আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের নীরবতায় গাজায় শিশুহত্যা চলছে
Published: 20th, March 2025 GMT
ইসরায়েল শান্তিচুক্তির পরও গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। সাহায্য সংস্থা ও চিকিৎসা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনমতে, গাজায় প্রতিদিন ১০ জনের বেশি শিশু এক বা একাধিক অঙ্গ হারিয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরে জাতিসংঘ বলেছিল, গাজায় ‘বিশ্বে মাথাপিছু হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানো শিশু’ রয়েছে। এসব শিশুর কারও পা নেই; কারও হাত কিংবা কারও দু’চোখ হারিয়েছে। গাজায় এ ধরনের অঙ্গ খুইয়েছে হাজার হাজার শিশু।
পৃথিবীর হর্তাকর্তা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে স্রেফ নিন্দা জানিয়ে চুপ রয়েছে। আমাজনের মতো গভীর জঙ্গলে গিয়েও যে দেশটি মাতব্বরি করে, তারা যুদ্ধে সরাসরি ইন্ধন দিয়েই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ইসরায়েলে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ সরবরাহের প্রকাশ্য প্রমাণ রয়েছে। তাদের জোগান দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েই হত্যা করা হচ্ছে শিশুদের।
গত সপ্তাহে আলজাজিরায় গাজা নিয়ে হাদিল আওয়াদ একটি নিবন্ধ লিখেছেন, যেখানে শিশুহত্যার নির্মম ও হৃদয়বিদারক চিত্র উঠে এসেছে। ৩ বছর বয়সী হানানের দুই পা কেটে ফেলা হয়েছে। ১ বছর ৮ মাস বয়সী তার বোন মিস্কের এক পা বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে। হানান তার বয়সী অন্যান্য বাচ্চার পা বুঝতে এবং লক্ষ্য করতে পারত বলে জিজ্ঞাসা করত– কেন তার পা নেই! এই দৃশ্য পৃথিবীতে উন্মোচিত হওয়ার পরও বিশ্বনেতৃত্ব চুপ। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কতটা নির্দয় ও নিষ্ঠুরতায় পৌঁছে গেলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়!
এ রকম শত শত হানান ও মিস্কের অবস্থান এখন গাজায়! প্রতিমুহূর্তে একের পর এক হানান ও মিস্কের এমন নির্মম পরিণতি দেখছে বিশ্ব। অথচ বিশ্ব আজ নির্বিকার! পৃথিবীব্যাপী নেতৃত্ব যে নৈতিকভাবে পুরোপুরি দেউলিয়া হয়ে পড়েছে, এটাই তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এই নির্বিকারত্বের তালিকায় রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেনের মতো ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিশালী জোট এবং বিশ্বের ক্ষমতার অন্যতম ভাগীদার মধ্যবিত্ত শ্রেণি।
গণহত্যা বন্ধে রাশিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরবের মতো বড় বড় শক্তিধর রাষ্ট্রের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য নয়। প্রতি মুহূর্তে ইসরায়েলি বোমায় শত শত প্রাণ নিভে যাচ্ছে। কিন্তু এসব দেশের নেতা এখনও সামষ্টিকভাবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সামরিক প্রধানের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ ওঠার পরও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও শুধু নিন্দা জানিয়ে নীরব দর্শকে পরিণত হয়েছে।
আলজাজিরার কলাম লেখক বেলেন ফার্নান্দেজ উল্লেখ করেছেন, মার্কিন সহায়তায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যখন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি দুর্বল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। সরকারি সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, ‘ফেব্রুয়ারিতে গাজায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজারে পৌঁছেছে। এ ছাড়া সব জায়গায় ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার নিখোঁজ ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গাজা দৃশ্যত ইসরায়েলি বোমা বর্ষণ থেকে কিছুটা মুক্তি পেলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও চুক্তি লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে।’ আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর নীরবতার কারণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দোসররা এমন হত্যাকাণ্ড চালাতে পারছেন। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ও ইন্ধন না থাকলে দেশটি এত ভয়াবহ দানব হয়ে উঠত না।
এই সপ্তাহে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট নিশ্চিত করেছেন, সর্বশেষ হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কথা হয়েছে। তাঁর মতে, ট্রাম্প ‘স্পষ্ট করে বলেছেন’, হামাস ও ‘যারা কেবল ইসরায়েলকেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকেও ভয়ংকর করে তুলতে চায়, তাদের সবাইকে এর মূল্য দিতে হবে।’ হামাসের প্রতি ট্রাম্পের পূর্ববর্তী হুমকির ব্যাখ্যা করে লিভিট সতর্ক করেছেন– ‘সমগ্র নরক ভেঙে পড়বে।’ অথচ তারাই বিশ্ববাসীর সামনে নরক সৃষ্টির হোতায় পরিণত হয়েছে। তাদের মুখেই বিশ্ববাসীকে গণতন্ত্রের দীক্ষা নিতে হয়! বর্তমানে আমরা এই হঠকারী নেতৃত্বকে অবলীলায় মেনে নিয়েছি, যার পরিণতি বর্তমান গাজা পরিস্থিতি।
এই হঠকারী নেতৃত্বের পরিণতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সবাইকে। যে শিশুরা পাপ-পুণ্য বলতে কিছুই বোঝে না, আজ তারাই চরম নৃশংসতার শিকার। কথা ছিল, হানান কিংবা মিস্ক মায়ের কোলে নিরাপদে থাকবে, স্কুল ও উঠানে প্রাণ খুলে দৌড়াবে। কিন্তু আজ হানানের মতো হাজার হাজার শিশুকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। এই নৃশংসতা ভবিষ্যতের পৃথিবীতে আরও অন্ধকার নিয়ে আসবে। হাত-পা কিংবা চোখ হারানো এই শিশুরাই একেকজন যোদ্ধা হয়ে ফিরবে এবং স্বাধীনতার জন্যই হঠকারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে লড়বে।
ট্রাম্প ‘নরক’-এর অবসান ঘটাতে গিয়ে আরও কঠিন নরকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি সে কথা উপলব্ধি করতে পারছেন না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ট্রাম্প ও বাইডেনের উত্তরসূরিদের মাফ করবে না, যে রকম আমরা যুগ যুগ ধরে ঔপনিবেশিক লড়াইয়ে দেখেছি। যে পা কিংবা হাত কেটে ফেলা হয়েছে, তা-ই আবার গজিয়ে উঠবে স্বাধীনতার আওয়াজ তুলে। যে চোখ অন্ধত্ব বরণ করেছে, সেখানেই স্বাধিকারের স্বপ্ন জেগে উঠবে।
গত দেড় বছরের মধ্যে গাজায় অবশিষ্ট বলতে কিছু নেই। পুরো ধ্বংসাবশেষে হাসপাতাল, মসজিদ সবকিছুই বিলীন হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর দীর্ঘ ১৫ মাসের হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ সরাতে সময় লাগবে প্রায় ২১ বছর। এ কাজে খরচ হবে ৫০ কোটি ডলার। যেখানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি রাস্তায় নামা জরুরি ছিল, সেখানে তারা কেবল নিন্দাজ্ঞাপক বিবৃতি দিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ কি আমাদের ক্ষমা করবে?
ইফতেখারুল ইসলাম: সহ-সম্পাদক, সমকাল
iftekarulbd@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ন র মত ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতরে মিলল ২৩টি ককটেল, আটক ১
মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতর তিনটি প্লাস্টিকের বালতিতে লুকিয়ে রাখা ২৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বোনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে তারা। পাশাপাশি মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈখর অনির্বাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ড্রেন থেকে ককটেলগুলো উদ্ধার হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩
দিনাজপুরে পুকুর পাড় থেকে গ্রেনেড উদ্ধার
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ঢাকনা খোলেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা প্লাস্টিকের বালতিতে তুষ দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় কিছু বস্তু দেখতে পান। পাশাপাশি তিনটি ড্রেনের ঢাকনা খুলে তারা একই চিত্র দেখেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেনের ভেতর থেকে তিনটি বালতিতে রাখা ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আটক হাসান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারীর ভাগ্নি জামাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলগুলো উদ্ধার করে। এ সময় মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারির বোন সেলিনা বেগমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/রতন/মাসুদ