রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আভাসে কমছে শস্যের দাম, প্রভাব জ্বালানির বাজারেও
Published: 20th, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ দেখা যাচ্ছে। তাঁর আহ্বানে পরস্পরের জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা ৩০ দিনের জন্য বন্ধে সম্মত হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন।
জ্বালানি স্থাপনায় হামলা বন্ধ হওয়ায় বিশ্ববাজারে রুশ জ্বালানি তেলের সরবরাহ বাড়ছে। ফলে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর মার্কিন হামলা সত্ত্বেও বুধবার জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। এ ছাড়া প্রভাব পড়েছে শস্যের বাজারে। ফিউচার মার্কেটে বুধবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৯ সেন্ট বা দশমিক ৩ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার ৩৭ সেন্টে নেমে আসে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ২০ সেন্ট বা দশমিক ৩ শতাংশ কমে ৬৬ ডলার ৭০ সেন্টে নেমে আসে। খবর রয়টার্স
আজ বৃহস্পতিবার উভয় জাতের তেলের দাম আবার বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭১ দশমিক ২০ ডলারে উঠেছে। সেই সঙ্গে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৬৭ দশমিক ৫১ ডলারে উঠেছে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন জ্বালানি যুদ্ধবিরতির প্রভাব শস্যের বাজারেও পড়েছে। এরই মধ্যে কমেছে গম ও ভুট্টার দাম। শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের (সিবিওটি) সর্বাধিক সক্রিয় চুক্তি অনুসারে, গমের দাম বুশেলপ্রতি শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ কমে ৫ ডলার ৬০ সেন্ট হয়েছে। ভুট্টার দাম শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমে ৪ দশমিক ৫৭৫ ডলার হয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরে যাওয়ার সম্ভাবনায় বাড়তে পারে সরবরাহ। এতে শস্যের বাজার ভবিষ্যতে নিম্নমুখী হবে বলেই পূর্বাভাস বিশ্লেষকদের।
পণ্যবাজার বিশ্লেষক সংস্থা আইজির বাজার কৌশলবিদ ইয়েপ জুন রঙে রয়টার্সকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় জ্বালানি স্থাপনাগুলোয় আক্রমণ বন্ধ হলে জ্বালানি তেল সরবরাহ বাড়বে। ফলে দামও কমবে।
কিন্তু অন্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে তেলের দাম যতটা কমার কথা, ততটা কমছে না।
বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল সরবরাহকারী দেশের একটি হচ্ছে রাশিয়া। কিন্তু যুদ্ধের শুরু থেকে দেশটির জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিশ্ববাজারে তাদের সরবরাহ কমে যায়। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির ফলে মস্কোর জ্বালানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরবরাহ বাড়বে।
এদিকে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপের ঘটনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। এতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদায় প্রভাব পড়বে। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা।
মার্কিন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুতের তথ্যে মিশ্র চিত্র দেখা যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৪ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত ৪০ লাখ ৫৯ হাজার ব্যারেল বেড়েছে। অন্যদিকে পেট্রলের মজুত ১ লাখ ৭১ হাজার ব্যারেল ও ডিস্টিলেট মজুত ২০ লাখ ১৫ হাজার ব্যারেল কমেছে। এতে আবার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন সরবর হ দশম ক র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’