গোয়ালন্দে ঋণের ফাঁদ পেতে উধাও এনজিও
Published: 19th, March 2025 GMT
ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছে একটি কথিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। কয়েকজন গ্রাহক ঋণের টাকা তুলতে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ভাড়ায় নেওয়া অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ বিষয়ে সোমবার গোয়ালন্দ ঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দেন সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।
সাইফুল ইসলাম উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের জামতলা হাটে রিকশার যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসা করেন। তাঁর ভাষ্য, ঊষার আলো ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও কর্মকর্তারা ১৩ মার্চ তাঁর দোকানে যান। তারা নানা বিষয়ে আলোচনার পর ১০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ জন্য সাইফুলকে সঞ্চয় বাবদ ৮০ হাজার টাকা ও বীমা বাবদ পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। তিনি ১৬ মার্চ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে জমা দেন। কথা ছিল, পরদিন তিনি ১০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। নির্ধারিত দিনে সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, অফিস তালাবদ্ধ। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ পাননি। পরে থানায় অভিযোগ দেন সাইফুল। জানা গেছে, অন্তত ২০-২৫ জন ব্যক্তি ওই সংস্থার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন রাজবাড়ী সদরের ব্যবসায়ী মো.
১৭ মার্চ ঋণ দেওয়া হবে জানিয়ে ৮০ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দিতে বলা হয় কামরুলকে। তিনি নিজ মোটরসাইকেল বন্ধক রেখে মাসিক ৫ হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে ৮০ হাজার টাকা ঋণ করেন। সেই টাকা ১৬ মার্চ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন। ১৭ মার্চ ঋণ নিতে এসে কার্যালয়ে এসে অন্যদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ওই ব্যক্তিরা পালিয়েছেন।
গত ৬ মার্চ ঊষার আলো ফাউন্ডেশনের নামে পৌর এলাকার নীলু শেখের পাড়ার একটি দোতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওই ভবনের মালিক প্রান্তি সুলতানা বলেন, মাসে ৭ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার শর্তে ওই কক্ষটি তিন বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়। তারা এ বিষয়ে পরে চুক্তিপত্র করবে বলে জানিয়েছিলেন।
সরেজমিন বুধবার ওই কক্ষটিতে দুটি টেবিল ও তিন-চারটা চেয়ার ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি। বক্তব্য জানতে ঊষার আলো ফাউন্ডেশনের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পরিচয়দানকারী মো. রুবেল হাসানের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও সংযোগ মেলেনি। সংশ্লিষ্ট সবার ফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।
গোয়ালন্দঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত রোববারই ঊষার আলো ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘তাদের কাগজপত্র জমা দিতে বলি, তারা এ জন্য দুই দিনের সময় চেয়েছিল। আজ আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম তারা পালিয়ে গেছে।’ সংস্থাটির নাম তাদের নিবন্ধন তালিকায় নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ল ইসল ম ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।