বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের পর ঢাকা সফরে থাকা মার্কিন সিনেটর গ্যারি চার্লস পিটার্স বললেন,  এই বিষয়ে বিশাল মিথ্যা তথ্যের কিছু অংশ তাদের দেশে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রচারিত বিশাল পরিমাণ মিথ্যা তথ্যের কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোয় তা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে গ্যারি পিটার্স এমন মন্তব্য করেন।

আরো পড়ুন:

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: প্রধান উপদেষ্টা

মার্কিন সিনেটরকে প্রধান উপদেষ্টা
সীমিত সংস্কারে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব

গ্যারি পিটার্স যখন বাংলাদেশ সফর করছেন, তখন ভারত সফরে রয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড। সোমবার (১৭ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে প্রচারিত তার সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তুলসীর এই মন্তব্যকে বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের সুনামহানির শামিল বলে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। 

তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসা সিনেটর গ্যারি পিটার্সের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতে গুরুত্ব পেল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু। 

সিনেটর পিটার্স বলেন, তার মিশিগান কনস্টিটোয়েন্সিতে অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ বাস করেন, যার মধ্যে ডেট্রয়েট শহরও অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ গত কয়েক মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ও মার্কিন সিনেটরের মধ্যে সংস্কার কর্মসূচি নিয়েও কথা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রশংসা করে গ্যারি পিটার্স বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি মসৃণ গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে।”


অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকার প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। 

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাগুলো ধর্মীয় নয়; বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তবে সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তারা দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষা করবে; তাদের বর্ণ, ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ বা পরিচয় যাই হোক না কেন।

অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন সিনেটরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীদেরও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে তারা ধর্মীয় ঐক্যের বাস্তব তথ্য জানতে পারেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ভারতসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর হয়। এর মধ্যে ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়, যা ফ্যাক্ট চেকে ধরা পড়েছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনেটর গ্যারি চার্লস পিটার্স। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা ডেস্কের মহাপরিচালক জাহিদ-উল-ইসলাম

ঢাকা/হাসান/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ট র স বল স বল ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ