যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে কথা–কাটাকাটির জেরে আওয়ামী লীগ কর্মীর গুলিতে বিএনপি কর্মী আজগর আলী (২৬) আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শুক্রবার রাতেই পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি পিস্তল, পিস্তলের দুটি গুলি ও গুলির একটি খোসা উদ্ধার করেছে। শুক্রবার রাত আটটার দিকে উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন আজগর আলীর বাবা আব্বাস আলী। 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী ইমরান (২৫) অতর্কিত আজগরকে গুলি করেন।

গুলিবিদ্ধ আজগর আলী বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজগর চৌগাছা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে। আর অভিযুক্ত ইমরান একই গ্রামের বাসিন্দা। আজগর বিএনপি, আর ইমরান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আজগর আলী বলেন, ‘আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে পণ্ডিত মোড়ে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইমরানের ছোড়া গুলি এসে আমার পায়ে বিদ্ধ হয়। হাসপাতালের ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেছেন, পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় সৈয়দপুর গ্রামে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয় ইমরানের চাচা আলতাফ হোসেন ও আজগরের বাবা আব্বাস আলীর মধ্যে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পক্ষ অপর পক্ষকে হুমকি দেয়। রাত আটটার দিকে আজগরসহ কয়েকজন গ্রামের পণ্ডিত মোড়ে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ইমরান সেখানে গিয়ে গুলি ছোড়েন। একটি গুলি আজগরের পায়ে বিদ্ধ হয়। স্থানীয় লোকজন ইমরানকে ধরে পিটুনি দেন। পরে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে তাঁকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পর থেকেই ইমরান পলাতক। আর গুলিবিদ্ধ আজগরকে প্রথমে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, আজগরের পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: যশ র ব এনপ আওয় ম ল গ আহত ব দ ধ হয় ইমর ন

এছাড়াও পড়ুন:

ছন্দের পথে হাঁটা নিঃসঙ্গ এক হাটুরে কবি

‘মুখে আল্লাহ বলো ভাই সকলে ওরে মুসলমান,

হিন্দু ভাইরা বলো সবাই কৃষ্ণ ভগবান।

ইমান আনো দেলে সবাই মিলে হিন্দু-মুসলমান,

মুসলমানে জপো সবাই নবীর পাক কোরআন।

পড়ো নামাজ রোজা পাইবা মজা পরকালে গিয়া,

মিছে মায়ায় ভবের মাঝে রইলা সব ভুলিয়া।'

এভাবে সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের জন্য ধর্ম, নীতিকথা আর নানা সুখ-দুঃখের বিষয় গ্রাম্য কবিতায় তুলে ধরেছেন মো. আজগর আলী (৬৮)। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার লাউশন গ্রামে তাঁর বাস।

সম্প্রতি আজগর আলীর বাড়ির আঙিনায় বসে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, নব্বই দশকের আগের কথা। তখন প্রযুক্তির এতটা বিকাশ ঘটেনি। সে সময়ে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে কিছু স্বভাবকবি দীর্ঘ কবিতা লিখতেন। সুরে সুরে এসব কবিতা পথচলতি মানুষকে ও হাটবাজারে আসা মানুষকে শোনাতেন। তাঁরা এসব কবিতায় আনন্দ খুঁজে পেতেন। প্রেম-বিরহের কাহিনি থেকে শুরু করে সমসাময়িক নানা ঘটনা এসব কবিতার বিষয়বস্তু হতো। এসব কবিতাকে কেউ বলতেন ‘হাটুরে কবিতা’, আবার কেউ বলতেন ‘পথকবিতা’। রচয়িতারা চারণকবি, পথকবি অথবা হাটুরে কবি হিসেবে পরিচিত হতেন।

প্রযুক্তির প্রসারে মানুষের জীবনে বিনোদনের নতুন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হয়। আবেদন কমতে থাকে গ্রামীণ কবিদের। এখন আর কেউ এসব শুনতে চান না। তাই ভাটা পড়ে তাঁর হাটুরে কবিতা লেখায়। গ্রামের মেঠো পথ, ছোট-বড় বিভিন্ন হাটবাজার আর নদীর ঘাট ঘুরে, সুরে সুরে গাওয়া পুঁথি ফেরি করা হয় না আর তাঁদের। তবে কালেভদ্রে তাঁর মতো কবির ডাক পড়ে।

এত দিন ধরে কবিতা লিখে মানুষকে আনন্দ দিলেন, কিন্তু নিজের মূল্যায়ন করতে পারলেন না; সেই আক্ষেপ আজগর আলীর। তিনি বলেন, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। এরপর নানা কারণে আর পড়ালেখা এগোয়নি তাঁর। তবে ছোটবেলা থেকেই মুখে মুখে ছন্দ দিয়ে কথা বলতে পারতেন তিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর যশ বাড়তে থাকে। ১৮-২০ বছর বয়সে একদিন সাহস করে লিখে ফেলেন পুরো একটি হাটুরে কবিতা। গ্রামের দুই-একজন এটি দেখে পরামর্শ দিলেন, থানা সদরে গিয়ে প্রকাশ করতে। তাঁদের পরামর্শ মেনে প্রথম কবিতা ছাপিয়ে হাটে গিয়ে লোকজনকে শোনালেন। খুশি হয়ে অনেকে কিনে বাড়ি নিয়ে গেলেন।

আজগর আলী বাড়ি ফিরে কবিতা বিক্রির পয়সা গুণে অবাক হলেন। খরচের চেয়ে বেশি টাকা পেয়েছেন তিনি। সেই থেকে কবিতা লেখার কাজটি তাঁর নেশা হয়ে ওঠে। বাড়ি থেকে চলে যেতেন বিভিন্ন হাটবাজারে। ছন্দে ছন্দে সেই কবিতা শুনে লোকজন প্রশংসা করতে থাকেন তাঁর। এর মধ্যে বিয়ে করে ঘরসংসারে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন আজগর আলী। প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তিন মেয়ে আর দুই ছেলে তাঁর। সব মিলিয়ে তাঁর ১১ জন নাতি-নাতনি।

একেক করে আজগর আলী ৪৫টি কবিতা লিখেছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ জন্য গ্রহণ করেছেন নিবন্ধন নম্বর। এসব কবিতার মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া চমকপ্রদ ঘটনা, প্রেমকাহিনি ও চিত্তাকর্ষক বিষয় নিয়ে রচিত। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ঘটনা ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কবিতা লিখেছেন তিনি।

অতীতের কথা স্মরণ করে আজগর আলী বলেন, এলাকার ও দেশ-বিদেশের আলোচিত ঘটনা নিয়ে লেখা গ্রাম্য কবিতার হাটবাজারে খুব কদর ছিল। ছন্দে ছন্দে এসব কবিতা পড়ে শোনালে অনেকেই খুশি হয়ে শুনতেন। এখন এসব কবিতার আর কদর নেই আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। সেখানে ইচ্ছেমতো সবকিছু দেখা ও শোনা যায়।

ছেলেমেয়েরা একসময় গ্রাম্য কবিতা লেখার বিষয়ে উৎসাহ দিলেও এখন মানা করে দিয়েছে বলে জানান আজগর আলী। তবু জীবনে আর যে কয়েক দিন বাঁচবেন, তিনি এসব নিয়েই থাকতে চান।

পাশের বস্তুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ হয়েও আজগর আলী অসাধারণ একজন কবি। গ্রাম্য কবিতা, যাকে হাটুরে কবিতা বলা হয়; তার জন্য পরিচিত তিনি। তাঁদের জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে তাঁর লেখা কবিতা শুনে ও পড়ে। এখন আর কেউ এসব কবিতা শুনতে চায় না। ফলে চলন নেই।

উপজেলার সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিলেজ ভিশনের পরিচালক শরীফ খন্দকার বলেন, ‘আজগর আলীর কবিতা আমরা হাটবাজারে শুনতাম। জমানো পয়সা দিয়ে কিনে এনে আসর জমিয়ে নিজেরা পড়তাম অথবা শুনতাম। এখন আর সেদিন নেই। গ্রামের এসব লুকায়িত প্রতিভাধর মানুষকে সবার সামনে নিয়ে আসা দরকার।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিশু শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, থানায় অভিযোগ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা
  • বগুড়ায় অটোরিকশাচালক আজগর হত্যা মামলার দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড
  • নাতনিকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা
  • ছন্দের পথে হাঁটা নিঃসঙ্গ এক হাটুরে কবি