নগরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জলাশয় পুনরুদ্ধারে ‘বায়োসিটি’ প্রতিযোগিতা
Published: 23rd, March 2025 GMT
সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় ওয়াটারএইড বাংলাদেশ সফলভাবে শেষ করেছে ‘বায়োসিটি’ প্রতিযোগিতা। নগরের জলাশয়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারে তরুণদের সম্পৃক্ত করার জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
শনিবার বিশ্ব পানি দিবসে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিচারক প্যানেল, চূড়ান্ত প্রতিযোগিরা এবং বিশিষ্ট অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহানের উপস্থিতিতে নগর জলাশয় পুনরুদ্ধার ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাদের অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিজয়ী দল, সম্মানজনক উল্লেখযোগ্য দল এবং জনপ্রিয় পছন্দ পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন বিচারকেরা।
প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার জলাভূমিগুলোর দ্রুত অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং তরুণদের উদ্ভাবনী ও টেকসই সমাধান নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা। এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী দেড় হাজারের বেশি ব্যক্তি এতে নিবন্ধন করেন এবং তিন থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ১৪০টিরও বেশি দল তাদের উদ্ভাবনী ও টেকসই পরিকল্পনা জমা দেন।
প্রথমিক মূল্যায়নের পর ১১টি দল ঢাকায় গ্র্যান্ড ফিনালেতে অংশ নেয় গত ১৯ মার্চ। এই দলগুলো বিচারকদের সামনে তাদের প্রকল্প উপস্থাপনের সুযোগ পায়। বিচারকমণ্ডলীর নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব। অন্যান্য বিচারকদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম শামসুল আলম; বাংলাদেশে সুইডেন দূতাবাসের জলবায়ু ও পরিবেশের প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান; এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড.
পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার পর বিচারকরা নগরের জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য পুনুরুদ্ধারে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও কার্যকরী ধারণার ভিত্তিতে একটি বিজয়ী দল এবং তিনটি সম্মানজনক উল্লেখযোগ্য দল নির্বাচন করেন। কয়েকটি ধাপে বাছাই ও বিশ্লেষণ শেষে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয় ‘টিম ওয়াটারইয়ার্ড’। বিজয়ীদলের সদস্যরা হলেন মো. শহীদুজ্জামান, তাহমিদ রানা খান, আদিবা জামান, হিমেল মৌলিক এবং নাহিদুজ্জামান স্বাধীন। এছাড়াও, তিনটি দলকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। পুরষ্কার হিসেবে পদক ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি বিজয়ী দলকে এক লাখ ও বিশেষ সম্মাননাপ্রাপ্ত দলগুলোর প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। মডেল পরিকল্পনাটি সরাসরি বাস্তবায়ন করা হবে, যা তরুণ উদ্ভাবকরা তাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে এবং আইপিএইচ পুকুর পুনরুজ্জীবনে সরাসরি অবদান রাখতে সহায়তা করবে।
পাশাপাশি, আরেকটি আকর্ষণীয় অংশ ছিল ‘জনপ্রিয় পছন্দ পুরস্কার’, যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ জনগণ তাদের প্রিয় ধারণার পক্ষে ভোট দেন। নেটিজেন্দের প্রতিক্রিয়ার বিচারে বিজয়ী দলগুলো ছিল ‘ওয়াটার-ইয়ার্ড’, ‘ইকো-প্ল্যানারস’ এবং ‘টিম-ইকুইনক্স’।
বিজয়ী দল ‘ওয়াটার-ইয়ার্ড’ একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা তুলে ধরে— পুকুরের সঙ্গে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মালিকানা ও সংযোগের অভাব। তাদের পরিকল্পনায় পাঁচটি কৌশলগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং পুকুরকেন্দ্রিক জীবিকার এবং বিনোদনের সুযোগ তৈরি করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা আনয়নের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের এই পরিকল্পনাটি ঢাকার একটি পুকুরে বাস্তবায়ন করা হবে।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বাংলাদেশের নগরগুলোর ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু জীববৈচিত্র্য ও জলাধার রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের বিপুল সাড়াকে ধন্যবাদ জানান। এসময় তিনি বলেন, ‘দেশের এই অনালোচিত অথচ অত্যন্ত জরুরি সমস্যা মোকাবিলায় তরুণদের সম্পৃক্ত করাটা এখন সময়ের দাবী। প্রতিযোগিরা পরিবেশগত ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের প্রতিভা প্রকাশ করেছেন, তা আমরা স্বাগত জানাই’।
বাপার সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করে আসছিলাম, আমাদের তরুণরা কোনও বিষয় গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করে না। কিন্তু এবার নগর জলাভূমি পুনরুজ্জীবনের জন্য তারা যে উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে এসেছে, তা আমাদের ভুল প্রমাণ করেছে। এগুলো সবই মৌলিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য’।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ বব চ ত র য প রস ক র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ