মিয়ানমারকে নিয়ে ট্রাম্প এখন কী করবেন
Published: 24th, March 2025 GMT
সম্প্রতি মস্কো-ওয়াশিংটনের মধ্যে গড়ে উঠেছে এক অক্ষ। আবার রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তার রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং গণতন্ত্রকামীরা আশঙ্কা করছেন যে যুক্তরাষ্ট্র তার মিয়ানমার নীতি নিয়ে মৌলিক পরিবর্তন আসতে পারে।
জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে, যুক্তরাষ্ট্র ছিল জান্তা এবং স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের তীব্র সমালোচক এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলনের এক প্রধান সমর্থক। এখন, ট্রাম্প প্রশাসন সেসব সমর্থন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। থাই সীমান্তে থাকা মিয়ানমারের যে শরণার্থী একসময় আমেরিকার সহায়তা পেত, তারা এখন যেন এক মৃত্যুকূপে পড়ে আছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প কি আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলকে কাজে লাগানো শুরু করবে নিজের প্রয়োজনে? কাউন্সিলকে যদি আমেরিকা একঘরে করতে চায় তাহলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চীনের দিকে চলে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই।
ট্রাম্প তো মনে করেন তিনি বিভিন্ন পক্ষকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে অত্যন্ত দক্ষ। নিজেকে তিনি বলেন ‘ডিলমেকার’। যদিও এখন পর্যন্ত তাঁর বিশেষ কোনো সফলতা দেখা যায়নি। উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং-উনকেও ট্রাম, তাঁর ভাষায় ‘এনগেজ’ করতে চেয়েছিলেন। এখন মিয়ানমারের কাউন্সিলের মিন অং হ্লাইংয়ের মতোই কিম জং-উন আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। আর ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর ট্রাম্পের ‘ডিলমেকিং’ করতে গিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের জনগণের জন্য আরও লোকসানের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন যা ঘটবে, তা স্পষ্ট করে অনুমান করার উপায় নেই। তবে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী মানুষেরা, স্বাধীন সাংবাদিকেরা এবং সিভিল সোসাইটির কর্মীরা যতটা সম্ভব প্রতিকূলতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন বন্ধ করে দেবে। তা হয়তো হবে তাদের এক নতুন মিয়ানমার নীতি গ্রহণের প্রথম পদক্ষেপ। এর জন্য হয়তো আমেরিকা কাউন্সিলকে চীন থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য যা প্রয়োজন তাই করবে। এর মধ্যে সম্ভবত তেল ও গ্যাসের মতো অর্থনৈতিক সুবিধাও থাকতে পারে। ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডায় কখনোই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ছিল না। এই কথা ট্রাম্পের মুখে পুতিনের প্রতি চরম প্রশংসা এবং ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি তাঁর শীর্ষ সহযোগীদের অশ্রদ্ধা দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়।
২০০০-এর দশকের শুরুতে, তখনকার বার্মিজ জান্তা রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তারা হয়ে ওঠে রুশ সামরিক সরঞ্জাম কেনার এক বড় ক্রেতা। জান্তা এই পদক্ষেপ নিয়েছিল মূলত চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য। তারপর থেকে বিশেষ করে ২০২১ সালে নেপিডোয় সংঘটিত অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং রাশিয়ার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। মিয়ানমারের শাসকেরা একাধিকবার ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
গত মার্চ মাসের শুরুতে মিন অং হ্লাইং রাশিয়া সফরের সময় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিয়ানমারে একটি ছোট আণবিক প্ল্যান্ট নির্মাণের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন জানায়, এই প্ল্যান্টটির ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট হবে। পরে এর ক্ষমতা তিন গুণ বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার ও রাশিয়া দাওইতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সহযোগিতা নিয়ে স্মারকলিপি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে একটি বন্দর এবং তেল শোধনাগার নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এটি পরিষ্কার, মিয়ানমারে রাশিয়ার সংযুক্তি শুধু অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে নয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার প্রভাব এশিয়ায় কমে যায়। সোভিয়েত যুগের পুরোনো মিত্র রাষ্ট্রগুলো—লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া—নতুন বিদেশি বন্ধু খোঁজে। পরে পুতিন সোভিয়েত যুগের পুরোনো গৌরব পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছেন। সেই হিসেবেই এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মস্কোর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বাসযোগ্য এশীয় মিত্র। ট্রাম্প এমন কোন শক্তিকে সমর্থন করবেন, যারা মিয়ানমারে সেনাশাসনের অবসান দেখতে চায়, তার সম্ভাবনা কম।
ট্রাম্পের সম্পর্ক রাশিয়ার সঙ্গে মজবুত। ১৯৮৪ সাল থেকে তা শুরু হয়েছে ডেভিড বোগাটিন নামক একজন ব্যক্তি যখন ট্রাম্প টাওয়ারে গিয়ে ৬ মিলিয়ন ডলার নগদ রেখে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বোগাটিন ছিলেন রুশ মাফিয়ার সঙ্গে যুক্ত। যখন কোনো আমেরিকান ব্যাংক ট্রাম্পকে ঋণ দিচ্ছিল না, তখন রাশিয়া এবং সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোর ধনী ব্যক্তিদের বিনিয়োগ তাঁকে বাঁচিয়েছে।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে হেলসিংকিতে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে তিনি নিজের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কথা বিশ্বাস করেন নাকি পুতিনের। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি তো এ রকম কিছু ঘটার কোনো কারণ দেখি না।’ তিনি আমেরিকার নিজের ফেডারেল সংস্থাগুলোর চেয়ে পুতিনের ওপর বেশি আস্থা রেখেছিলেন।
২১ ফেব্রুয়ারি পলিটিকো নামের স্বনামধন্য একটি মার্কিন ডিজিটাল সংবাদপত্র এমন ২৯টি ঘটনার তালিকা করেছে, যেখানে ট্রাম্পের প্রশাসন এমন বক্তব্য এবং পদক্ষেপ নিয়েছে, যা সরাসরি পুতিনের সুবিধার জন্য নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প পুতিনের ইচ্ছা মেনে ইউক্রেনে ন্যাটো মিশন না পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে অবমাননা করেন, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে শান্তি আলোচনা থেকে বাদ দেন। এর পরিবর্তে, সৌদি আরবে রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে শর্তবিহীন বৈঠক করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সত্যিই কি যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁকা জায়গা পূর্ণ করতে পারবে? ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো এত সম্পদ নেই।তারপর এল এক বিস্ফোরক ঘোষণা। ৭ মার্চ ট্রাম্প সবাইকে চমকে দিয়ে বলেছিলেন, যদি পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তি না করেন, তাহলে তিনি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্ক আরোপের বিষয়টি ভাবছেন। কিন্তু সমালোচকেরা ওই হুমকিগুলোকে নিছক ফাঁকা হুমকি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাম্প যখন ওই হুমকিগুলো দেন, তার কয়েক ঘণ্টা পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান যে তিনি পুতিনের ওপর বিশ্বাস রাখেন।
২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প এবং তাঁর প্রতিনিধি জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে, জেলেনস্কি যখন হোয়াইট হাউসে লজ্জাজনক অভ্যর্থনা পান, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, ‘আজ, এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে মুক্ত বিশ্বের নতুন একজন নেতা প্রয়োজন। আমাদের, ইউরোপীয়দের, এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।’
কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন সত্যিই কি যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁকা জায়গা পূর্ণ করতে পারবে? ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো এত সম্পদ নেই। এই বিশ্বব্যাপী অনিশ্চিত সময়ে, এটা স্পষ্ট যে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী মানুষের সামনে আরও কঠিন সময় আসছে।
বার্টিল লিন্টনার সুইডিশ সাংবাদিক, লেখক
ইরাবতী থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র ইউক র ন আম র ক র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে সুষ্ঠু ভোটে বাধা হতে পারে
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেখানে এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার এক নতুন ধরনের হুমকি নিয়ে এসেছে। এটি শুধু প্রচলিত কারচুপির পদ্ধতিগুলোকেই আরও সফিসটিকেটেড বা কৌশলী করে তুলবে না; বরং আমাদের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি যে জনগণের বিশ্বাস, সেটিই নষ্ট করে দিতে পারে।
নির্বাচনে এআইয়ের প্রভাব কোনো কাল্পনিক গল্প নয়, এটি একটি বাস্তব ঝুঁকি। এআই-চালিত টুলগুলো ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতা বা কর্মকর্তাদের অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য ‘ডিপফেক’ (ভুয়া অডিও, ভিডিও এবং ছবি) তৈরি করা সম্ভব।
এই ডিপফেকগুলো সহজেই মিথ্যা কেলেঙ্কারি ছড়াতে পারে, যা ভোটারদের বিভ্রান্ত করে তাঁদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই-চালিত বটগুলো সেকেন্ডের মধ্যে এমন সব মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে, যা একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ব্যাপক জনসমর্থনে বা বিরোধিতায় ভূমিকা রাখতে পারে।
যখন জনগণ দেখতে পাবে, তারা যা দেখছে বা শুনছে, তার মধ্যে কোনটা আসল আর কোনটা নকল, তা বোঝা কঠিন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে সংবাদমাধ্যম, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ এবং পুরো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে সন্দেহ ঢুকে যাবে। এটি একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি।
এআই অ্যালগরিদমগুলো বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট ভোটারদের লক্ষ করে তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ ও দুর্বলতা অনুযায়ী রাজনৈতিক বার্তা পাঠাতে পারে। এই ‘মাইক্রো টার্গেটিং’-এর মাধ্যমে ভোটারদের মনোভাবকে প্রভাবিত করা বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ভোটদানের সময় বা স্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখাও সম্ভব।
আমাদের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে হলে এই নতুন প্রযুক্তির ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবেএআই শুধু মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি নির্বাচনী পরিকাঠামোর ওপর সাইবার হামলাও জোরদার করতে পারে। এআই-চালিত টুলগুলো আরও সফিসটিকেটেড ফিশিং আক্রমণ তৈরি করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে বা এমন ম্যালওয়্যার তৈরি করতে পারে, যা প্রচলিত নিরাপত্তাব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে সক্ষম। এ ধরনের আক্রমণ ভোটার ডেটাবেজ বা ভোটিং মেশিনকে লক্ষ্য করে করা যেতে পারে। সেটি নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন বা পুরো প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিপত্তির সমাধান কী? এ প্রশ্নের জবাব হিসেবে প্রথমেই মনে রাখা দরকার, এই গুরুতর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখানে এক্সপ্লেইনেবল এআই (এক্সএআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এআই মডেলের সিদ্ধান্তগুলো মানুষের কাছে বোধগম্য করে তোলে এক্সএআই। এটি এআইয়ের স্বচ্ছতা বাড়ায়।
ডিপফেক শনাক্তকরণ: এক্সএআই ব্যবহার করে এমন টুল তৈরি করা সম্ভব, যা কেবল ডিপফেক শনাক্ত করে না; বরং কেন একটি বিষয়বস্তু জাল বলে চিহ্নিত হয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেয়। এর ফলে মানব ফ্যাক্ট-চেকাররা বিশ্লেষণ যাচাই করতে পারেন এবং জনগণের আস্থা তৈরি হয়।
প্রচারণার নিরীক্ষা: এক্সএআই রাজনৈতিক প্রচারণায় এআই ব্যবহারের নিরীক্ষা করতে পারে। এটি বিশ্লেষণ করে দেখাতে পারে, কীভাবে একটি অ্যালগরিদম তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পক্ষপাতদুষ্ট বা কারসাজিমূলক টার্গেটিং কৌশলগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
নিরাপত্তা বৃদ্ধি: সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক্সএআই হুমকির শনাক্তকরণ সিস্টেমকে উন্নত করতে পারে। এটি ব্যাখ্যা করতে পারে, কেন একটি নির্দিষ্ট কার্যকলাপকে ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দ্রুত এবং কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে।
অংশগ্রহণকারীদের করণীয়: এআইয়ের হুমকি মোকাবিলায় সব গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলো এবং নেতাদের প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, তাঁরা প্রতারণামূলক এআই জেনারেটেড কনটেন্ট বা ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রচারে জড়িত হবেন না। তাঁদের উচিত এআইয়ের যেকোনো বৈধ ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকা এবং এআই জেনারেটেড কনটেন্টে সুস্পষ্ট লেবেল ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রচারে এআই ব্যবহারের বিষয়ে সুস্পষ্ট নিয়ম ও প্রবিধান তৈরি এবং প্রয়োগ করতে হবে। তাদের উচিত এআই-চালিত টুলগুলোতে বিনিয়োগ করা এবং ভোটারদের সচেতন করার জন্য বড় আকারের প্রচার চালানো।
এ ছাড়া একটি যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন দল গঠন করা প্রয়োজন, যারা নির্বাচনের আগপর্যন্ত কমিশনকে এআই এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা দেবে। তৃতীয়ত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সংবাদমাধ্যম এবং সুশীল সমাজকে এআইয়ের হুমকি সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত মোকাবিলা করার জন্য একটি সুস্পষ্ট প্রটোকল স্থাপন করা জরুরি। সংবাদমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের উচিত ফ্যাক্ট-চেকিং এবং জনগণের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
আমাদের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে হলে এই নতুন প্রযুক্তির ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। এআইয়ের ক্ষমতা যেমন বিশাল, তেমনি এর অপব্যবহারের বিপদও কম নয়।
জনগণের বিশ্বাস এবং একটি ন্যায্য নির্বাচনের অধিকার নিশ্চিত করতে এখনই আমাদের সবাইকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, বাংলাদেশ সরকারের একটি সম্মিলিত গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএনডি) দল গঠন করা। এই বিশেষজ্ঞ দল এআই-সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলো ক্রমাগত বিশ্লেষণ ও অনুমান করবে এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে।
অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন এআইয়ের সাবেক অধ্যাপক, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে অবস্থিত এআরআইটিআইয়ের সাবেক পরিচালক