তুলসীর কথার পর পিটার্স বললেন, যুক্তরাষ্ট্রে মিথ্যা তথ্য পৌঁছেছে
Published: 18th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের পর ঢাকা সফরে থাকা মার্কিন সিনেটর গ্যারি চার্লস পিটার্স বললেন, এই বিষয়ে বিশাল মিথ্যা তথ্যের কিছু অংশ তাদের দেশে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রচারিত বিশাল পরিমাণ মিথ্যা তথ্যের কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোয় তা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে গ্যারি পিটার্স এমন মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন:
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: প্রধান উপদেষ্টা
মার্কিন সিনেটরকে প্রধান উপদেষ্টা
সীমিত সংস্কারে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব
গ্যারি পিটার্স যখন বাংলাদেশ সফর করছেন, তখন ভারত সফরে রয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড। সোমবার (১৭ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে প্রচারিত তার সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তুলসীর এই মন্তব্যকে বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের সুনামহানির শামিল বলে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ঘিরে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসা সিনেটর গ্যারি পিটার্সের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতে গুরুত্ব পেল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু।
সিনেটর পিটার্স বলেন, তার মিশিগান কনস্টিটোয়েন্সিতে অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ বাস করেন, যার মধ্যে ডেট্রয়েট শহরও অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ গত কয়েক মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও মার্কিন সিনেটরের মধ্যে সংস্কার কর্মসূচি নিয়েও কথা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রশংসা করে গ্যারি পিটার্স বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি মসৃণ গণতান্ত্রিক পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকার প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাগুলো ধর্মীয় নয়; বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তবে সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তারা দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষা করবে; তাদের বর্ণ, ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ বা পরিচয় যাই হোক না কেন।
অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন সিনেটরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীদেরও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে তারা ধর্মীয় ঐক্যের বাস্তব তথ্য জানতে পারেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ভারতসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর হয়। এর মধ্যে ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়, যা ফ্যাক্ট চেকে ধরা পড়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনেটর গ্যারি চার্লস পিটার্স। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা ডেস্কের মহাপরিচালক জাহিদ-উল-ইসলাম
ঢাকা/হাসান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ট র স বল স বল ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি
‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’
কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।
হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।
হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’
অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’
একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’
খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’
ঢাকা/তারা