৪৩ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের
Published: 15th, March 2025 GMT
বিশ্বের ৪৩টি দেশে বিভিন্ন মাত্রায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এই বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত ও অভ্যন্তরীণ মেমোর বরাত দিয়ে শনিবার (১৫ মার্চ) এই তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এবারের এই নিষেধাজ্ঞা তার প্রথম মেয়াদে আরোপিত বিধিনিষেধের চেয়েও ব্যাপক হতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমস ৪৩টি দেশের কথা উল্লেখ করলেও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় ৪১টি দেশ পড়তে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন:
দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করলো যুক্তরাষ্ট্র
গাজার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত ট্রাম্পের
খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়তে যাওয়া এসব দেশকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। রয়টার্স বলছে, প্রথম ভাগের দেশগুলোর ওপর সম্পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এই তালিকায় রয়েছে ১০টি দেশ। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, সিরিয়া, কিউবা, উত্তর কোরিয়া।
তবে নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ দেশ ছাড়াও সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে ভুটান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ভেনিজুয়েলা ও ইয়েমেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে পাঁচটি দেশ। ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার, দক্ষিণ সুদানের ওপর আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এতে করে এসব দেশের পর্যটক, শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব পড়বে।
তবে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এই ভাগে আরও থাকছে বেলারুশ, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন ও তুর্কমিনিস্থান।
এ ছাড়া তৃতীয় ধাপের দেশগুলোকে ৬০ দিনের সময় দেওয়া হবে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগ দূর করতে। রয়টার্স বলছে, এই ধাপে রয়েছে ২৬টি দেশ এবং নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এই তালিকায় রয়েছে ২২টি দেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব দেশের নাগরিকদের মার্কিন ভিসা আংশিকভাবে স্থগিত করা হতে পারে। তবে দেশগুলো যদি ৬০ দিনের মধ্যে ভিসা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার ঘাটতি দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করা হবে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই তালিকা পরিবর্তন হতে পারে। এটি এখনো মার্কিন প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এর জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সম্মতিও প্রয়োজন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন উইয়র ক ট ইমস ভ রমণ ন ষ ধ জ ঞ রয়ট র স এসব দ শ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে
আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। যমজ বোন। গত ১৭ মে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। বরিশাল সদরে জন্ম নেওয়া দুই বোন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর কেমন করে গেলেন স্বপ্নের বন্দরে তাই তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
গত ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। এর ঠিক পরদিনই এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এমবিএ গ্র্যাজুয়েশন ও সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের ঠিক পরদিন, ১৮ মে ছিল এই দুই বোনের জন্মদিন। জন্মদিনটি তারা পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের আর রাজ্জাক সুপারমার্কেটের ব্যাঙ্কুয়েট হলে।
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে...
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যমজ বোন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবার জন্ম বরিশাল সদরে। ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। নিউইয়র্কে গিয়ে হাইস্কুল শেষ করে তারা সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা প্রশাসনে ভর্তি হন এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। ১৬ মে সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে
কমিশন্ড হন।
যে উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক
সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি ১৭ মে তাদের ডিগ্রি অর্জন উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি বলেন, ‘শিক্ষার পাশাপাশি দেশসেবায় তাদের এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে তারা নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেবেন।’
যে জন্য করেছেন এমবিএ
মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ কোর্স সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনে আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি কসমেটিকস ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এ দুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনকের অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি হচ্ছে– এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মিট, আর রাজ্জাক সুপারমার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার।
ঐতিহ্য ও মায়ের অগ্রযাত্রা
বরিশাল থেকে মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দুই বোন দেখেছেন মায়ের দৃঢ়তা ও পরিবারের জন্য মায়া। এও দেখেছেন যে মায়ের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ কেমন করে আস্থা অর্জন করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে! প্রতিষ্ঠানটির মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেবল পহেলা বৈশাখেই নয়; বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সব অনুষ্ঠানে এবং শৌখিন প্রবাসীদের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে তাদের মাটির ডিনার সেট। মায়ের মতো দুই বোনও বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালিয়ানায় ভর করে এগিয়ে যেতে চান।
আগামীর স্বপ্ন
আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা দেশ ছাড়ার পর থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যয় নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা করতে হয়নি মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে। তারা বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গেই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে তারা ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। সেদিন সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দুই বোন বলেন, ‘পেশার পাশাপাশি আগামীতে নিজেদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে চাই। দেশেও কাজ করছি আমরা। সেখানেও রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই!’