ট্যাংকারে আটকে পড়া বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রবাসী তরুণের মৃত্যু
Published: 20th, March 2025 GMT
জীবিকার তাগিদে দুই বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান শাওন। একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ পান। গত মঙ্গলবার তেলবাহী জাহাজের ট্যাংকার পরিষ্কার করতে গিয়ে আটকা পড়ে তাঁর এক বন্ধু। তাঁকে বাঁচাতে আরেক বন্ধুকে নিয়ে ট্যাংকারে প্রবেশ করেন শাওন। কিন্তু অক্সিজেনের সংকটে শ্বাস বন্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।
মো. শাওন (২২) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট কুড়িপাইকা গ্রামের মো.
শাওনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে জীবিকার তাগিদে শাওন আরব আমিরাতে যান। দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন। ১ মাস ১০ দিনের ছুটি কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে আমিরাতের আজমান শহরে জাহাজের তেলের ট্যাংকার পরিষ্কার করতে নেমে ভেতরে আটকা পড়েন শাওনের এক বন্ধু। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে ট্যাংকারের ভেতরে প্রবেশ করে তিনি নিজেও আটকা পড়েন। অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে শাওনসহ (২২) বাংলাদেশের তিনজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্যাংকারের ভেতর থেকে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে শাওনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে মাতম চলছে। কুড়িপাইকা গ্রামে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। গ্রামের লোকজন দিনভর তাঁদের বাড়িতে ভিড় করে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
শাওনের বাবা মো. আওয়াল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজের তেলের ট্যাংকার পরিষ্কার করতে গিয়েছিলেন শাওন। তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধু মোটর নিয়ে আগেই ভেতরে ঢুকেছিলেন। কিছুক্ষণ পেরিয়ে গেলেও তিনি ওপরে উঠে না আসায় শাওনসহ দুজন ভেতরে ঢোকেন। এ অবস্থায় অক্সিজেন–সংকটে তাঁরা সবাই মারা যান। তিনি বলেন, ‘বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে আমার শাওনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আমি ছেলেকে আর পাব না মানতে পারছি না। দুই মাস আগে ছুটি কাটিয়ে ছেলে বিদায় নিয়ে প্রবাসে গিয়েছিল। কে জানত ওই বিদায় ছিল শেষবিদায়।’
নিহত শাওনের চাচা জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘ভাতিজা হলেও শাওন আমার কাছে নিজের ছেলের মতো ছিল। তাঁর এমন মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, আরব আমিরাতে শাওনের মৃত্যুর খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। শাওন অন্তত ভালো, ভদ্র, বিনয়ী ছিলেন। এলাকায় সবার সঙ্গে তাঁর আন্তরিকতা ছিল। প্রবাসে গিয়েও সবার খোঁজখবর নিতেন। তাঁর এই মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারের কাছে তাঁর লাশ দেশে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র ত বন ধ ক প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”
তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস