Samakal:
2025-11-03@09:01:23 GMT

চাঁদে মানুষের নতুন প্রতিনিধি

Published: 13th, March 2025 GMT

চাঁদে মানুষের নতুন প্রতিনিধি

এ বছরের ২ মার্চ সফল হলো মানুষের আরও একটি চন্দ্রাভিযান। ফায়াফ্লাই অ্যারোস্পেসের ‘ব্লু গোস্ট’ চন্দ্রযান যখন পা রেখেছে চাঁদের মাটিতে, বাংলাদেশ সময় তখন বেলা ১টা বেজে ৩৪। পূর্বাঞ্চলীয় মান সময় ভোর ৩টা ৩৪। ব্লু গোস্ট, বাংলায় ‘নীল অশরীরী’র বিনয়ী অবতরণ ঘটে চাঁদের লাভানির্মিত মাটির অংশে। চাঁদের নিঃসঙ্গ আগ্নেয়গিরি বিখ্যাত মন্স লাতরেইলে থেকে বেশি দূরে নয়। বহু যুগ আগে লাতরেইলের অগ্ন্যুৎপাতই ওই অববাহিকা তৈরি করে থাকতে পারে। জায়গাটা চাঁদের কেন্দ্রীয় মারে ক্রিসিয়ামের অন্তর্ভুক্ত। মারে ক্রিসিয়াম প্রায় তিনশ মাইল পরিধির এক সুবিস্তৃত অববাহিকা। নানা দিক থেকে এ মিশন গুরুত্বপূর্ণ। ‘নীল অশরীরী’র এই সফল অবতরণের ফলে পৃথিবীর সাধারণ মানুষ চাঁদের আরও কাছে পৌঁছে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। এ অভিযান নিকট ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের আভাস। 
আইজাক আসিমভের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে আমরা পড়েছি, কোনো এক গ্রহের কৃষকের ছেলে দূরগ্রহে ভাগ্যের অন্বেষণে যেতে চেপে বসেছে মহাকাশযানের ইকোনমি ক্লাসে। ভবিষ্যৎ বাস্তবতার এমন রূপরেখাই যেন নিরূপণ করতে চাইল ‘ব্লু গোস্ট’। যে দুটো সম্মিলিত প্রকল্পের আওতায় এ অভিযান, সেগুলো হলো নাসার কমার্শিয়াল লুনার পে লোড সার্ভিস ও আর্টেমিস মিশন। নাসার কমার্শিয়াল লুনার পে লোড সার্ভিসকে বাংলায় বলা যেতে পারে বাণিজ্যিক চন্দ্র পরিবহন পরিষেবা। ওদিকে আর্টেমিস মিশন নিয়ে তো জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ভবিষ্যতে পৃথিবীর নানান দেশের অংশগ্রহণমূলক চন্দ্রাভিযান সম্পন্ন হবে এই আর্টেমিস মিশনের আওতায়। চাঁদে যাবে মানুষ, যাবে পণ্য, নিয়মিত। ধারণা করা হচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতেই চাঁদে একজন নারী ও একজন অশ্বেতাঙ্গ যাবেন এই আর্টেমিস মিশনের আওতায়। 
এসব দিক বিচারে ‘নীল অশরীরী’ এই অভিযান নিছক কোনো অনুসন্ধান প্রকল্প নয়। সম্ভবত এটি ‘অ্যানাদার জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড’। স্মরণ করা যাক, ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদে পা রাখা নিল আর্মস্ট্রংয়ের উক্তি, “দ্যাট’স ওয়ান স্টেপ ফর আ ম্যান, ওয়ান্ট জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড।” চাঁদে আর্মস্ট্রংয়ের এক পা ফেলা ছিল মানবজাতির জন্য অকল্পনীয় দূরত্ব অতিক্রমের সমতুল্য। এটিও তদ্রূপ।
নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জ্যানেট পেট্রো উচ্ছ্বসিত হয়ে বেশ উচ্চাভিলাষী মন্তব্যই করলেন। ‘এই অবিশ্বাস্য অর্জন কিন্তু একটি বিশেষ দিক আমাদের সামনে উন্মোচন করছে। যা অনস্বীকার্য তা হলো, নাসা ও মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের সবার হয়ে, প্রত্যেকের কল্যাণে মানুষের মহাকাশযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরই মাঝে নতুন অনেক কিছুই জেনেছি আমরা। আমাদের প্রযুক্তির এই পরাকাষ্ঠা, ফায়ারফ্লাই ব্লু গোস্ট মিশন ১ শুধু মানুষের বৈজ্ঞানিক সঞ্চয়ই বাড়াবে না; ভবিষ্যতে চাঁদসহ মহাকাশে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের সব ব্যবহারিক বাধা, আওতা, শক্তি-সাধ্য, সীমাবদ্ধতা, পথরেখাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ও নির্ণয় করা সম্ভব হবে। নিকট ও দূর ভবিষ্যতে মানুষের মহাকাশ অভিযানে যেসব তথ্য ভীষণ কাজে আসবে আমাদের।’
ব্লু গোস্ট বা নীল অশরীরী দশটি যন্ত্রকে পরিচালিত করবে চাঁদের বুকে ও প্রয়োজনে বায়ুমণ্ডলে। গোটা এক চান্দ্রদিবস চলবে এ অভিযান। এক চান্দ্রদিবস পৃথিবীতে ১৪ দিন। 
চাঁদের পথে দীর্ঘ এ যাত্রা শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি। ২ মার্চ চাঁদের বুকে নামার আগ পর্যন্ত এ মহাকাশ প্রকল্প অতিক্রম করেছে অকল্পনীয় দূরত্ব, ২৮০ লাখ মাইল। পৃথিবীতে ২৭ গিগাবাইট ডেটা ডাউনলিংক করে কাজ পরিচালনা জলবৎ তরলৎ, কিন্তু মহাকাশে এর জন্য জটিল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ যান্ত্রিক সামর্থ্য প্রয়োজন। সেই সামর্থ্যেরও প্রমাণ দিয়েছে ফায়ারফ্লাইয়ের এই মহাকাশযান অভিযান। মহাকাশযানের পথপরিক্রমায় জিএনএসএস সুবিধা ব্যবহার করতে হয়। জিএনএসএসের পূর্ণরূপ– গ্লোবাল নেভিগেশিন স্যাটেলাইন সিস্টেম। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে পরিচালিত এ সেবা কাজে লাগিয়ে মহাকাশযান তার অবস্থান, আনুমানিক ও আনুপাতিক সময়, পথরেখা জেনে নিতে পারে। অনেকটা যেভাবে জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীতে মানুষ যে কোনো মুহূর্তে তার অবস্থান, গতিপথ, গন্তব্যে পৌঁছানোর আনুমানিক সময় এসব জেনে নিতে পারছে। বলা যেতে পারে সব জিএনএসএস এক ধরনের জিপিএস। কিন্তু সব জিপিএস জিএনএসএস নয়। ব্লু গোস্ট মিশন দুই লাখ ছেচল্লিশ হাজার মাইল দূর থেকে জিএনএসএসের মাধ্যমে তার অবস্থান, সময়সহ আনুষঙ্গিক তথ্য নির্ণয় করতে পেরেছে। এবং এটিও একটি বিশ্বরেকর্ড। জিএনএসএস সংকেত গ্রহণের এখন পর্যন্ত এটাই সর্বাধিক দূরত্ব।
এ অভিযান বেশ কিছু সম্ভাবনা নিরূপণ করতে যাচ্ছে। চাঁদে কোনো ধরনের ভবিষ্যৎ মানববসতি অথবা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের যা কিছু প্রয়োজন, সেসব স্থাপনে চাঁদ কতটা উপযুক্ত? চাঁদের মাটির দ্বিতীয় স্তরে চলবে খননকাজ। আমরা সেখানকার ভূপ্রকৃতি, মাটির গঠন, সহনশীলতা সম্পর্কে জানব ক্রমশ। জানতে পারব চাঁদের বিভিন্ন রকম খনিজ শিলা, সেসবের স্তরবিন্যাস সম্পর্কে। খতিয়ে দেখা হবে পৃথিবীর মতো চাঁদকেও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) ব্যবস্থার আওতায় আনা কতটা সম্ভব। মানুষের অনুকূল পরিবেশ তৈরির স্বার্থে আরও দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তলিয়ে দেখা হবে। এক.

তেজস্ক্রিয়া নিরূপণ। সেখানে ক্ষতিকর তেজষ্ক্রিয়া বিকিরণ কোন মাত্রায় রয়েছে, তাকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা যাচাই করা হবে। দুই. চাঁদে বিচরণের অন্যতম প্রতিবন্ধক ধুলা কতখানি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব তা-ও যাচাই করে দেখা হবে। চাঁদে পৃথিবীর মতো পানি নেই। সুতরাং ধুলার বাধা অনুমান করা যায়।  
মানুষ কল্পনাপ্রবণ, স্বপ্নবাজ বলেই মহাকাশ পাড়ি দেওয়ার স্পর্ধা রাখে। নিকি ফক্সের কথা শোনা যাক। তিনি নাসার ওয়াশিংটন দপ্তরের সহযোগী প্রশাসক। বললেন, ‘মানুষ ভবিষ্যতে এই মহাভুবনের আরও বহু অংশ যেন জয় করতে পারে, সেই উৎসাহ ও স্বপ্নের পথ নির্মাণ করছে নাসা। চাঁদে এই প্রাযুক্তিক সাফল্য আমাদের সেই পথনির্মাণেরই অংশ।’ একটি নতুন শব্দের অবতারণা ঘটতে যাচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে। লুনার ইকোনমি। চান্দ্র অর্থনীতি। সেই আভাস মিলল নিকি ফক্সের কথায়– ‘চাঁদভিত্তিক অর্থনীতিরও ভিত তৈরি হচ্ছে। এর জন্য নাসা কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে পাশে পেয়েছে। আসছে দিনের এই অর্থনীতি দৃঢ় ভিতের পর দাঁড়িয়ে যেতে পারে।’ v

নাসার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত টিয়েরনান ডি ডয়েলের নিবন্ধ
অনুসরণে হামিম কামাল

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র আওত য় জ প এস আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিসি ব্যাংকের পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত

বেসরকারি খাতের এনসিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৫৪৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে পর্ষদ সভাটি হয়।

এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নূরুন নেওয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, পরিচালক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী, পরিচালক ও প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তানজিনা আলী, পরিচালক সৈয়দ আসিফ নিজাম উদ্দিন, পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চাকলাদার, পরিচালক মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ, শামিমা নেওয়াজ, মোরশেদুল আলম চাকলাদার, নাহিদ বানু, স্বতন্ত্র পরিচালক মীর সাজেদ উল বাসার এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম শামসুল আরেফিন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম খোরশেদ আলম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির আনাম, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মো. মনিরুল আলম (কোম্পানি সচিব) ও মো. হাবিবুর রহমান এবং বোর্ড ডিভিশনের এসএভিপি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এনসিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, সভায় ব্যাংকের চলমান ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও কৌশলগত পরিকল্পনা–সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটি মুনাফা করেছে ১৭৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা কমেছে ১০২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটি মুনাফা করে ৫৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফা ২০১ কোটি টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ