নির্বাচনে বিভিন্ন দলের অবস্থান কেমন হতে পারে
Published: 23rd, March 2025 GMT
সরকার থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলার পর চায়ের দোকান বা কোনো আড্ডায় গেলেই শোনা যায়, কে জিতবে এই নিয়ে কথা। আড্ডায় পাঁড় বিএনপি সমর্থকেরা যেমন চিন্তা করেন, তাঁরা ২৮০-এর বেশি আসন পাবেন, সেদিকে অনলাইন জরিপগুলোতে আবার জামায়াত ও লীগের জয়জয়কার।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জেন–জিদের ভরসায় নতুন বাংলাদেশ ২.
এখন বিএনপির ভূমিধস জয় কতটুকু সম্ভব? আমাদের হাতে এই উপাত্ত বিশ্লেষণের দুই রকম উপায় আছে। এক, অতীতের তথ্য (হিস্টরিক্যাল ডেটা) ও সাম্প্রতিক জরিপ।
দেখে নিই, কী আছে অতীতের ডেটাতে (সব হিসাব ১৯৭২-এর পর ২০০৮ নির্বাচন পর্যন্ত, শুধু জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে ২০১৮-এর ডেটা নেওয়া হয়েছে):
ওপরের তথ্যের সঙ্গে যদি বর্তমান মাঠের অবস্থা তুলনা করা হয়, তাহলে বিএনপি এবং জামায়াত তাদের সেরা সময়ে আছে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তাদের সব থেকে খারাপ সময়ে আছে।
সেই হিসাবে বিএনপির ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ, আওয়ামী লীগের ২৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ, জামায়াতের ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির ৫ দশমিক ২২ শতাংশ যোগ করলে ৮৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ হয়। বাকি ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ থাকবে ফ্লোটিং।
এখন দেখি, জনমত জরিপ কী বলে? অনলাইনে বিভিন্ন জনমত জরিপ যদি দেখেন, সেখানে লীগ ও জামায়াত অস্বাভাবিক ভালো করছে। কিন্তু বাস্তবতা কি তা-ই বলে? আগস্টের পর আমাদের চাহিদা কি বদল হয়নি? ইনোভেশন কনসালটিংয়ের পরিচালিত ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন) এবং ভয়েস অব রিফর্মের সহযোগিতায় ৬৪টি জেলায় ১০ হাজার ৬৯৬ জনের ওপর একটা জরিপের ফল কিছুদিন আগে ঘোষণা করা হয়েছে। জরিপের ফল দেখি:
এ জরিপে জাতীয় পার্টি হারিয়ে গেছে দেখা যায়। এই অনুপাতে ভোট হলে বিএনপির ভোট হবে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা তাদের আগের সীমার কাছাকাছি। কিন্তু এটা কি নিশ্চিত? কিন্তু জামায়াত তার সেরা ফলাফলে এখনই পৌঁছে গেছে। ফলে এখন তারা এরপর যা-ই করবে, তা তাদের জন্য রেকর্ড এবং বিএনপির জন্য হুমকি। জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন হয়েছে, তাদের ভোটের অবস্থা পরের পোলগুলোতে আরও বোঝা যাবে। এ অবস্থা থেকে দলগুলার জন্য কী প্রাপ্তি?
বিএনপি: জেন-জিদের মধ্যে বিএনপির ভোট সবচেয়ে কম। বিএনপি সংবিধান তথা রাষ্ট্রের সংস্কার নিয়ে মানুষের মনে নেগেটিভ ধারণা দিচ্ছে, যা তাদের অনেক ভোটারকে অনিশ্চিত ক্যাটাগরিতে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের দলের চাঁদাবাজি কন্ট্রোল করতে হবে, দলের সংস্কার করতে হবে, যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে এবং সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া ও জেন-জিদের কাছে পৌঁছাতে হবে, যদি তারা তাদের জয় নিশ্চিত করতে চায়।
২০০৮-এর রাজনীতি এখন চলবে না, মানুষ ৩১ দফার থেকে বেশি সংস্কার আশা করে, তা বুঝতে হবে। তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র অনেকেই এ ব্যাপারে তাঁদের দলকে সতর্ক করছেন, কিন্তু দলের অন্যরা কি বুঝতে পারছেন? সময়ই বলবে।
জামায়াত: জামায়াত এখনই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমে গেছে। তারা সংস্কার নিয়ে অন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়ে তালিমের মাধ্যমে মানুষের কাছে যাচ্ছে। অনলাইনেও তাদের কর্মীরা খুব সরব, যা তাদের অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখছে মাঠে। সব ইসলামি দল যদি জোট করে, জামায়াত আরও এগিয়ে যাবে। যদিও মুক্তিযুদ্ধ এবং নারী স্বাধীনতা নিয়ে তাদের অবস্থান মানুষের চাওয়ার বিপক্ষে।
আবার এদিকে গুজব আওয়ামী লীগ তাদের ভোট জামায়াতকে দিয়ে তাদের বয়ান, ‘তারা না থাকলে দেশ মৌলবাদীদের হাতে চলে যাবে’, সেটা প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগ: আওয়ামী লীগ ভোটে থাকবে কি থাকবে না, এটা একটা বড় প্রশ্ন। যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু বলছেন না, তাঁদের একটা অংশ লীগের। সেই হিসাবে ২৪ শতাংশ ভোটব্যাংক থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। যা তাদের পরের নির্বাচনগুলোতে ভালোভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ইঙ্গিতও দেয়। ইনোভেশনের জরিপসহ বিভিন্ন অনলাইন জরিপেও লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষ সমর্থন জানায়। লীগের ব্যাপার পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিতে পারলে মানুষের ভোটিং প্যাটার্ন ক্লিয়ার হতো।
জাতীয় নাগরিক পার্টি: ভোটের রাজনীতিতে নতুন এই দল বিপুলসংখ্যক জনগণের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, তা সময়ই বলে দেবে। এরা তাদের সব শক্তি নিজেদের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং অন্য কাজে নিয়োগ করে এখনো মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। তাদের এ ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে হবে।
বাংলাদেশে সাধারণত ৭৩-৭৭ শতাংশ ভোট পড়ে। যদিও ২০০৮-এ অস্বাভাবিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ২০০৮ থেকে দেশে নতুন ভোটার ৪ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩৯ জন (যা মোট ভোটের ৩৪ শতাংশ), যাদের ভোটিং প্যাটার্ন এখনো অজানা। যে-ই পরে ক্ষমতায় আসুক, রাষ্ট্রের সংস্কার ও গতানুগতিক কাজ সমান্তরালে চালিয়ে গেলেই ৫ আগস্ট সার্থক হবে। কোনো দল যদি এখনই ভেবে নেয়, তারা ক্ষমতায় এসে যাচ্ছে, তা আসলে তাদের জন্য এত সহজ হবে না।
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট।
ই-মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অবস থ ব এনপ র র জন য দশম ক আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল
ইরানে এবার চালানো ইসরায়েলের হামলা আগের দুটি সামরিক অভিযানের তুলনায় শুধু বিস্তৃত ও তীব্রই ছিল না, এতে গত নভেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণে ব্যবহৃত কিছু কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে। এ কৌশল হলো– শুধু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত করা নয়, বরং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে হত্যা করতেও হামলা চালানো।
গতকাল শুক্রবার বিবিসির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার কৌশল ওই সংগঠনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে। একটি টেকসই পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল। তেহরানে হামলার ফুটেজে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে আঘাত হানার দৃশ্য অনেকটা বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলের আক্রমণের চিত্রের মতো, যার পরিণতিতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন।
ইরানে এত বড় কোনো ব্যক্তি নিহত হননি বলে মনে হচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। কিন্তু অভিযানের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সামরিকপ্রধান, শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে দেশটির অভিজাতদের অভূতপূর্ব ক্ষতি করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ অভিযান আরও কয়েকদিন ধরে চলতে পারে।
গত বছর ইসরায়েলে দুইবার হামলা চালায় ইরান। এবার তারা আরও তীব্র হামলা চালাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তেহরানের পক্ষে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো এতটা সহজ হবে না। সম্ভবত নেতানিয়াহু হিসাবনিকাশ করেই এ বিরোধে উস্কানি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কেন তিনি এখনই আক্রমণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন– যেটা তিনি এতদিন ধরে সমর্থন করে আসছিলেন। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়।
নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সম্প্রতি ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, তারা জানতে পেরেছেন– ইরানের কাছে কয়েক দিনের মধ্যে ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে।
ইরানে এ হামলার পেছনে ভিন্ন একটি কারণও থাকতে পারে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আগামীকাল রোববার ষষ্ঠ দফায় আলোচনা শুরু হতে চলেছে। এতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় নেতানিয়াহুর কাছে মনে হতে পারে, সম্ভাব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ চুক্তি বন্ধের এটাই উপযুক্ত সময়।
সামরিক দিক থেকে তিনি ও তাঁর উপদেষ্টারা হয়তো বুঝতে পারছেন– শুধু ইরানই নয়, বরং এ অঞ্চলে তার সহযোগী, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা আগের মতো আর হুমকি নয়। আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনে প্রমাণ হবে– এটি সঠিক, নাকি একটি বিপজ্জনক ভুল গণনা।