Samakal:
2025-08-01@21:56:50 GMT

শারীরিক শিক্ষা গুরুত্ব পাক

Published: 23rd, March 2025 GMT

শারীরিক শিক্ষা গুরুত্ব পাক

প্রায় সবকিছু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাওয়ায় আমাদের অনেকেরই শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সবকিছুই যখন ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে হয়ে যাচ্ছে, এতে অনেকের মধ্যে এক ধরনের অলসতাও তৈরি হচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রমের কাজ না করার কারণে অল্প বয়সেই অনেকের শরীরে স্থূলতা, নিদ্রাজনিত সমস্যা, হতাশা দেখা দিচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রম না করায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। 

আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা চাকরির জন্য সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজি বা বাংলা ব্যাকরণ, গণিত, পদার্থ, রসায়ন কিংবা মানসিক দক্ষতা বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলেও আমাদের শরীর ও মনের যে একটা সুস্থতা প্রয়োজন, তা ভুলতে বসেছি। ফলে বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের প্রয়োজন একাধিক জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়সমৃদ্ধ পাঠ্য বিষয়ের, যে বিষয় শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞান দেবে। অর্থাৎ জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান বা জীবনঘনিষ্ঠ সব বিষয়ের জ্ঞান দান করবে। অন্যদিকে ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করবে। দূর করবে হতাশা; এনে দেবে মানসিক প্রশান্তি।  

এ ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট সহায়ক। যার লক্ষ্য ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও বৌদ্ধিক বিকাশ। শরীর, মন ও জীবনের পরিপূর্ণ সুস্থতা। শারীরিক শিক্ষা বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যক্তির শারীরিক বিকাশ ঘটানো ও শারীরিক সুস্থতা নির্ণয় করে। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়। পাশাপাশি সামাজিক পরিমণ্ডলে কীভাবে একজন শিক্ষার্থী বা ব্যক্তি নিজেকে মানিয়ে নেবে কিংবা নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে, তার শিক্ষা দেয় শারীরিক শিক্ষা। 
বিশ্বায়নের এই যুগে একদিকে যেমন আমরা প্রযুক্তিকে অবহেলা করতে পারি না, তেমনি ছোট এই জীবনে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকেও অবহেলা করতে পারি না। উভয় ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করতে শারীরিক শিক্ষার মতো বিষয়কে শুধু বাধ্যতামূলক করা দরকার। শারীরিক শিক্ষা বিষয়কে বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা উল্লেখ করতে পারি। প্রথমত সুস্থ জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষা। অর্থাৎ ব্যক্তির সুস্থতা নিশ্চিত করতে শারীরিক শিক্ষার অংশ হিসেবে খেলাধুলা, শরীরচর্চা কিংবা বিভিন্ন শারীরিক কসরত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি সপ্তাহে শারীরিক শিক্ষার কমপক্ষে চারটি ব্যবহারিক ক্লাস এবং অন্তত দুটি তাত্ত্বিক ক্লাস থাকলে শিক্ষার্থীরা নিজেই তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে স্বশিক্ষিত হতে পারবে। এতে শিশু-কিশোররা নিজেই শরীর ও মনের যত্ন নিতে শিখবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশ পাবে সুস্থ ও সবল জাতি। 

দ্বিতীয়ত, দাবি উঠেছে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দেওয়ার। প্রাচীনকালেও সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য শারীরিক শিক্ষার ব্যাপক ব্যবহার ছিল, যা তৎকালীন সময়ে দেশ রক্ষার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যদিও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এটি এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তবে এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আমরা শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের কর্মসূচির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এ প্রজন্মকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারি। অর্থাৎ শারীরিক শিক্ষার ক্লাস বৃদ্ধি করে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকের মাধ্যমেই কঠোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে, যা দেশ রক্ষার কাজে ভবিষ্যতে সাহায্য করবে নিশ্চিতভাবেই।
সুতরাং উপরিউক্ত বিষয়গুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করলেই বুঝতে পারি শিক্ষা ব্যবস্থায় শারীরিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে এখন সময় এসেছে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শারীরিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে মূল্যায়ন ও প্রতিষ্ঠিত করার। 

মো.

রায়হান হোসাইন: সভাপতি, সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র আম দ র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ