কেন ব্যবসায়ীদের কাছে টানছেন চীনের প্রেসিডেন্ট
Published: 17th, March 2025 GMT
গণপরিসর থেকে একসময় হারিয়ে গিয়েছিলেন চীনের অন্যতম শীর্ষ ধনী জ্যাক মা। ২০২০ সালের পর তাঁকে আর খুব একটা জনসমক্ষে দেখা যেত না। চীনের সি চিন পিং সরকারের সমালোচনা পর সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে তিনি অনেকটা আড়ালে চলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ করে গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের এক সরকারি অনুষ্ঠানে জ্যাক মাকে দেখা যায় সামনের সারিতে। সেই অনুষ্ঠানে সি চিন পিং শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করেন। যদিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও কথা বলেননি জ্যাক মা। অনুষ্ঠান শেষে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে করমর্দন করেন। সেই ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে জ্যাক মার মালিকানাধীন আলিবাবার শেয়ারের দাম ৮ শতাংশ বেড়ে যায়। শুধু তা–ই নয়, চলতি বছর আলিবাবার শেয়ারের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জ্যাক মার অনুসারী ও বিশ্লেষকেরা এই করমর্দনকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন। এ জন্য অনুসারীরা জ্যাক মাকে শুভেচ্ছায়ও ভাসিয়েছেন। সেই সঙ্গে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে যে জ্যাক মা পুনর্বাসিত হচ্ছেন বা হয়েছেন।
২০২০ সালে উধাও হয়ে যাওয়ার আগে জ্যাক মা ছিলেন চীনের প্রযুক্তি জগতের পোস্টার বয় বা সবচেয়ে পরিচিত মুখ। তখন গুগল, ফেসবুক বা হালের চ্যাটজিপিটির মতো জ্যাক মার কোম্পানি আলিবাবাকে নিয়েও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংবাদপত্রে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রতিবেদন ছাপা হতো। একপর্যায়ে চীনের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, এসব ব্যাংকের মনোভাব বন্ধকির দোকানের মতো, অর্থাৎ তারা খুব একটা ঝুঁকি নিতে চায় না। ঠিক তখন তাঁর মূল প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের ৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও বাজারে আসতে যাচ্ছিল। কিন্তু এই মন্তব্যের জেরে সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত আইপিও বাতিল হয়ে যায়।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বেইজিংও তখন মনে করছিল যে অ্যান্ট গ্রুপ ও জ্যাক মা অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। ফলে তখন চীন সরকার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর লাগাম টেনে ধরে। সেই ধাক্কায় জ্যাক মাও বিপদে পড়েন।
চীনের নীতি পরিবর্তনগত কয়েক বছরে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বেশ কমে গেছে। প্রযুক্তি স্থানান্তর নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞাসহ নানা শুল্কবাধায় চীনের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে চীনের সঙ্গে যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তাতে চীনের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। সেই সঙ্গে সি চিন পিং চীনের বড় বড় কোম্পানির রাশ যেভাবে টেনে ধরেছিলেন, তার প্রভাবও পড়ে অর্থনীতিতে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চলতি বছর আবারও ক্ষমতায় এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার অনুযায়ী চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়েছেন। ফলে চীনের বাস্তবতা এখন আরও কঠিন। এই বাস্তবতায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বড় ব্যবসায়ীদের প্রতি মনোভাবে পরিবর্তন এনেছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে তিনি হয়তো সেই আগের অনিয়ন্ত্রিত প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত হবেন না, বরং ব্যবসায়ীদের চীনের জাতীয় নীতি ও কৌশলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে, এমন ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সি চিন পিং অব্যাহতভাবে দুটি কথা বলে যাচ্ছেন। সেটা হলো, হাই কোয়ালিটি ডেভেলপমেন্ট ও নিউ প্রোডাকটিভ ফোর্সেস, অর্থাৎ উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি ও নতুন উৎপাদক শক্তির বিকাশ। এসব শব্দ বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন তিনি। অতীতে চীনের উচ্চ প্রবৃদ্ধির যেসব চালিকা শক্তি ছিল, যেমন আবাসন ও অবকাঠামো খাত, সেখান থেকে সরে এসে এখন উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প যেমন সেমিকন্ডাক্টর, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও এআই–ভিত্তিক উন্নয়নের দিকে চীন ধাবিত হবে।
চীনের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সোশ্যালিস্ট মডার্নাইজেশন বা সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়নের লক্ষ্য অর্জন করা। ওই সময়ের মধ্যে দেশের সব নাগরিকের উচ্চ জীবনমান নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং বিদেশি প্রযুক্তির ওপর যেন বেশি নির্ভর করতে না হয়, সেটাও নিশ্চিত করা।
সি চিন পিং জানেন, এই লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে দেশের বেসরকারি খাতকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্লেষকেরা বিবিসিকে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের অনুষ্ঠানে জ্যাক মার এই পুনরাবির্ভাবের অর্থ হলো, বেইজিং নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে আসছে অর্থাৎ প্রযুক্তি খাতের হ্রাস টেনে ধরার বদলে তাদের নিয়ন্ত্রিতভাবে কাজে লাগানোর কৌশল নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে বেসরকারি খাতকে কাজ করতে হবে। বেসরকারি খাতের প্রতি সি চিন পিংয়ের আহ্বান, ‘উদ্ভাবন করুন। নিজেদের প্রতিভার স্ফুরণ দেখানোর এটাই সেরা সময়।’
ডিপসিক চীনের স্পুটনিক১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশযান স্পুটনিক পাঠিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো ভীত হয়ে পড়ে তাতে। তখন তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে। বাস্তবতা হলো, ডিপসিক বাজারে এনে চীনও সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে পথিকৃৎ যুক্তরাষ্ট্র, তারা আগেই চ্যাটজিপিটি এনেছে। তবে ডিপসিক বাজারে আসার পর বিশ্ব বাজারে চীনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। সেই সঙ্গে এআই খাতে মার্কিন নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এমনকি চীনের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার মুখেই চীন ডিপসিক উদ্ভাবন করেছে।
ডিপসিক চীনের জাতীয় গর্ব। একই সঙ্গে এর প্রভাব দেশটির আর্থিক বাজারেও পড়েছে। ডিপসিক বাজারে আসায় চীনের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ধারা শুরু হয়েছে। হংকং ও চীনের মূল ভূখণ্ডের শেয়ারবাজারে প্রযুক্তি কোম্পানিতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্স চীনের স্টক মার্কেট নিয়ে ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে। চীনে যে হারে এআই গৃহীত হচ্ছে, তাতে রাজস্ব আয় অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। ফলে চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোয় ২০০ বিলিয়ন বা ২০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ আসতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র অন ষ ঠ ন প রব দ ধ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপির জাতীয় স্থানীয় কমিটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, বর্তমান সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে এ আসনটিতে গতবারের মতো জোটের প্রার্থী ছাড় পাবেন। তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীও রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৮ আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা যে সমস্ত আসনে আগ্রহী সে সমস্ত আসনে প্রার্থী দেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করবো। এটা আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, এর মধ্যেই পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে, আমাদের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে, সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন।”