৪১ জেলার ২৩১০টি জুয়েলারি ভ্যাট দেয় না
Published: 23rd, March 2025 GMT
নওগাঁর ২২০ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের কর ও ভ্যাট নিবন্ধন নেই। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করলেও সরকারকে ভ্যাট দেয় না। নওগাঁর পর সবচেয়ে বেশি রংপুর ও টাঙ্গাইলে—যথাক্রমে ২০২ ও ১৯৯টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান সরকারকে কোনো ভ্যাট দেয় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বাণিজ্য সংগঠনটি কর ও ভ্যাট নিবন্ধনবিহীন দেশের ৪১ জেলার ২ হাজার ৩১০টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা এনবিআরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহ করেছে।
জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় ১২ মার্চ এই তালিকা এনবিআরের চেয়ারম্যান মো.
সমিতির তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগের নরসিংদীর ৪৯টি, টাঙ্গাইলের ১৯৯, নারায়ণগঞ্জের ১২৪ ও গাজীপুরের ১৭টি জুয়েলার্সের ভ্যাট নিবন্ধন নেই। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহের ৩৪টি, জামালপুরের ২৪, নেত্রকোনার ২৫ ও শেরপুরের ২৫টি জুয়েলার্স ভ্যাটের কোনো নিবন্ধন নেয়নি।
চট্টগ্রামের বিভাগের ৪৪৮টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেই। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১২০টি, চাঁদপুরে ১০০, রাঙামাটিতে ১৬, ফেনীতে ৫৮, খাগড়াছড়িতে ৪, নোয়াখালীতে ৯, লক্ষ্মীপুরে ১০৩ এবং কুমিল্লায় ৩৮টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেই। রাজশাহী বিভাগের ভ্যাট নিবন্ধন নেই ৫৪১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৫টি, রাজশাহীতে ৮০, নওগাঁয় ২২০, নাটোরে ৪৬, পাবনায় ৯৩, জয়পুরহাটে ৯ ও সিরাজগঞ্জে ১৮টি।
এ ছাড়া খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরায় ২৯টি, যশোরে ১২, মাগুরায় ৩৫, ঝিনাইদহে ২১ ও কুষ্টিয়ার ১১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয় না। রংপুর বিভাগের রংপুরে ২০২টি, দিনাজপুরে ১৫, গাইবান্ধায় ৬৭, কুড়িগ্রামের ৩৭ ও লালমনিরহাটের ১২টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয় না। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে ১১৩টি, সিলেটের ৪০ ও মৌলভীবাজারের ১০টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেই।
অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের বরিশাল সদরে ভ্যাট না দেওয়া জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০২। এর বাইরে ভোলায় ৩৩, পিরোজপুরে ১৭ ও ঝালকাঠিতে ৬৮টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ভ্যাট দেয় না।
সারা দেশে প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে ভ্যাট নিবন্ধন আছে মাত্র ৮ হাজার বা ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের। তার মানে, দেশের ৮০ শতাংশ গয়নার দোকানই ভ্যাট দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের গোড়ার দিকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনার পাশাপাশি ঢাকাসহ ১৮টি জেলার সব গয়নার দোকানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বা ভ্যাট মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। এ জন্য জুয়েলার্স সমিতির কাছে এসব এলাকার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চায় সংস্থাটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমিতি ৪১ জেলার যেসব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয় না, সেই তালিকা দিয়েছে।
কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগে থেকে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারের (ইসিআর) মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করা হতো। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ভ্যাট আদায় বাড়াতে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো শুরু হয়। করোনা মহামারির কারণে সেই কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। পরে কিছুটা গতি পেলেও প্রত্যাশিত হারে ভ্যাট আদায় হচ্ছিল না। ২০২৩ সালের আগস্টে ইএফডি মেশিন বসাতে জেনেক্স ইনফোসিসের মাধ্যমে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেয় এনবিআর। প্রথম বছরে ৬০ হাজার এবং পরের পাঁচ বছরে তিন লাখ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এই মেশিন স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। তবে গত বছরের জুন পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজারের মতো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসানো হয়েছিল।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
যশোরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার আইনজীবীকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
অভিযুক্ত আইনজীবীরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি, রফিকুল ইসলাম এবং তরফদার আব্দুল মুকিত।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ওই চার আইনজীবীর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক এক এনজিওর ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই টাকা ফেরত দিতে তিনি অঙ্গীকার করে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই চেক ডিজ অনার হয় এবং একই সাথে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় মক্কেল আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
অন্যদিকে, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ওই জমির মালিককে পূর্ণাঙ্গ টাকা না দিয়ে তালবাহানা করেন। শেষমেষ আট লাখ টাকা না দেওয়ায় জমির মালিক আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
এছাড়া, রফিকুল ইসলাম নিজে আইনজীবী হয়েও আরেক আইনজীবী নুরুল ইসলামকে নির্বাহী আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম অভিযোগ দেন। অন্যদিকে, তরফদার আব্দুল মুকিত এক মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেননি। এছাড়া তিনি ওই মক্কেলের কাগজপত্র আটকে রেখে জিম্মি করে রাখেন। বাধ্য হয়ে তিনি মুকিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সমিতিতে।
এসব অভিযোগ জেলা আইনজীবী সমিতি পৃথকভাবে তদন্ত করে। একই সাথে চার আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে তাদেরকে নোটিশ দিয়ে অবগত করা হবে।”
ঢাকা/রিটন/এস