল, শাবল নিয়ে যে যেভাবে পারছে কসম সংগ্রহ করছে। তাদের কারও হাতে বস্তা বা কারও হাতে বড় গামলা বা খাদি। সেসব ভরে ভরে মাটি পারে নিয়ে জমা করছে। কেউ কেউ আবার নদীর মাটির নিচে পাওয়া অর্ধপচা প্রকাণ্ড গাছের গুঁড়ি কেটে কেটে লাকড়ি সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত।

কসম সংগ্রহে আসা কয়েকজন জানান, বেশ কয়েক বছর আগে এখানে নদীর তীরে কালো মাটি পাওয়া গিয়েছিল। কৌতূহলবশত সে মাটি শুকিয়ে দেখা যায় ভালো জ্বলে। মাঝখানে আর সে মাটি পাওয়া যায়নি বলে ব্যবহারও করা যায়নি। নদী খনন করতে গিয়ে এখন সে মাটির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক এবং শুভখিলা গ্রামের শামছুল হক জানান, বাপ-দাদার কাছে শুনেছেন, বড় বড় গাছপালা নদীর মাটির নিচে চাপা পড়ে এ ধরনের কালো মাটিতে পরিণত হয়েছে। শুদ্ধ ভাষায় এ মাটিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হলেও স্থানীয়ভাবে নাম দিয়েছেন কসম। রান্নাবান্নায় কসম যে কোনো লাকড়ি বা গ্যাসের চেয়েও বেশি জ্বলে, রান্নাও হয় দ্রুত। দু-একটি টুকরো দিয়েই সব রান্না হয়ে যায়। 

নরেন্দ্রপুরের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কসম’ সাধারণ মাটির মতোই, তবে একটু কালো ও নরম। সংগ্রহের পর টুকরা টুকরা করে ১৫ থেকে ২০ দিন রোদে শুকাতে হয়। এরপর সারাবছর রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে মজুত রাখা হয়।

কালিগঞ্জ বাজারের কাছের বাসিন্দা দিগেন্দ্র জানান, নদীতীরের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা এ মাটি সংগ্রহ করছেন। তিনিও ঝালমুড়ি বিক্রির ব্যবসা বন্ধ রেখে কয়েক দিন ধরে কসম সংগ্রহ করছেন। যে পরিমাণ কসম সংগ্রহ করেছেন তাতে আগামী ৪ মাস তাঁর জ্বালানি খাতে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। 

রিপা রানী নামে একজন বলেন, ‘স্বামীকে নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে এ মাটি সংগ্রহ করছি। এখন আর শরীরে দিচ্ছে না, না হলে সারাবছরের জ্বালানির সমস্যা মিটে যেত।’

কথা হয় রাজগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার মমতাজ খোকনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, মাটি সংগ্রহে নদীতীরের বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে। বিশেষ করে অসচ্ছল পরিবারগুলোর জন্য এটি দারুণ সুযোগ।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘এ ধরনের মাটি পাওয়া গেলে খুবই ভালো একটি খবর। আমরা যত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করতে পারব, ততই আমাদের বনাঞ্চল সংরক্ষিত থাকবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ স র বছর ব যবহ র ধরন র খনন ক

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ