Samakal:
2025-08-01@21:59:09 GMT

সেতুতে ওঠানামায় ভরসা মই

Published: 14th, March 2025 GMT

সেতুতে ওঠানামায় ভরসা মই

সেতু নির্মাণ হয়েছে বছরখানেক হলো, ব্যয় ৬ কোটি টাকার মতো। সেই সেতুতে নিয়ম করে কারও পা পড়েনি। কেননা সেতুতে যাওয়ার সড়ক নেই। আবার উঠতে গেলে বইতে হয় মই। শুধু তাই নয়, সেতুর দুই পাশে ৯ গ্রামের মধ্যে নেই কোনো পাকা সড়ক। তার পরও নির্মিত হয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার এই সেতু।
সেতুটির ৭০০ মিটার দক্ষিণে রয়েছে আরেকটি সেতু। এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সড়ক না থাকার পরও এই সেতু নির্মাণকে সরকারি টাকার অপচয় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার দড়িমাছিমপুর-কলাকান্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিকল্প সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলাকান্দি ইউনিয়নের দড়িমাছিমপুর ও কলাকান্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি পায় জয়েন্ট ভেঞ্চারে পিসি ও এমআইআইআর এবং এমএসটি নামক তিনটি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর। সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্তির নির্ধারিত সময় ছিল ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, দড়িমাছিমপুর ও কলাকান্দি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুর পূর্ব-পশ্চিম পাশে দুটি বাঁশের মই দেওয়া রয়েছে। পশ্চিম পাশে ১০-১৪ ফুট উচ্চতায় ও পূর্ব পাশে ১৫ থেকে ২০ ফুটের মতো উচ্চতায় দেওয়া রয়েছে বাঁশের মই। এলাকার মানুষ মই দিয়ে ও সেতুর নিচ দিয়ে পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করছেন।
দড়িমাছিমপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মই দিয়ে সেতু পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আমার পা ভেঙে গিয়েছিল। দুই মাস বিছানায় ছিলাম, অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় হলেও সেতুর কাজ শেষ হয়েছে; কিন্তু বিকল্প সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় কেউ যাতায়াত করতে পারছে না। আমাদের গ্রামে কোনো পাকা সড়ক নেই। আমাদের পাশের গ্রামের পূর্ব পাশে চার গ্রামেও নেই কোনো পাকা সড়ক। তার পরও এত টাকা ব্যয়ে এই সেতু কেন নির্মাণ হয়েছে আমরা বুঝতে পারি না।’
ইসমাইল মিয়া জানান, এই সেতু নির্মাণে কষ্ট বেড়েছে। কারণ সেতুতে উঠতে হয় মই দিয়ে। মই বেয়ে উঠতে পারেন না তিনি, তাই অনেক ঘুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে হচ্ছে। 
কলাকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, সেতুর আশপাশের গ্রামে নেই কোনো পাকা সড়ক। তার পরও সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, বোধগম্য নয় তাঁর। রাস্তা ছাড়া সেতু নির্মাণ করা সরকারি টাকা অপচয় আর কী।
কলাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম সরকার বলেন, ৬ কোটি টাকার এই অতি উঁচু সেতু জনগণের কোনো কাজে আসবে না যদি প্রয়োজনীয় মাটি ভরাট করে সড়কের উচ্চতা বৃদ্ধি ও পাকাকরণ করা হয়। আর সড়ক না হলে এটি প্রদর্শনী বস্তু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। 
উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, দুই পাশে বিকল্প সড়কের নির্মাণকাজ দ্রুতই শুরু হবে। সংযোগ সড়কের দুই পাশে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন পেলে কাজটি শুরু করা হবে। দুই পাশে সড়ক নেই এটা সত্য, আগে সেতু নির্মাণ হোক তার পরে এসব কাঁচা সড়ক পাকা করানোর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কল ক ন দ এই স ত ত র পর র পরও সড়ক ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ