পণ্যের সংকট কিংবা বাড়তি দাম যাই ঘটুক, ভোক্তা অধিদপ্তরের দৌড় ঘুরেফিরে খুচরা বাজারে। জরিমানা করা হয় এদের। কিন্তু উৎপাদন বা কোম্পানি পর্যায়ে সংস্থার ভূমিকা অনেকটা দায়সারা। ভোজ্যতেলের বাজারে কারসাজি হলেও সম্প্রতি কোনো কোম্পানিকে শাস্তির কথা জানাতে পারেনি সংস্থাটি।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্যের কৃত্রিম সংকট, সরবরাহ কমার দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানো, মানহীন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রিসহ নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ভোক্তা। দিন দিন বাড়ছে অভিযোগ। বিদ্যমান আইনে ই-কমার্স, ব্যাংক, বীমা ও স্বাস্থ্যসেবা, টেলিকম, বাড়িভাড়াসহ অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত নেই। এসব খাতে প্রতারিত হলেও প্রতিকার চাওয়ার পথ নেই ভুক্তভোগীর।
ভোক্তা হয়রানি ও আইনের সীমাবদ্ধতার এমন প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য– ‘একটি টেকসই জীবনধারায় ন্যায়সংগত রূপান্তর’। প্রতি বছর জাঁকজমকভাবে দিবসটি উদযাপন হলেও এবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তা পালনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে ঘরোয়াভাবে দিবসটি পালন করবে অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের বেশির ভাগ অভিযান হয় খুচরা বাজারে। এ নিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। অভিযানের ভয়ে নাম বলতে নারাজ কারওয়ান বাজারের এমন এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গত বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, তিন মাস ধরে কোম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এটা সরকারও জানে। অথচ ভোক্তা অধিদপ্তর ছোটখাটো ভুলের জন্য বড় মাশুল নিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। এটা রীতিমতো জুলুম।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ভোজ্যতেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় সম্প্রতি তিন কোম্পানিকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলেছে অধিদপ্তর। তবে দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এর জবাব পেয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান বিকাশ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, ‘প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি তদারকি দল খুচরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।’
আইনের সীমাবদ্ধতা
২০০৯ সালে ভোক্তাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, বিরোধ নিষ্পত্তি, ক্ষতিপূরণ, প্রতারণা রোধ এবং গণসচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে ভোক্তা অধিকার-সংরক্ষণ আইন হয়। গত প্রায় দেড় দশকে শহরকেন্দ্রিক অধিদপ্তরের কার্যক্রমে কিছু সুফল মিললেও বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে নিষ্পত্তি হচ্ছে না অনেক মামলা। আইনে বলা আছে, ভোক্তা প্রতারিত হলে মামলা করতে পারবেন। কিন্তু কীভাবে- কোন পদ্ধতিতে মামলা করবেন, তা সুস্পষ্টভাবে বলা নেই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অপরাধের ধরন ও মাত্রা বদলালেও আইনে এসব ধারা যুক্ত হয়নি। সেজন্য অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
আইন সংস্কারের উদ্যোগ
অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, শুধু খুচরায় নয়, পাইকারি ও উৎপাদনসহ সব পর্যায়ে নিয়মিত তদারকি হচ্ছে। যারা অপরাধ করছে আইন অনুযায়ী তাদের জরিমানাসহ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন অভিযোগ শুনানি ও নিষ্পত্তি হচ্ছে। তাছাড়া ভোক্তার স্বার্থে বিদ্যমান আইনে কিছু সংস্কার প্রক্রিয়াধীন। আইনে নতুন করে কয়েকটি সেবা খাত যুক্ত হবে। আরও কী ধরনের সংস্কার দরকার সেই বিষয়ে পরামর্শ দিলে তা বিবেচনা করা হবে।
তারা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল জনবল দিয়ে কোটি কোটি ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করা সংস্থার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়টিও ভাবতে হবে।
গড়ে ১৫০ অভিযোগ
অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে নানা অভিযোগ ও অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার পরও অপরাধ থেমে নেই। নিত্যনতুন কৌশলে এই প্রতারণা চলছে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১৫০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। সরাসরি ও অনলাইনে এসব অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। এসবের বেশির ভাগ ই-কমার্সসংক্রান্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গত বছরের তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ অভিযোগ বেড়েছে। ঢাকায় মাসে ১৬০ থেকে ১৭০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতি মাসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাক জরিমানা আদায় করা হয়। বেশি অভিযোগ জমা পড়ার কারণে নিষ্পত্তি গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশের মতো কমেছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
এ বিষয়ে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পুরো বাংলাদেশ যেন ঠকা ও প্রতারণার হাট। ভোক্তাকে বঞ্চিত করাটাই রীতি। বৈষম্য বিলোপের কথা বলে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। অথচ তাদের আমলে সরকারিভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা বললে আইন প্রয়োগকারী ও প্রশাসনের লোকজন আঁতকে ওঠেন। কারণ দীর্ঘদিন তারা ব্যবসায়ীদের আনুকূল্যে ছিলেন। এই মধুর স্মৃতি ভুলতে পারেন না। নতুন করে অনলাইনে প্রতারণা ও গ্রাহক ঠকানোর শত শত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আগের অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে অপরাধীরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার-সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, আইনে কী ধরনের সংস্কার দরকার সেই বিষয়ে জনপ্রতিনিধি বা ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা প্রস্তাব দিক। তাদের পরামর্শ বিবেচনা করা হবে।
খুচরা বাজারে অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার রোজা উপলক্ষে প্রতিটি জেলায় অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তো ইচ্ছা করে খুচরা পর্যায়ে অভিযান করছে না। বড়-ছোট সব জায়গায় তদারকি হচ্ছে। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছে, সেখানে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অতএব, এ অভিযোগ যথাযথ নয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।

ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’

ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

শুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।

জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প