জীবিকার তাগিদে দুই বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান শাওন। একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ পান। গত মঙ্গলবার তেলবাহী জাহাজের ট্যাংকার পরিষ্কার করতে গিয়ে আটকা পড়ে তাঁর এক বন্ধু। তাঁকে বাঁচাতে আরেক বন্ধুকে নিয়ে ট্যাংকারে প্রবেশ করেন শাওন। কিন্তু অক্সিজেনের সংকটে শ্বাস বন্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।

মো. শাওন (২২) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট কুড়িপাইকা গ্রামের মো.

আউয়াল মিয়ার ছোট ছেলে। বড় ভাই মো. সৌরভও আমিরাতপ্রবাসী এবং একই কোম্পানিতে শাওনের সঙ্গে কাজ করতেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে শাওনের মৃত্যু হয়। রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর পান দেশে থাকা স্বজনেরা।

শাওনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে জীবিকার তাগিদে শাওন আরব আমিরাতে যান। দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন। ১ মাস ১০ দিনের ছুটি কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে আমিরাতের আজমান শহরে জাহাজের তেলের ট্যাংকার পরিষ্কার করতে নেমে ভেতরে আটকা পড়েন শাওনের এক বন্ধু। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে ট্যাংকারের ভেতরে প্রবেশ করে তিনি নিজেও আটকা পড়েন। অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে শাওনসহ (২২) বাংলাদেশের তিনজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্যাংকারের ভেতর থেকে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে শাওনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে মাতম চলছে। কুড়িপাইকা গ্রামে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। গ্রামের লোকজন দিনভর তাঁদের বাড়িতে ভিড় করে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

শাওনের বাবা মো. আওয়াল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজের তেলের ট্যাংকার পরিষ্কার করতে গিয়েছিলেন শাওন। তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধু মোটর নিয়ে আগেই ভেতরে ঢুকেছিলেন। কিছুক্ষণ পেরিয়ে গেলেও তিনি ওপরে উঠে না আসায় শাওনসহ দুজন ভেতরে ঢোকেন। এ অবস্থায় অক্সিজেন–সংকটে তাঁরা সবাই মারা যান। তিনি বলেন, ‘বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে আমার শাওনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আমি ছেলেকে আর পাব না মানতে পারছি না। দুই মাস আগে ছুটি কাটিয়ে ছেলে বিদায় নিয়ে প্রবাসে গিয়েছিল। কে জানত ওই বিদায় ছিল শেষবিদায়।’

নিহত শাওনের চাচা জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘ভাতিজা হলেও শাওন আমার কাছে নিজের ছেলের মতো ছিল। তাঁর এমন মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, আরব আমিরাতে শাওনের মৃত্যুর খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। শাওন অন্তত ভালো, ভদ্র, বিনয়ী ছিলেন। এলাকায় সবার সঙ্গে তাঁর আন্তরিকতা ছিল। প্রবাসে গিয়েও সবার খোঁজখবর নিতেন। তাঁর এই মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারের কাছে তাঁর লাশ দেশে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ত বন ধ ক প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ