বাকি রোজায় নিত্যপণ্যের দাম যেমন থাকতে পারে
Published: 14th, March 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাসের প্রায় অর্ধেক পার হয়েছে। বাজারে রোজার পণ্যের মধ্যে ছোলা, আলু, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। রোজার শুরু থেকেই এসব পণ্যের দাম ছিল কমতির দিকে। তবে বাজারে এখনো নির্ধারিত মূল্যের বাড়তি দামেই সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।
আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ছোলা, ডাল, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। সবজির বাজারে সরবরাহ যেমন বেশি, দামও তুলনামূলক কম। পাইকারিতে বেচাবিক্রি কমলেও খুচরা বাজারে ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে।
চট্টগ্রাম নগরের প্রধান বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, পাহাড়তলী ও রিয়াজউদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজার, কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, কাজির দেউড়ি ও কর্ণফুলী মার্কেট। এসব বাজারের ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাকি রোজার দিনগুলোতেও নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। তবে তা নির্ভর করবে সরবরাহ ও চাহিদার ওপর।
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে বাজারে দাম বাড়ে না সচরাচর। এখন বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ ভালো। এ বছর রোজায় শুরু থেকে দাম স্বাভাবিক ছিল, বাকি রোজাতেও স্থিতিশীল থাকবে।
ছোলার দাম স্থিতিশীলএ বছর রমজানের আগে থেকেই ছোলার দাম কম ছিল। চাহিদার তুলনায় ছোলাও আমদানি হয়েছে বেশি। রোজার শুরুতে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় এক সপ্তাহ আগে গড়ে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে। তবে এ সপ্তাহে দাম আবার ১১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে।
ডালের বাজারে ছোলার পাশাপাশি মসুর ও মটর ডালের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানি করা মসুর ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে এবং মোটা মসুর ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মটর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। রোজার শুরুতে একই দামে বিক্রি হয়েছে এসব পণ্য।
এদিকে খুচরা ও পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের তুলনায় এখন দেশি পেঁয়াজের আধিক্য। খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। খুচরা বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫৫ টাকার আশপাশে।
সয়াবিনের সরবরাহ বাড়ছেগত চার মাসে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট বাজারে। গুটিকয়েক দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও দাম চাওয়া হয়েছে প্রতি লিটার ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। তবে সারা দেশে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের নির্ধারিত দাম ১৭৫ টাকা। রোজার শুরু থেকে এ নিয়ে তৎপর সরকারি সংস্থাগুলো। এ অবস্থায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে সরবরাহ।
চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে এক সপ্তাহ আগেও বোতলজাত সয়াবিনের দাম ২০০ টাকার আশপাশে ছিল। বর্তমানে তা ১৮৫ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে তাই দাম কমেছে। খোলা সয়াবিনের দামও ১৬৫ টাকার আশপাশে নেমে এসেছে। যদিও নির্ধারিত দাম ১৫৭ টাকা প্রতি লিটার।
বাজারে সয়াবিনের সরবরাহে ঘাটতি নেই বলে মনে করছে সরকারি সংস্থাগুলো। তাঁদের মতে, এ সংকট কৃত্রিম। অবশ্য সম্প্রতি বিভিন্ন গুদাম ও দোকানে সয়াবিনের বিপুল মজুতও পেয়েছেন তাঁরা। সবশেষ নগরের খতিবের হাট এলাকায় এক দোকান থেকে ৬ হাজার ৭০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন উদ্ধার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সবজির বাজারে স্বস্তি ক্রেতাদেররমজানে প্রতি বছর সবজির বাজার নিয়েও চিন্তিত থাকেন ক্রেতারা। অবশ্য এ বছর শুরু থেকে সবজির বাজার কমতির দিকে। রোজার দুই দিন আগে বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা দরে। অন্যদিকে ক্ষীরা ৩০ থেকে ৪০, টমেটো ২০ থেকে ৩০, কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৬০ ও আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এখন বেশির ভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে। ফলে ক্রেতারাও স্বস্তিতে কিনতে পারছেন।
সবজিতে স্বস্তি হলেও এখনো আগের দামেই কিনতে হচ্ছে মুরগি। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮৫ ও সোনালি ৩০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ এবং শুধু মাংস ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সবজ র ব জ র ট ক র আশপ শ র সরবর হ আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’