Samakal:
2025-05-01@14:00:38 GMT

‘কসম’ সংগ্রহে হুড়োহুড়ি

Published: 13th, March 2025 GMT

‘কসম’ সংগ্রহে হুড়োহুড়ি

নান্দাইল উপজেলার নরসুন্দা নদী খনন কাজে পাওয়া যায় এক ধরনের কালো মাটি। স্থানীয়দের কাছে যা ‘কসম’ নামে পরিচিত। রান্নাবান্নায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে নদীতীরের বাসিন্দাদের কসম সংগ্রহে হুড়োহুড়ি চলছে।

‘কসম’ এক ধরনের কালো মাটি, যা প্রাচীন কোনো জলাশয়, নদীর তীর বা তলদেশে পাওয়া যায়। সাধারণ মাটি থেকে কসম একটু কালো এবং ওজনে হালকা। এ মাটি রোদে শুকিয়ে সারাবছর রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নান্দাইলের নরসুন্দা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং সারাবছর নৌ চলাচল সুবিধা রক্ষায় নদীটির ২৩ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০ দিন আগে ১৩টি খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে উপজেলার পূর্ব সীমানা চংভাদেড়া গ্রামে নদী খনন শুরু হয়। খননকাজ এগিয়ে কালিগঞ্জ বাজার পার হয়ে শুভখিলা রেল সেতু পর্যন্ত এসেছে। খনন করতে গিয়ে নদীর কাদামাটির নিচে বা পাশে এক ধরনের হালকা কালো মাটি পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সে মাটি সংগ্রহের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছে। কে কার আগে বেশি সংগ্রহ করবে তা নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলছে প্রতিযোগিতা।

গত মঙ্গলবার কালিগঞ্জ বাজারের কাছে এবং শুভখিলা গ্রামে রেল সেতুর নিচে গিয়ে দেখা যায় খনন কাজ চলছে। খনন যন্ত্রের আশপাশে দুই পারের বিভিন্ন বয়সের লোক কোদাল, শাবল নিয়ে যে যেভাবে পারছে কসম সংগ্রহ করছে। তাদের কারও হাতে বস্তা বা কারও হাতে বড় গামলা বা খাদি। সেসব ভরে ভরে মাটি পারে নিয়ে জমা করছে। কেউ কেউ আবার নদীর মাটির নিচে পাওয়া অর্ধপচা প্রকাণ্ড গাছের গুঁড়ি কেটে কেটে লাকড়ি সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত।

কসম সংগ্রহে আসা কয়েকজন জানান, বেশ কয়েক বছর আগে এখানে নদীর তীরে কালো মাটি পাওয়া গিয়েছিল। কৌতূহলবশত সে মাটি শুকিয়ে দেখা যায় ভালো জ্বলে। মাঝখানে আর সে মাটি পাওয়া যায়নি বলে ব্যবহারও করা যায়নি। নদী খনন করতে গিয়ে এখন সে মাটির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক এবং শুভখিলা গ্রামের শামছুল হক জানান, বাপ-দাদার কাছে শুনেছেন, বড় বড় গাছপালা নদীর মাটির নিচে চাপা পড়ে এ ধরনের কালো মাটিতে পরিণত হয়েছে। শুদ্ধ ভাষায় এ মাটিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হলেও স্থানীয়ভাবে নাম দিয়েছেন কসম। রান্নাবান্নায় কসম যে কোনো লাকড়ি বা গ্যাসের চেয়েও বেশি জ্বলে, রান্নাও হয় দ্রুত। দু-একটি টুকরো দিয়েই সব রান্না হয়ে যায়। 

নরেন্দ্রপুরের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কসম’ সাধারণ মাটির মতোই, তবে একটু কালো ও নরম। সংগ্রহের পর টুকরা টুকরা করে ১৫ থেকে ২০ দিন রোদে শুকাতে হয়। এরপর সারাবছর রান্নার জন্য জ্বালানি হিসেবে মজুত রাখা হয়।

কালিগঞ্জ বাজারের কাছের বাসিন্দা দিগেন্দ্র জানান, নদীতীরের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা এ মাটি সংগ্রহ করছেন। তিনিও ঝালমুড়ি বিক্রির ব্যবসা বন্ধ রেখে কয়েক দিন ধরে কসম সংগ্রহ করছেন। যে পরিমাণ কসম সংগ্রহ করেছেন তাতে আগামী ৪ মাস তাঁর জ্বালানি খাতে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। 

রিপা রানী নামে একজন বলেন, ‘স্বামীকে নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে এ মাটি সংগ্রহ করছি। এখন আর শরীরে দিচ্ছে না, না হলে সারাবছরের জ্বালানির সমস্যা মিটে যেত।’

কথা হয় রাজগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার মমতাজ খোকনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, মাটি সংগ্রহে নদীতীরের বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে। বিশেষ করে অসচ্ছল পরিবারগুলোর জন্য এটি দারুণ সুযোগ।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘এ ধরনের মাটি পাওয়া গেলে খুবই ভালো একটি খবর। আমরা যত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করতে পারব, ততই আমাদের বনাঞ্চল সংরক্ষিত থাকবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ স র বছর ব যবহ র ধরন র খনন ক

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে: সলিমুল্লাহ খান

লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষের মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল; ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং মেন্ডেট নিতে হবে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচন যে খুব নিখুঁত হয়েছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষের সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার–যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না গণ্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।

তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ