Samakal:
2025-05-01@09:53:59 GMT

সেতুতে ওঠানামায় ভরসা মই

Published: 14th, March 2025 GMT

সেতুতে ওঠানামায় ভরসা মই

সেতু নির্মাণ হয়েছে বছরখানেক হলো, ব্যয় ৬ কোটি টাকার মতো। সেই সেতুতে নিয়ম করে কারও পা পড়েনি। কেননা সেতুতে যাওয়ার সড়ক নেই। আবার উঠতে গেলে বইতে হয় মই। শুধু তাই নয়, সেতুর দুই পাশে ৯ গ্রামের মধ্যে নেই কোনো পাকা সড়ক। তার পরও নির্মিত হয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার এই সেতু।
সেতুটির ৭০০ মিটার দক্ষিণে রয়েছে আরেকটি সেতু। এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সড়ক না থাকার পরও এই সেতু নির্মাণকে সরকারি টাকার অপচয় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার দড়িমাছিমপুর-কলাকান্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিকল্প সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলাকান্দি ইউনিয়নের দড়িমাছিমপুর ও কলাকান্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি পায় জয়েন্ট ভেঞ্চারে পিসি ও এমআইআইআর এবং এমএসটি নামক তিনটি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর। সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্তির নির্ধারিত সময় ছিল ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, দড়িমাছিমপুর ও কলাকান্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুর পূর্ব-পশ্চিম পাশে দুটি বাঁশের মই দেওয়া রয়েছে। পশ্চিম পাশে ১০-১৪ ফুট উচ্চতায় ও পূর্ব পাশে ১৫ থেকে ২০ ফুটের মতো উচ্চতায় দেওয়া রয়েছে বাঁশের মই। এলাকার মানুষ মই দিয়ে ও সেতুর নিচ দিয়ে পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করছেন।
দড়িমাছিমপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মই দিয়ে সেতু পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আমার পা ভেঙে গিয়েছিল। দুই মাস বিছানায় ছিলাম, অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় হলেও সেতুর কাজ শেষ হয়েছে; কিন্তু বিকল্প সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় কেউ যাতায়াত করতে পারছে না। আমাদের গ্রামে কোনো পাকা সড়ক নেই। আমাদের পাশের গ্রামের পূর্ব পাশে চার গ্রামেও নেই কোনো পাকা সড়ক। তার পরও এত টাকা ব্যয়ে এই সেতু কেন নির্মাণ হয়েছে আমরা বুঝতে পারি না।’
ইসমাইল মিয়া জানান, এই সেতু নির্মাণে কষ্ট বেড়েছে। কারণ সেতুতে উঠতে হয় মই দিয়ে। মই বেয়ে উঠতে পারেন না তিনি, তাই অনেক ঘুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে হচ্ছে। 
কলাকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, সেতুর আশপাশের গ্রামে নেই কোনো পাকা সড়ক। তার পরও সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, বোধগম্য নয় তাঁর। রাস্তা ছাড়া সেতু নির্মাণ করা সরকারি টাকা অপচয় আর কী।
কলাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম সরকার বলেন, ৬ কোটি টাকার এই অতি উঁচু সেতু জনগণের কোনো কাজে আসবে না যদি প্রয়োজনীয় মাটি ভরাট করে সড়কের উচ্চতা বৃদ্ধি ও পাকাকরণ করা হয়। আর সড়ক না হলে এটি প্রদর্শনী বস্তু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। 
উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, দুই পাশে বিকল্প সড়কের নির্মাণকাজ দ্রুতই শুরু হবে। সংযোগ সড়কের দুই পাশে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন পেলে কাজটি শুরু করা হবে। দুই পাশে সড়ক নেই এটা সত্য, আগে সেতু নির্মাণ হোক তার পরে এসব কাঁচা সড়ক পাকা করানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কল ক ন দ এই স ত ত র পর র পরও সড়ক ন

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ