ব্যাংক লুটকারী-অর্থ পাচারকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তে বিশেষ অর্থনৈতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি
Published: 14th, March 2025 GMT
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে দেশের সাধারণ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করার দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। একই সঙ্গে ব্যাংক লুটকারী ও অর্থ পাচারকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত জনসমাবেশে এই দাবি জানানো হয়।
জনসমাবেশে আরও কয়েকটি দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের স্বৈরতান্ত্রিক আইনের সংস্কার, কৃষিপণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ, ধর্ষণ ও মব-সন্ত্রাস বন্ধ, সংবিধান সংস্কার সভা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই সঙ্গে করা।
জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তাঁরা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই টাকা ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। এই অর্থ ফিরিয়ে এনে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তের তীব্র সমালোচনা করেন হাসনাত কাইয়ূম। তিনি বলেন, দল নিবন্ধিত হতে হলে কমপক্ষে ২১ জেলা ও ১০০ উপজেলায় কমিটিসহ দপ্তর থাকার বিধানটি লুটেরাদের জন্য। এর ফলে সাধারণ মানুষ দল গঠনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে না। তাঁরা আইনটি বাতিল বা সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন।
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, দেশে সব পণ্যের দাম উৎপাদনকারী নির্ধারণ করতে পারলেও কৃষকেরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে না। ফলে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। আর কৃষকেরা না খেয়ে মরেন। সে জন্য কৃষকদের ফসলের দাম নির্ধারণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া বেগম। বক্তব্য দেন সংগঠনটির অর্থ সম্পাদক দিদারুল ভূঁইয়া, গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাসিব উদ্দিন হোসেন, প্রধান সমন্বয়ক মাশকুর রাতুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের শ্রমিক আন্দোলনের সমন্বয়ক মিন্টু মিয়া।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনসম ব শ সমন বয়ক গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিনিধিত্ব করার ‘প্রতীকহীন’ সুযোগ
দশ বছর ধরে চালু থাকা দলীয় প্রতীক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ফিরছে নির্দলীয়তা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন—স্থানীয় নির্বাচনে এবার থেকে ভোটাররাই প্রার্থী বেছে নেবেন দল নয়, প্রার্থীর যোগ্যতা, পরিচিতি ও কাজ দেখে। দলীয় প্রতীকহীন প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থায় ফেরায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
গত ২৪ জুলাই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীক ব্যবহার করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের নিয়ম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
ওই দিন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে থাকছে না দলীয় প্রতীক। ২৪ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উত্থাপিত সংশোধনী সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়।”
সংশোধিত চারটি আইন ও সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো হলো—
সিটি করপোরেশন আইন ২০১৫: ৩২ (ক) ধারা, পৌরসভা আইন ২০১৫: ৩০ (ক) ধারা, উপজেলা পরিষদ আইন ২০১৫: ১৬ (ক) ধারা, ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০১৫: ১৯ (ক) ধারা।
২০১৫ সালের এই ধারাগুলোর ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক ছিল। সেই বাধ্যবাধকতাই এবার তুলে দিচ্ছে সরকার।
উপদেষ্টা বলেন, “দলীয় প্রতীক পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিগত সময়ে হানাহানি, সহিংসতা, মনোনয়ন বাণিজ্য—সবই আমরা দেখেছি। এখন থেকে প্রার্থীরা নিজের প্রতীক নিয়ে দাঁড়াতে পারবেন, আর যোগ্যতাই হবে নির্বাচনের মাপকাঠি।”
২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চালু করে। যুক্তি ছিল রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও দলীয় জবাবদিহি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়
প্রার্থী নির্বাচনে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ। স্থানীয় রাজনীতিতে পেশিশক্তির আধিপত্য। দেখা দেয় মনোনয়ন বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বহুদিন ধরেই স্থানীয় সরকারে নির্দলীয় নির্বাচনের পক্ষে ছিল।
সুজন সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “দলীয় প্রতীক চালুর পর জনগণের ভোটাধিকার সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। জনগণের প্রতিনিধি নয়, দলের প্রতিনিধি জয়ী হতেন। সেই কাঠামো ভাঙার এই উদ্যোগ সাহসী ও সময়োপযোগী।”
তিনি আরো বলেন, “এখন যোগ্যতা, পরিচিতি, জনগণের সঙ্গে সম্পর্কই হবে প্রার্থীর সাফল্যের ভিত্তি।”
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “দলীয় পরিচয়কে অনেকে ব্যবহার করেছেন স্রেফ জেতার মাধ্যম হিসেবে। এতে যোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়ন না পেয়ে বাদ পড়েছেন, আবার অযোগ্যরাও জিতেছেন। এই সংস্কার মূলত রাজনীতিকে সেবা কেন্দ্রিক করতে সহায়ক হবে।”
তিনি আরো বলেন, “এটি কোনো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের যৌথ সুপারিশে, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির ৩১ দফা রোডম্যাপেও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দলীয় প্রতীকের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো রাজনৈতিক সহিংসতায় রূপ নেয়, স্থানীয় নেতৃত্বের জায়গায় জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটে। দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির দাবির প্রতিফলন।”
ঢাকার দোহার উপজেলার মুদি দোকানি আমির হোসেন বলেন, “আগে এলাকার ভালো প্রার্থী থাকলেও দল না থাকলে ভোট দেওয়া যেত না। এখন নিজের বিবেক দিয়ে ভোট দিতে পারব এটাই সবচেয়ে বড় স্বস্তি।”
চট্টগ্রামে পটিয়ার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, “গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দাঁড়াতে পারিনি। এবার নিজের প্রতীক নিয়ে দাঁড়াতে পারব। এটা আমার মতো মানুষের জন্য বিশাল সুযোগ।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকারের প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করবে। আগে জনপ্রতিনিধিরা দলীয় নেতার কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন, এখন জনগণের কাছে থাকবেন। নেতৃত্বে সত্যিকারের প্রতিযোগিতা ফেরানোর উদ্যোগ হবে।”
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বলেন,“দলীয় প্রতীকের পরিবর্তে নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন মানে, মানুষের ভোটাধিকার ও বিশ্বাস ফেরানোর সুযোগ। আগে মানুষ ভাবতো ভোট আগেই ঠিক হয়ে গেছে, এখন ভাববে আমি ঠিক করব কে জয়ী হবে।”
ঢাকা/এএএম/ইভা