রাজধানীর গুলশানের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে শুরু হয়েছে ‘তারা উদ্যোক্তা মেলা ২০২৫’। শুধু নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি দেশীয় পণ্যের প্রদর্শন এবং তাদের পণ্যের বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। প্রদর্শনীটি (রোববার) রাত ১১টা পর্যন্ত এবং সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৮৫ জন নারী উদ্যোক্তা তাদের তৈরি দেশীয় পণ্য নিয়ে এই মেলায় অংশ নিয়েছেন। অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ নারী উদ্যোক্তা উৎপাদন খাতে জড়িত, যারা দেশের ঐতিহ্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। গত বছরের সফল ‘তারা উদ্যোক্তা মেলা’ আয়োজনের পর ব্যাংকটি এবার তৃতীয়বারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে, যেখানে উদ্যোক্তারা কোনো প্রকার খরচ ছাড়াই নিজস্ব স্টল দিয়েছেন।

ঢাকার গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডে অবস্থিত আলোকি কনভেনশন সেন্টারে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারপারসন মেহেরিয়ার এম হাসান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা, গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও ফারজানা চৌধুরী এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফারজানা খান।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব এসএমই ব্যাংকিং সৈয়দ আব্দুল মোমেন।

মেলায় সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তারা বুটিক, হাতে তৈরি পোশাক ও কারুশিল্প, মাটি ও পাটের তৈরি পণ্য, প্রক্রিয়াজাত চামড়াপণ্য, জামদানি ও মসলিনের পোশাক, খাদ্যপণ্য, অর্গানিক স্কিনকেয়ার আইটেম এবং বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যসহ স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সমাহার নিয়ে হাজির হয়েছেন। এছাড়া মেলায় আগতদের জন্য রয়েছে বায়োস্কোপ, ইফতার ও ডিনার ফুড কোর্ট, হাওয়াই মিঠাই, বিনা মূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শকেন্দ্র ও চেকআপ এবং ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর কনসালট্যান্সিসহ অন্যান্য স্টল।

নারী উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে নিয়ে এসে ক্যাশলেস পেমেন্ট সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে মেলায় ব্র্যাক ব্যাংক কিউআর এবং কার্ড পেমেন্ট-সক্ষম প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। মেলায় কিউআর পেমেন্টের ক্ষেত্রে যেকোনো পণ্য কেনাকাটায় ক্রেতারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় উপভোগ করবেন।

প্রদর্শনীটি নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার এবং দেশের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রেখে পণ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত। আয়োজনটি নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের বিক্রি বাড়াতে এবং চলমান ঈদ কেনাকাটার আবহে আরো বেশি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।

প্রদর্শনী সম্পর্কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, “উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক সব সময় নারী উদ্যোক্তাদের তাদের পূর্ণ সম্ভাবনার বিকাশে সহায়তা করে থাকে। এই ‘তারা উদ্যোক্তা মেলা’র মাধ্যমে উদ্যোক্তারা দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসারের সুযোগ পাচ্ছেন। নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও তাদের পণ্যের প্রসারে আমরা প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এরকম আরো অনেক মেলার আয়োজন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এই মেলার আয়োজন দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক

২০২৪ সালে মুনাফার রেকর্ড গড়েছে বেসরকারি খাতের দেশীয় মালিকানাধীন ব্র্যাক ব্যাংক। গত বছর ব্যাংকটি এককভাবে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফাসহ হিসাব করলে ব্যাংকটির সমন্বিত মুনাফা দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা।

আজ মঙ্গলবার ব্র্যাক ব্যাংক থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের ইতিহাসে একক কোনো বছরে এটিই রেকর্ড মুনাফা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি এককভাবে মুনাফা করেছিল ৭৩০ কোটি টাকা। সেবার সমন্বিত মুনাফা ছিল ৮২৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের একক মুনাফা বেড়েছে ৪৮৪ কোটি টাকা বা ৬৬ শতাংশ। আর সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সমন্বিত মুনাফা বেড়েছে ৬০৫ কোটি টাকা বা ৭৩ শতাংশ। এক বছরে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফায় এত বেশি প্রবৃদ্ধি আগে কখনো হয়নি।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছর ব্র্যাক ব্যাংক শুধু নিজেরা রেকর্ড মুনাফা করেছে তা নয়, দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসেও এটি সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের রেকর্ড। দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে যেখানে অতীতে কখনো কোনো ব্যাংকের মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি সেখানে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সর্বশেষ দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ২০২৩ সালে মুনাফার যে তথ্য রয়েছে তাতে ওই বছরও সর্বোচ্চ মুনাফা করেছিল ব্র্যাক ব্যাংক, সেটি ছিল ৮২৭ কোটি টাকা।

গতকাল সোমবার ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। তাতে বছর শেষে সমন্বিতভাবে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার মুনাফার এই তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকটি বলছে, গত বছর আমানত ও ঋণে খুব ভালো প্রবৃদ্ধি ছিল ব্যাংকটির। পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোও খুব ভালো ব্যবসা করেছে। এ কারণে মুনাফায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

রেকর্ড মুনাফা করায় সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে ব্যাংকটি। ২০২৪ সালের জন্য ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষিত এই লভ্যাংশের মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস। এর আগে ২০১৭ সালে ব্যাংকটি ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালে নগদ ও বোনাস মিলিয়ে লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০ শতাংশ। সেই হিসাবে গত বছরের জন্য লভ্যাংশের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি লভ্যাংশও অনুমোদন করা হয়। আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সাধারণ শেয়ারধারীদের অনুমোদনের পর এই লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি নগদ যে লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে শেষ পর্যন্ত এজিএমে সেটি বহাল থাকলে ব্যাংকটি নগদ লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করবে ২২১ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে ব্যাংকটির শেয়ারধারীরা বোনাস হিসেবে প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে পাবেন সাড়ে ১২টি শেয়ার।

এদিকে রেকর্ড মুনাফার ফলে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসও বেড়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির সমন্বিত ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৯৫ পয়সায়। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৩০ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ইপিএস ২ টাকা ৬৫ পয়সা বা ৬২ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যও বেড়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ১১ পয়সায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৭ টাকা ৬০ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য বা এনএভি বেড়েছে ৬ টাকা ৫১ পয়সা বা ১৭ শতাংশের বেশি।

গত বছর ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতের বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির কারণে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহও অনেক বেড়ে গেছে। বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬১ টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৭ টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ১৮৯টি শাখা, ৭৪টি উপশাখা, ৩২৯টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১ হাজার ১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। ১৮ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৩ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষুদ্র-মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের মেলা শুরু হচ্ছে ৮ মে
  • রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন ব্র্যাক ব্যাংকের
  • রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক