চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধন করেছে সরকার। ফলে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। সে অনুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ সরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই বরাদ্দের বিস্তারিত বিভাজন হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কাছে সম্প্রতি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে সংশোধিত বরাদ্দের অতিরিক্ত কোনো ব্যয় বিল গ্রহণ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। 
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই আর্থিক সক্ষমতা না থাকার বাস্তবতায় এক লাখ কোটি টাকার বাজেট কাটছাঁট করার আলোচনা ছিল। শেষ পর্যন্ত গত অর্থবছরের মতোই সংশোধিত বাজেটের আকার কমানো হয়। চলতি অর্থবছর মূল বাজেটের চেয়ে সংশোধিত বাজেটের আকার কমেছে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছর মূল বাজেটের আকার কমেছিল মাত্র ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে আনাও হয়েছে। তবে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়টি মাথায় রেখে যৌক্তিক জায়গাগুলোতে বরাদ্দ ব্যয় বাড়ানো না হলেও স্বাভাবিক ব্যয় অব্যাহত রাখা হয়েছে। তা ছাড়া সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ থাকলেও বিগত সরকারের নেওয়া অনিয়ন্ত্রিত ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পরিচালন বাজেটে কাটছাঁটের খুব একটা সুযোগ থাকে না। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যয় বাড়ায় পরিচালন বাজেটে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। 
বাজেটের মূল দুটি অংশ উন্নয়ন এবং অনুন্নয়ন বা পরিচালন বাজেট। সূত্র জানায়, এবার সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁটের প্রায় পুরোটাই কমেছে উন্নয়ন অংশে। যার পরিমাণ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। বাকি ৪ হাজার কোটি টাকা পরিচালন বাজেট থেকে কমেছে। মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। 
এদিকে কাটছাঁটের ভিত্তিতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ সরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পুনর্বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বরাদ্দের বিস্তারিত বিভাজন হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কাছে পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। সংশোধিত বরাদ্দের অনুলিপিটি সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সরকারি অন্যান্য দপ্তরেও পাঠানো হয়। এতে প্রত্যেক খাতের বিপরীতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ হিসেবে উল্লিখিত অর্থের অতিরিক্ত কোনো ব্যয় বিল গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হয়। তবে এ কর্তৃত্ব জারির পর যেসব খাতে অর্থ বিভাগ কর্তৃক অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে সেসব অতিরিক্ত বরাদ্দ এই সংশোধিত কর্তৃত্বের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।

অর্থ বিভাগ চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছে যে প্রকল্প পরিচালকরা নিজেরাই প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারবেন এবং তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছাড় হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে সংশোধিত অননুমোদিত প্রকল্পসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকল্পের অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের জারি করা ২০১৮ সালের নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।
এবার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৪৩৭। প্রতিটি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ নির্ধারণ করা থাকে। সেই বরাদ্দ অনুসারে চার কিস্তিতে অর্থ ছাড় করা হয়। আগে অর্থ বিভাগ ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।  কাজে গতি আনার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল প্রকল্প পরিচালকদের। তবে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হতো। প্রকল্প পরিচালকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ বিভাগ অর্থছাড়ে সংস্থাগুলোকে এখতিয়ার দিয়ে দেয়। এর ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। তবে ঋণ ও অনুদানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার শর্ত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিমালার শর্ত মানতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র র অন ক ল বর দ দ র ত বর দ দ সরক র ন নয়ন

এছাড়াও পড়ুন:

জন্মহার বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ, শিশুদের জন্য মা-বাবা পাবেন ভাতা

তিন বছরের কম বয়সী প্রতিটি শিশুর জন্য মা-বাবাদের বছরে ৩ হাজার ৬০০ ইউয়ান (প্রায় ৫০০ ডলার) করে ভাতা দেবে চীন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৬১ হাজার টাকা। জন্মহার বাড়াতে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত ভাতা দেওয়া হবে।

দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই ভর্তুকি প্রায় দুই কোটি পরিবারকে শিশু লালন-পালনের খরচ সামলাতে সহায়তা করবে।

প্রায় এক দশক আগে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির বিতর্কিত এক সন্তান নীতি বাতিল করে। তবে এরপরও চীনের জন্মহার কমেই যাচ্ছে।

চীনের একাধিক প্রদেশ ইতিমধ্যেই জনগণকে আরও বেশি সন্তান নিতে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অর্থ সহায়তার পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। কারণ, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি এখন জনসংখ্যাগত দিক থেকে গুরুতর সংকটের মধ্যে আছে।

গত সোমবার চীন সরকার ঘোষিত নতুন কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি শিশুর জন্য অভিভাবকদের সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮০০ ইউয়ান পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্বের ব্যয়বহুল দেশগুলোর একটি। চীনে একটি শিশুকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত লালন–পালন করতে গড়ে ৭৫ হাজার ৭০০ ডলার খরচ হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৩ লাখ টাকা।

চীনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এই নতুন নীতিটি চলতি বছরের শুরু থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে। এর মানে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যেসব পরিবারে সন্তান জন্মেছে, তারাও আংশিক ভর্তুকির জন্য আবেদন করতে পারবে।

চীনে জন্মহার বাড়াতে এর আগে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল।
চীনের উত্তরাঞ্চলীয় হোহহত শহরের কর্তৃপক্ষ গত মার্চে ঘোষণা দেয়, অন্তত তিনটি সন্তান থাকা দম্পতিরা প্রতি সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ ইউয়ান পর্যন্ত অর্থসহায়তা পাবেন।

বেইজিংয়ের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শেনইয়াং শহরের কর্তৃপক্ষ যেসব দম্পতির তিন বছরের কম বয়সী তৃতীয় সন্তান আছে, তাদের প্রতি মাসে ৫০০ ইউয়ান করে দিচ্ছে।

গত সপ্তাহে স্থানীয় প্রশাসনগুলোকে বিনা মূল্যে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে চীন সরকার।

চীনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এই নতুন নীতিটি চলতি বছরের শুরু থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে। এর মানে ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যেসব পরিবারে সন্তান জন্মেছে, তারাও আংশিক ভর্তুকির জন্য আবেদন করতে পারবে।

চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্বের ব্যয়বহুল দেশগুলোর একটি। চীনে একটি শিশুকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত লালনপালন করতে গড়ে ৭৫ হাজার ৭০০ ডলার খরচ হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৩ লাখ টাকা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে চীনের জনসংখ্যা টানা তৃতীয় বছরের মতো কমেছে।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে ৯৫ লাখ ৪০ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। এটি আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও মোট জনসংখ্যা কমতির দিকেই আছে।

বর্তমানে চীনের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠী দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে, যা বেইজিংয়ের জন্য জনসংখ্যাগত উদ্বেগ তৈরি করছে।

আরও পড়ুনসন্তান লালন-পালনে অনীহা বাবাদের, ৬০ বছরে প্রথম কমল চীনে জনসংখ্যা১৭ জানুয়ারি ২০২৩আরও পড়ুনজনসংখ্যা কমে যাওয়া চীনের জন্য কতটা বিপদের২১ জানুয়ারি ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে
  • নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, বেসরকারি খাতের জন্য সুখবর নেই
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
  • নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • জন্মহার বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ, শিশুদের জন্য মা-বাবা পাবেন ভাতা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন