খুলনায় গণ অধিকার পরিষদের দখল করে বানানো কার্যালয় উচ্ছেদ করল ‘ছাত্র-জনতা’
Published: 19th, March 2025 GMT
খুলনা নগরের শান্তিধাম মোড়ে ‘পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র’ ক্লাব দখল করে বানানো গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় ‘ছাত্র-জনতা’। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই ভবন দখলমুক্ত করা হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ঘটনা ঘটে।
শান্তিধাম মোড়ে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র ক্লাবটির কার্যক্রম যে ভবনে পরিচালনা করা হতো, সেটি মূলত গণপূর্তের একটি দ্বিতল ভবন। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ক্লাবের কার্যক্রম চলত। নিচতলায় ছিল আরও কিছু কার্যালয়। ২০১০ সালের দিকে গণপূর্ত বিভাগ থেকে নিজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে আসে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র। এরপর ১৪ বছর ধরে সেখানে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের কর্মকর্তারা।
গত ২৭ জানুয়ারি দুপুরের দিকে গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে সেখানে প্রবেশ করে তা দখলে নেন। সেদিনই পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে সেখানে ‘গণ অধিকার পরিষদ, খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়’ লেখা একটি ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পুরো ভবনটি নেতা-কর্মীদের ব্যানারে ভরা ছিল।
ক্লাব ভবন দখল করে নিজেদের কার্যালয় করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই দিন রাতেই গণ অধিকার পরিষদের খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলামকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তারপরও রাশেদুল কার্যালয়টি দখলে রেখে সেখানে দলীয় কাযক্রম চালাতেন।
গতকাল রাতে যখন গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয় দখলমুক্ত করা হয়, তখন রাশেদুল সেখানে ছিলেন। তিনি বলেন, কার্যালয়ের মধ্যেই তাঁরা তারাবিহর নামাজ পড়ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ওই কার্যালয়ে হামলা করেন। তাঁরা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) কার্যালয়ের আসবাব ভাঙচুর ও তাঁদের মারধর করে সেখান থেকে বের করে দিয়েছেন। এ সময় তাঁদের হামলায় তিনিসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনখুলনায় ক্লাব ‘দখলে’ নিয়ে টানানো হলো গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয়ের ব্যানার২৭ জানুয়ারি ২০২৫এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ও খুলনা জেলার সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম (বাপ্পী) প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি সরকারি ভবন। সেখানে ইজারা নিয়ে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র ক্লাব কাযক্রম পরিচালনা করত। সেই ক্লাব দখল নিয়ে রাজনৈতিক কার্যালয় বানানো হয়েছিল। ছাত্র-জনতা আজ ওই ভবনটি দখলমুক্ত করতে এসেছিল। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের হামলায় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন।
সাজিদুল ইসলাম দাবি করেন, দখলমুক্ত করার কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যুক্ত নয়। তবে দলের অনেকেই যেহেতু শিক্ষার্থী, তাই তাঁরাও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেটি দখলমুক্ত করতে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনগণ অধিকার পরিষদ খুলনা মহানগরের সম্পাদককে অব্যাহতি২৮ জানুয়ারি ২০২৫খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন বলেন, ‘গণপূর্তের ভবনটি গণ অধিকার পরিষদ দখল করে নিয়েছিল। হঠাৎ করে এনসিপি দলের নেতা-কর্মীরা সেটি দখলমুক্ত করতে আসে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কিছুটা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের অনেকেই আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। ভবনটির পাহারায় এখন পুলিশ আছে। ভবনটি গণপূর্তের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত গণপ র ত এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
মাইলস্টোনে বিমানবাহিনীর চিকিৎসা ক্যাম্প, সেবা নিতে আসছেন অনেকে
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। এই ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ নিচ্ছেন অনেকে। তাদের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আত্মীয়-স্বজন।
বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্থায়ী এই চিকিৎসা ক্যাম্প আজ সোমবার শুরু হয়েছে। চলবে এক সপ্তাহ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এখান থেকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রবেশমুখে অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। লোকজন ভেতরে যাচ্ছেন। কেউ এসেছেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে, কেউবা যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের জায়গাটি দেখতে এসেছেন।
ক্যাম্পাসের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনে চলছে চিকিৎসা ক্যাম্পের কার্যক্রম। ভবনটির বারান্দায় মানুষের ভিড়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের নাম বারান্দায় বসে নিবন্ধন করছেন বিমানবাহিনীর একজন সদস্য। নিবন্ধন শেষে লোকজন বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। ভবনটির কয়েকটি কক্ষে বিমানবাহিনীর চিকিৎসকেরা সেবা নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন।
আরও পড়ুনস্কুলে বিমান দুর্ঘটনা থেকে যে শিক্ষা নেওয়া দরকার২৭ জুলাই ২০২৫নাম নিবন্ধন করে ১০৮ নম্বর কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছিলেন মাইলস্টোন স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহমেদ আল ফাতাহ। সে জানায়, যে ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়, সেটির দোতলায় ছিল তার শ্রেণিকক্ষ। স্কুল ছুটি হওয়ায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের কয়েক মিনিট আগে সে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে ক্যানটিনে চলে গিয়েছিল। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বন্ধু শামীমকে হারিয়েছে সে।
নানার সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসা এই শিক্ষার্থী বলে, ‘রাতে ঘুমানোর সময় ভয় পাই। দুঃস্বপ্ন দেখি। বন্ধু শামীমকে স্বপ্নে দেখি।’
অভিভাবকের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুহান হোসেন। শিশুটির কানে ব্যথা। তার কান ফুলে আছে। হাত ও মুখে পোড়া দাগ।
ক্যাম্পে চিকিৎসকেরা নুহানকে দেখে কিছু পরামর্শ ও ওষুধপত্র দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হবে বলে জানান তাঁরা।
আরও পড়ুনউত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরেক শিশুর মৃত্যু৪ ঘণ্টা আগেচিকিৎসা ক্যাম্পে সেবা দিচ্ছেন বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার চিকিৎসক শিহাব আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ঘটনার দিন উপস্থিত ছিলেন, তাদের অনেকেই আসছেন। ঘটনার পর থেকে রাতে ঘুম হচ্ছে না—এমন লোকজন আসছেন। আগুনে সামান্য দগ্ধ হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী এসেছে। অনেকে ড্রেসিং করাচ্ছেন, অনেকে ওষুধ নিচ্ছেন। এ ছাড়া যাদের অনেক বেশি মানসিক সমস্যা পাওয়া যাবে, তাদের সিএমএইচে পাঠানো হবে। তবে এ পর্যন্ত কাউকে পাঠানো হয়নি।
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের জায়গা দেখতে ভিড় করেছেন অনেকে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে। ২৮ জুলাই ২০২৫