আগামী বছরই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ
Published: 13th, March 2025 GMT
বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের নির্ধারিত সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার ভাবনা থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী আগামী বছরই উত্তরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি জানান, উত্তরণের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে, তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এতে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বাড়বে।
উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার দিন নির্ধারিত ছিল ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর। বিষয়টি আরও পিছিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টার নতুন বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) আনিসুজ্জামান চৌধুরী এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরণের আবেদন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। ২০১০ সাল থেকে বৈদেশিক নির্ভরতা বেড়ে গেছে। কমে গেছে অভ্যন্তরীণ আয়ের উৎস। ৭ শতাংশের নিচে নেমে গেছে কর-জিডিপির হার। যদি আরও ঋণ নিতে হয়, চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।
তিনি আরও জানান, অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। পুনর্বিবেচনার পর উত্তরণ পিছিয়ে দিতে জাতিসংঘে আবেদন করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়বে রপ্তানি খাত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পায় বাংলাদেশ। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপির আওতায় এই শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত।
বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ওষুধ শিল্প। আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্বের জন্য অর্থ দেয় না বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো।
২০৩৩ সালের আগে কোনো দেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে এই সুবিধা পাবে না।
উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ওপর নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি দিতে পারে বাংলাদেশ। পরে রপ্তানি আয় বা রেমিট্যান্স আনায় নগদ সহায়তা নিয়ে আপত্তি উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহজ শর্তের ঋণ নেওয়ার সুযোগ সীমিত হতে পারে। জাতিসংঘে চাঁদার পরিমাণ বাড়বে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নত দেশ থেকে শিক্ষার্থী বৃত্তি কমবে।
তবে উত্তরণ হলে দেশের মর্যাদা বাড়ে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারী আস্থা রাখেন। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বেশি সুদে অনেক ঋণ নেওয়া যায়। সমৃদ্ধি বিবেচনা করা হয় দেশটি কোন শ্রেণিতে আছে, এর ওপর।
অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ প্রতিবেদনে ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের পক্ষে সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও উত্তরণের পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক। যেসব সূচকের ওপর ভিত্তি করে উত্তরণ হয়, তা বেশ সুসংহত। কিন্তু অর্থনীতির কিছু সূচক ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে, সেগুলো উত্তরণ সূচকের সঙ্গে কম সম্পৃক্ত।
মডেল মসজিদ প্রকল্পে দুর্নীতি
প্রেস সচিব বলেন, ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। এতে প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে।
প্রেস সচিব বলেন, ‘এই মসজিদের অনেক অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। দেখা গেছে, আট কিলোমিটার দূরে একটা রিসোর্ট করছেন, সেখানে মডেল মসজিদ করেছেন মন্ত্রী। একটা মসজিদের ব্যয় ১৭ কোটি টাকা। দুর্নীতি না হলে অর্ধেক খরচে করা যেত। আরেকটি বিষয় শোনা যেত যে সৌদি আরবের অর্থায়নে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। আসলে পুরোটা জনগণের টাকা।’
বিএসএমএমইউর নাম বিএমইউ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ (বিএমইউ) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর খসড়া অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৈঠকে খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ দুটির নাম হচ্ছে খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
এক দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস
প্রতিবছর ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস উদযাপন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্তে প্রতিবছর ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন করা হয়। উভয় দিবসে গৃহীত কার্যক্রম প্রায় সমধর্মী। ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে উপদেষ্টা পরিষদ একসঙ্গে দিবস দুটি ১২ আগস্ট উদযাপন অনুমোদন করেছে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইউনেস্কোর মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে নৌকা, জামদানি শাড়ি এবং টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করার উদ্যোগ নেবে।
শূন্য পদে নিয়োগে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান প্রেস সচিব। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সরকারি দপ্তরে দ্রুত জনবল নিয়োগের কথা বলেছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আগামী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জানাবেন কী সংখ্যক নিয়োগ হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মন ত র মসজ দ এলড স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মাতারবাড়ি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার ট্যারিফ অনুমোদন
বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮.৪৪৭৫ টাকা। এ কেন্দ্র থেকে ৩০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনতে মোট ব্যয় হবে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৫৮৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
মাতারবাড়ি ৬০০¬X২ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদুৎকেন্দ্র ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো)। বাবিউবোর বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনার জন্য সিপিজিসিবিএল ও বাবিউবোর মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদে স্বাক্ষরিতব্য পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ট্যারিফ স্ট্রাকচার ও লেভেলাইজড ট্যারিফ কিলোওয়াট ঘণ্টা ৮.৪৪৭৫ টাকায় কেনার চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনা হলে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার ২৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা হিসাবে ৩০ বছর মেয়াদে সিপিজিসিবিএল-কে আনুমানিক ২ লাখ ১৭ হাজার ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমান ট্যারিফ কিলোওয়াট ঘণ্টা ৮.৪৪৭৫ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে চূড়ান্ত ব্যয় হিসাব করে পুনরায় ট্যারিফ নির্ধারণ করা হবে।
সিপিজিসিবিএল সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে যে পরিমাণ লাভ হবে, তা সরকারের লাভ হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রথম সংশোধিত ডিপিপি একনেকে অনুমোদিত হয় ২০২১ সালের ২৩ নভম্বর। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন, তোশিবা কর্পোরেশন ও আইএইচআই কর্পোরেশন।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক