Prothomalo:
2025-11-02@23:29:28 GMT

পাকিস্তান কি এইভাবে পারবে

Published: 21st, March 2025 GMT

বিদ্রোহের শিকড় দেখতে না পাওয়া, ‘সন্ত্রাসবাদী’ লেবেল লাগানো এবং প্রতিবেশী দেশের ওপর দোষ চাপানো কোনো দিনই কার্যকর কৌশল হবে না।

মার্চ ১১ তারিখে, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছিনতাই করে। ৩৬ ঘণ্টার অবরোধের পর পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী বিএলএর যোদ্ধাদের হত্যা করে। শতাধিক অপহৃত যাত্রী মুক্তি পান। সরকারের মতে, অপারেশনের সময় কমপক্ষে আটজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা একটুও দেরি না করে আফগানিস্তান বা ভারতের ওপর দায় চাপিয়ে একে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে আখ্যা দেন।

এই রকম ঘটনাগুলোকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ নিজের দায় এড়িয়ে সোজা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে তকমা দিয়ে দেন। এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। বেলুচিস্তানে ট্রেন ছিনতাই করবার বিষয়ে কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।

ট্রেন হাইজ্যাকিংয়ের প্রায় তিন মাস আগে, পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান আফগানিস্তানের খোস্ত ও পাকতিকা প্রদেশে বোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৬ জনকে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশু ছিল। অনেক নিহত ব্যক্তি ছিল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলের শরণার্থী।

আফগান সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পাকিস্তান দাবি করে যে তারা আফগান ভূখণ্ডে অবস্থানরত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) যোদ্ধাদের টার্গেট করছে। গত দুই বছর ইসলামাবাদ কাবুলকে পাকিস্তানে হামলা চালানো ‘সন্ত্রাসী’দের আশ্রয়দাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে আসছে।

আরও পড়ুনবেলুচিস্তান কেন স্বাধীন হতে চায়১৪ মার্চ ২০২৫

এই একই যুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চলাকালে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রমণ, অপহরণ, লক্ষ্যভিত্তিক হত্যা ইত্যাদি চালাতে ব্যবহার করেছিল। এই প্রক্রিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সব চুক্তি ও নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করেছিল। তারা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে, বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেনি, যুদ্ধবন্দীদের যে অধিকার, তা–ও বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দারা বড় কোনো লক্ষ্য অর্জনের সময় বেসামরিক নাগরিকদের সক্রিয় যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করত। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণে পুরো দেশ এবং সাধারণ জনগণ মূল্য চুকিয়েছে। এখনো তা চুকাচ্ছে। কারণ, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেও, তাদের কার্যকলাপের উত্তরাধিকার এখনো বিদ্যমান।

পাকিস্তান সরকারকে এসব গোষ্ঠীর কথা শুনতে হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পথ বের করতে হবে। যে সব অঞ্চলে বিএলএ ও টিটিপি সক্রিয়, সেখানে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা স্বীকার করতে হবে।

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরব্যাপী দখলদারত্বের সময় পাকিস্তান আফগান তালিবানকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখেনি। তারা তালিবানদের আশ্রয় এবং সমর্থন অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু আজকাল পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ টিটিপি এবং বিএলএকে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে। বলে যে আফগান তালিবান সরকার ‘সন্ত্রাসবাদের’ পৃষ্ঠপোষক।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে যুক্তিসঙ্গত আলোচনা করার উপযুক্ত বিবেচনা করতে অস্বীকার করে। তাদের দাবি ও অভিযোগ শোনা উচিত, এমনটাও মনে করে না।

যে উপায়ে পাকিস্তান এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করবে, তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপ থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসবাদ’ শব্দের ব্যাখ্যা এতটাই বিস্তৃত করেছিল যে দেশ-বিদেশের মুসলিমদের সন্দেহের চোখে দেখা হতো। আফগানিস্তানে তারা আল-কায়েদা, তালিবান এবং কখনো কখনো সাধারণ আফগান নাগরিকদের শত্রু হিসেবে দেখত।

অভিযুক্ত তালিবান সদস্যদের কারাবন্দী করা এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর ফলে তালিবান যোদ্ধাদের উগ্রতাই কেবল বেড়েছে। সহিংসতা হয়েছে আরও তীব্র। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বেসামরিক এলাকাগুলোতে নির্বিচারে ড্রোন হামলা চালানো কেবল সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনই করেনি, বরং অনেক তরুণকে আফগান তালিবান ও টিটিপিতে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছে।

তালিবান বহুবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। অবশেষে ২০২১ সালে, ২০ বছরের যুদ্ধ ও দখলদারত্বে ক্লান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একে কার্যত তাদের পরাজয় মেনে নেওয়া ছাড়া আর কী বলা যায়!

আরও পড়ুনবেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি কারা, তাদের জন্ম কীভাবে?১৬ মার্চ ২০২৫

একটি আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে বাতিল করে দেওয়া সহজ। তখন তা সমাধানের আর কোনো পথও বাকি থাকে না। চলতে থাকে কেবল সহিংসতা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা দেখায়, এই পথ শেষ পর্যন্ত সফল হয় না।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। তারা টিটিপি ও বিএলএর ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার ভান করতে পারে না। কারণ, এই গোষ্ঠীগুলো তাদেরই দেশের মানুষ। তাদের স্পষ্ট অভিযোগ ও দাবি আছে।

পাকিস্তান সরকারকে এসব গোষ্ঠীর কথা শুনতে হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পথ বের করতে হবে। যে সব অঞ্চলে বিএলএ ও টিটিপি সক্রিয়, সেখানে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা স্বীকার করতে হবে। পাশাপাশি, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য তালিবান সরকারকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

যদি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করে, তাহলে তাদের ভাগ্যেও একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি হবে।

ওবায়দুল্লাহ বাহির আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন আফগানিস্তানের প্রভাষক

আল জাজিরা থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ন সরক র কর ছ ল র করত

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
  • ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন