সাবেক স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার সীমার সঙ্গে প্রেম করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইসমাইল হোসেন অভি ও তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাজকীর আহম্মেদকে হত্যা করেন। সীমার মোবাইল থেকে অভি ম্যাসেজ দিয়ে তাজকীরকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনায় ডেকে আনে। পরে অভি ও তার তিন বন্ধু মিলে তাজকীরের হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে ও গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। পরে মরদেহ বস্তায় ভরে ভৈরব নদীতে ফেলে দেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভৈরব নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সীমাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও অভি পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

আজ সোমবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডেপুটি কমিশনার এম এম শাকিলুজ্জামান। 

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি আসিফ মাহমুদ নামে এক যুবক খালিশপুর থানায় তার ফুফাতো ভাই তাজকীরের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি জিডি করেন। তাজকীর রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে যে, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে সীমার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে তাজকীর তার চাচাতো ভাই রনির শ্যালিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনায় আসেন। তাজকীর খালিশপুর থানার গোয়ালখালি এলাকায় আসিফ মাহমুদের বাড়িতে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন।
এরপর তাজকীর খালিশপুর নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকায় প্রেমিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার বাবা মুরাদ হোসেন বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় ২৫ ফেব্রুয়ারি অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ ওই দিন সীমা, অভির মা লাবণী বেগম ও শহিদুল ইসলাম সাহিদ নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খানজাহান আলী থানার ভৈরব নদীর বালুর মাঠ ঘাট থেকে বস্তাবন্দী একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাজকীরের পরিবারের সদস্যরা মরদেহের পরনে থাকা পোশাক দেখে শনাক্ত করেন। 

ডেপুটি কমিশনার জানান, ৩ বছর আগে পরিবারের অমতে সীমার সঙ্গে ইসমাইল হোসেন অভির বিয়ে হয়। পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্স হয় এবং অভি দেশের বাইরে চলে যান। এ সময় তাজকীরের সঙ্গে সীমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডিভোর্সের ৭-৮ মাস পর অভি দেশে ফিরে এসে সাবেক স্ত্রী সীমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং তাদের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক তৈরি হয়। 

এ সময় ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, যা একমাত্র সীমা জানতো। সীমা একই সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দুই প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, যাতে কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারে। অভি আর সীমার নতুন করে সম্পর্কের বিষয়টি তাদের উভয় পরিবারের লোকজন জানলেও তাজকীরের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি অপ্রকাশ্যে থেকে যায়। 
কিন্তু ঘটনা পরিক্রমায় সীমার সঙ্গে তাজকীরের প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে যান অভি। এটা নিয়ে সীমা এবং অভির মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে। অভি তাজকীরকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটেন। এবং সীমার ব্যবহৃত গোপন মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাজকীরকে খুলনায় আসতে বলেন।
 
তাজকীর খুলনা এলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভি তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে নিজ বাসায় নিয়ে যান। অভিসহ চারজন মিলে তাজকীরকে হত্যা করেন। এরপর তারা ডাকবাংলো এলাকা থেকে ১০০ টাকা দিয়ে বস্তা কিনে লাশ তাতে ভরে ইজিবাইকে করে ভোর রাতে হার্ডবোর্ড খেয়া ঘাটে নিয়ে যান। সেখান থেকে আগেই ভাড়া করে রাখা ট্রলারযোগে দৌলতপুর যাওয়ার দিকে নদীর মাঝখানে নিয়ে লাশ ফেলে দেন।

এর আগে গ্রেপ্তার সীমা, লাবণী ও সাহিদ কারাগারে রয়েছেন। সাহিদ হত্যার পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহার করা ইজিবাইকচালক। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত অভি’র বন্ধু মশিউর রহমান জিতু ও রিয়াদ কাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মূল আসামি ইসমাইল হোসেন অভিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

ডেপুটি কমিশনার বলেন, তাজকীর হত্যার নৃশংসতা যেন সিনেমাকেও হার মানিয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার

আট বছর ধরে গাড়ি চালানোর পেশায় আছেন মো. শাহীন। প্রথমে চালাতেন ট্রাক, এখন যাত্রীবাহী বাস। তবে এটা তার মূল কারবারের আড়াল মাত্র। বাস চালানোর আড়ালে তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনেন ইয়াবার বড় চালান। প্রতি চালানে ১০–২০ হাজার পিস ইয়াবা থাকে। এগুলো পৌঁছানোর বিনিময়ে তিনি পান মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ছয়টি চালান এনে তিনি অন্তত ছয় লাখ টাকা পান। ফলে লাভজনক এ কারবারে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকা থেকে বাসচালক শাহীন ও সুপারভাইজার সঞ্জিত রাজবংশীকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ওই সময় বাসটিতে তল্লাশি চালিয়ে ১৫ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। এই চালানটি ঢাকার গাবতলী এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে।

ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ জানান, আন্তঃজেলা বাসের চালক–হেলপারদের একটি অংশ মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বিভিন্ন রুটের পরিবহনকর্মীদের মাদকসংশ্লিষ্টতার তথ্য পেতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এরপর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস পূর্ব রামপুরার মোল্লা টাওয়ারের সামনে থামানো হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে চালক ও সুপারভাইজার স্বীকার করেন, তাদের কাছে মাদকদ্রব্য আছে। এরপর তাদের দেখানো অনুযায়ী চালকের আসনের নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন ডিএনসি ধানমন্ডি সার্কেলের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, শাহীনের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই বছর ধরে তিনি বাসে মাদক পরিবহনের কাজ করেন। এর আগে ট্রাক চালানোর সময় অন্য চালকদের মাধ্যমে এ কারবারের বিষয়ে জানতে পারেন। পরে টেকনাফের মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি প্রতি ১০ হাজার পিস ইয়াবা ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আনুমানিক এক লাখ টাকা করে পান। এবারের চালানের জন্য পেতেন দেড় লাখের কিছু বেশি। তবে পৌঁছানোর আগেই তিনি ও তার সহযোগী ধরা পড়েন।

অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইয়াবার চালানের প্রেরক ও প্রাপকসহ আরও কয়েকজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • আগারগাঁওয়ে সেনা অভিযানে অপহৃত ৪ কিশোর উদ্ধার
  • গাইবান্ধায় বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, অভিযুক্ত আটক
  • অপহরণে বাঁধা দেওয়ায় যুবককে গুলি করে হত্যা, আটক ৩
  • অপহৃতকে ছেড়ে দিয়ে পালানোর সময় অস্ত্র ও গুলিসহ অপহরণকারী আটক
  • ছাড়া পেলেন অপহৃত কৃষক, এক অপহরণকারী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার