সামাজিক অপরাধ বন্ধে আরও তৎপরতা চাই
Published: 22nd, March 2025 GMT
সামাজিক অপরাধ মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা পদক্ষেপ নিলেও তাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। ঘরে–বাইরে নানা ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে তারা, বিশেষ করে নারী ও শিশু। কিছুদিন আগে মাগুরায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়ে গেল। বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়ি পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। এটা ছিল নৃশংসতার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। যদিও আমরা মনে করি, কোনো অবস্থায় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
মাগুরার শিশু ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখ আদালতে ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজের দোষও স্বীকার করেছেন। কেবল মাগুরার ঘটনা নয়, বিভিন্ন স্থানে যেভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়ছে, তাতে যেকোনো নাগরিকেরই উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২৯৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৯৬ জন, যার মধ্যে ৪৪ জনই শিশু। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বেশি।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২টি দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ১৪টি ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুক্রবার প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, এক দিনে ধর্ষণের শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাত নারী ও শিশু। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এসব ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক গ্রুপ ইউএনএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক, যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন।
আমাদের ধারণা ছিল, মাগুরার শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে সারা দেশে যে জাগরণ তৈরি হয়েছে, তাতে শিশু ও নারী ধর্ষণের ঘটনা কমবে। কিন্তু ওপরের পরিসংখ্যান ভিন্ন চিত্রই তুলে ধরে। জুলাই অভ্যুত্থানের এক শহীদের কবর জিয়ারত করে বাড়িতে ফেরার পথে তাঁর মেয়ে ধর্ষণের শিকার হন। ঘটনাটি ঘটে ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার একটি গ্রামে। যে ব্যক্তি জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন দিলেন, তাঁর কন্যাকে এই রাষ্ট্র ও সমাজ নিরাপত্তা দিতে পারল না! সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আসামিদের বিচার করার কথা বলেছেন। কিন্তু শহীদকন্যার মর্যাদা কি আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব?
সরকার বলছে, ধর্ষণের সব ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দ্রুত বিচার করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা থামানোর জন্য সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। সব ধরনের সম্প্রচারমাধ্যম, পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনমূলক প্রচার চালাতে হবে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে, যাতে প্রস্তাবিত আইনে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময়সীমা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার আলাদাভাবে করার কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু এসব আইন তো প্রয়োগ করা হবে অপরাধ সংঘটনের পর। অপরাধটি যাতে সংঘটিত না হয়, সে বিষয়ে সরকারের কি কিছুই করণীয় নেই? আর অপরাধী ধরা পড়লেই যে শাস্তি হবে, তার নিশ্চয়তা কী? প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছিল যে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার ৩ শতাংশ অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তি পান। বাকিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যান। এসব ফাঁকফোকর বন্ধ করা প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস