প্রায় সবকিছু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাওয়ায় আমাদের অনেকেরই শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সবকিছুই যখন ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে হয়ে যাচ্ছে, এতে অনেকের মধ্যে এক ধরনের অলসতাও তৈরি হচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রমের কাজ না করার কারণে অল্প বয়সেই অনেকের শরীরে স্থূলতা, নিদ্রাজনিত সমস্যা, হতাশা দেখা দিচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রম না করায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা চাকরির জন্য সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি বা বাংলা ব্যাকরণ, গণিত, পদার্থ, রসায়ন কিংবা মানসিক দক্ষতা বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলেও আমাদের শরীর ও মনের যে একটা সুস্থতা প্রয়োজন, তা ভুলতে বসেছি। ফলে বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের প্রয়োজন একাধিক জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়সমৃদ্ধ পাঠ্য বিষয়ের, যে বিষয় শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞান দেবে। অর্থাৎ জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান বা জীবনঘনিষ্ঠ সব বিষয়ের জ্ঞান দান করবে। অন্যদিকে ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করবে। দূর করবে হতাশা; এনে দেবে মানসিক প্রশান্তি।
এ ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট সহায়ক। যার লক্ষ্য ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও বৌদ্ধিক বিকাশ। শরীর, মন ও জীবনের পরিপূর্ণ সুস্থতা। শারীরিক শিক্ষা বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যক্তির শারীরিক বিকাশ ঘটানো ও শারীরিক সুস্থতা নির্ণয় করে। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়। পাশাপাশি সামাজিক পরিমণ্ডলে কীভাবে একজন শিক্ষার্থী বা ব্যক্তি নিজেকে মানিয়ে নেবে কিংবা নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে, তার শিক্ষা দেয় শারীরিক শিক্ষা।
বিশ্বায়নের এই যুগে একদিকে যেমন আমরা প্রযুক্তিকে অবহেলা করতে পারি না, তেমনি ছোট এই জীবনে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকেও অবহেলা করতে পারি না। উভয় ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করতে শারীরিক শিক্ষার মতো বিষয়কে শুধু বাধ্যতামূলক করা দরকার। শারীরিক শিক্ষা বিষয়কে বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা উল্লেখ করতে পারি। প্রথমত সুস্থ জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষা। অর্থাৎ ব্যক্তির সুস্থতা নিশ্চিত করতে শারীরিক শিক্ষার অংশ হিসেবে খেলাধুলা, শরীরচর্চা কিংবা বিভিন্ন শারীরিক কসরত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি সপ্তাহে শারীরিক শিক্ষার কমপক্ষে চারটি ব্যবহারিক ক্লাস এবং অন্তত দুটি তাত্ত্বিক ক্লাস থাকলে শিক্ষার্থীরা নিজেই তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে স্বশিক্ষিত হতে পারবে। এতে শিশু-কিশোররা নিজেই শরীর ও মনের যত্ন নিতে শিখবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশ পাবে সুস্থ ও সবল জাতি।
দ্বিতীয়ত, দাবি উঠেছে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দেওয়ার। প্রাচীনকালেও সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য শারীরিক শিক্ষার ব্যাপক ব্যবহার ছিল, যা তৎকালীন সময়ে দেশ রক্ষার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যদিও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এটি এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তবে এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আমরা শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের কর্মসূচির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এ প্রজন্মকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারি। অর্থাৎ শারীরিক শিক্ষার ক্লাস বৃদ্ধি করে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকের মাধ্যমেই কঠোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে, যা দেশ রক্ষার কাজে ভবিষ্যতে সাহায্য করবে নিশ্চিতভাবেই।
সুতরাং উপরিউক্ত বিষয়গুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করলেই বুঝতে পারি শিক্ষা ব্যবস্থায় শারীরিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে এখন সময় এসেছে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শারীরিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে মূল্যায়ন ও প্রতিষ্ঠিত করার।
মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র আম দ র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।
সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।
সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।
সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।
সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।
সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।
সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।