কলেজ শিক্ষার্থীদের চোখে ঈদের আনন্দ
Published: 24th, March 2025 GMT
ঈদ মানে খুশি। নতুন জামা, সুস্বাদু খাবার আর পরিবার-প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি। তবে সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে তরুণদের ঈদ উদযাপনের ধরণ ও ভাবনা। শৈশবের চাঁদ দেখা, ঈদ কার্ড, মেহেদি রাঙানো- এসব স্মৃতি পেছনে ফেলে তরুণদের ঈদে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, অনলাইন শপিংয়ে নতুন পোশাক কেনা- এগুলোই যেন নতুনত্ব। বর্তমান তরুণদের কাছে ঈদের আনন্দটা ঠিক কেমন তা জানার চেষ্টা করেছে রাইজিংবিডি ডটকম। এতে মতামত দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
একালের ঈদ প্রযুক্তি নির্ভর
আরো পড়ুন:
‘যিনি সন্তানের জন্য দুইটা জামা কিনতেন, এখন কেনেন একটা’
ঈদযাত্রায় ভোগাতে পারে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক
ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলিত হওয়া। তবে সময়ের পরিবর্তনে ঈদ পালনের ধরণেও এসেছে বেশ পরিবর্তন। এক সময় ঈদের যে আবেগ-উচ্ছ্বাস ছিল, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তা আজ অনেকটাই বদলে গেছে। আগে আমরা ঈদের জামা কেনার জন্য দোকানে গিয়ে সারাদিন ঘুরতাম। নতুন কাপড়ের ঘ্রাণ ছিল ঈদের আগের রাতের আনন্দের বড় অংশ। মেহেদি পরা, ঈদের দিন খুব ভোরে গোসল করে আতর মাখা ছিল এক অন্যরকম অনুভূতি।
এখন অনলাইনে কেনাকাটা বেশি জনপ্রিয়। ঘরে বসেই ঈদের জামা, জুতো কেনা যায়। ঈদের সাজগোজও অনেক আধুনিক হয়েছে। মেকআপ ও ফ্যাশন ট্রেন্ড বদলেছে। ঈদের দিনের আগের রাত ‘চাঁদ রাত’ হয়ে গেছে ট্রেন্ডি, বন্ধুদের সঙ্গে শপিং ও হ্যাং আউট বেশি। ছোটবেলায় সবাই মিলে ঈদের নামাজের জন্য খুব সকালে উঠতাম। পাঞ্জাবি-পায়জামা বা নতুন শাড়ি পরে খোলা মাঠের ঈদগাহে যাওয়াই ছিল রীতি।
ঈদের নামাজ শেষে সবাই একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করতাম। ছোটরা বড়দের সালাম করত, বড়রা ছোটদের সালামি হিসেবে চকচকে টাকার নোট দিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ রীতি পরিবর্তন হয়েছে, এখন সালামি ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়। আত্মীয়দের বাড়িতে দাওয়াত ছিল আবশ্যিক, মেহমানদারি ছিল অন্যতম আকর্ষণ।
ঈদের শুভেচ্ছা এখন এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বা ভিডিও কলে জানানো হয়। ব্যস্ত জীবনের কারণে অনেকেই আর আত্মীয়দের বাড়ি গিয়ে দেখা করতে পারে না, ভার্চুয়াল শুভেচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, মাঠে খেলাধুলা, ঘুড়ি ওড়ানো ছিল ঈদের আনন্দের অন্যতম অংশ। বড়দের জন্য ছিল গল্পগুজব, টেলিভিশনের বিশেষ অনুষ্ঠান আর পারিবারিক মিলনমেলা।
কত পরিবর্তন! ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ঈদের বিনোদন চলে সারাদিন। ঈদের মজার মুহূর্তগুলো স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকে আপলোড করা। তবুও ঈদের আনন্দ একটাই- পরিবার, বন্ধু-বান্ধব আর আনন্দঘন মুহূর্ত।
(লেখক: মো.
বয়সের সঙ্গে রূপ বদলায় ঈদ আনন্দ
ঈদ মানে আনন্দ। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এ আনন্দের রূপও পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যেমন, শৈশবে ঈদের আগমনী বার্তা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে এক ভিন্ন আনন্দ শুরু হত। তার সঙ্গে ঈদের সালামি, নতুন জামা, নতুন খেলনা, ঈদ কার্ড কেনা ইত্যাদি আনন্দটা আরো বাড়িয়ে দেয়। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ আনন্দের রূপও অনেকটা পাল্টাতে শুরু করে। যে মনটা এক সময় ঈদে নতুন জামা, খেলনা, সালামি পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হত, সেই মনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনজনদের নতুন জামা, সালামি, খেলনা ইত্যাদি দিতে পেরে আনন্দিত হয়। এক সময় বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজে যাওয়াই ছিল আনন্দ। পরে নিজের সন্তানকে হাতে ধরে ঈদের নামাজে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে এক ভিন্ন আনন্দ খুঁজে নেয়।
আসলে জীবন এমনই বৈচিত্র্যময়। সময় ও দায়িত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের একই বিষয়ে আনন্দ পাওয়া বা প্রকাশের রূপটি নিরবে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
(লেখক: ইমরান মাহমুদ, শিক্ষার্থী, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর)
পরিবর্তনের ছোঁয়ায় নতুন রূপে ঈদ
ঈদ মানেই মিলন আর খুশির জোয়ার। দূরে থাকা পরিবারের সদস্যরা এ দিনে ফিরে আসেন আপনজনদের কাছে, শিশুরা মেতে ওঠে উচ্ছ্বাসে। চাঁদ দেখা, নতুন জামাকাপড় কেনা, হাতে মেহেদি লাগানো, টিভির বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখা, সেমাই খাওয়ার মধ্যে ছিল ঈদের এক আলাদা আনন্দ। একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়া, বড়দের কাছ থেকে সালামি পাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো—এসবই ঈদের ঐতিহ্যের অংশ ছিল।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা জানানোর জায়গা নিয়েছে মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের ডিজিটাল বার্তা। আগে মার্কেটে গিয়ে পছন্দের টুপি, পাঞ্জাবি কেনার যে উত্তেজনা ছিল, তা অনেকটাই অনলাইন কেনাকাটায় রূপ নিয়েছে।
পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, তবে ঈদের আসল সৌন্দর্য পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো সময়েই। প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়া প্রয়োজন। তবে যেন তা আমাদের আন্তরিকতার জায়গাটা দখল করে না নেয়। ঈদ মানে শুধু ডিজিটাল শুভেচ্ছা নয়, বরং একসঙ্গে হাসি-আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি ধরে রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
(লেখক: মো. সাকিব উদ্দিন, শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা)
হারিয়ে যাচ্ছে ঈদ কার্ড
ঈদ মানে হাসি-খুশি আর আনন্দ। কিন্তু পুরনো দিনের ঈদের সেই হাসি-খুশি আমেজের ছোঁয়া এখন আর নেই বললেই চলে। বাঙালির ঈদ-আনন্দের সঙ্গে একসময় জড়িয়ে ছিল ঈদ কার্ডের প্রচলন। ঈদকে সামনে রেখে গ্রাম বা শহর, একসময় সবখানেই ছিল ঈদ কার্ডের রমরমা ব্যবসা।
নানা রঙে বর্ণিল সুদৃশ্য কার্ডের ওপর লেখা থাকত ‘ঈদ মোবারক’। শুধু দোকানগুলোতেই নয়, পাড়ার ছেলেরা শামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে টেবিল সাজিয়ে বসত ঈদ কার্ড বিক্রির জন্য। কয়েক বছর আগেও ঈদের নিমন্ত্রণ বা শুভেচ্ছা বিনিময়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল ঈদ কার্ড। বাহারী রঙ আকর্ষণীয় ডিজাইন আর মন ভোলানো ভাষা সমৃদ্ধ এ কার্ডের প্রচলন এখন প্রায় নেই বললে চলে।
ঈদ কার্ডের পরিবর্তে মানুষ এখন অভিনব পদ্ধতিতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কেউ মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তায়, কেউ ফেসবুকে, কেউ টুইটারে, আবার কেউ ইমেইলের মাধ্যমে জানাচ্ছে ঈদের আমন্ত্রণ। কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইনে কৃত্রিম আন্তরিকতার বাক্য বা দৃশ্য সম্বলিত কার্ডগুলো দেখলেই মনে হয়, এগুলো নিতান্তই দায় সারার জন্য।
অথচ সুন্দর ভাষা সমৃদ্ধ আকর্ষণীয় কার্ড অনেক দোকানে পাওয়া যায়। এমনকি অর্ডার দিয়েও তৈরি করাতে পারেন শুভেচ্ছা বিনিময়কারীরা। কিন্তু আমাদের প্রত্যাহিক জীবন-যাত্রা এত যান্ত্রিক হয়ে উঠছে যে, সেখানে আবেগ অনুভূতি দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
(লেখক: উম্মে সালমা, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ)
সর্ম্পকগুলো মেকি হয়ে যাচ্ছে
ঈদ মানে আনন্দ। এক ঝাঁক কচি-কাঁচার উৎসব। ঈদকে কেন্দ্র করে থাকে নানা আয়োজন। যেমন- সেমাই, মিষ্টান্ন খাওয়া, মেহেদি দেওয়া, সালামি আদান-প্রদান, শুভেচ্ছা বিনিময় ইত্যাদি। দিনের পরিক্রমায় ঈদের আনন্দ ফিকে হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যতটা সহজ করেছে, ঠিক ততটাই দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
এক সময় ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এর মতো জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল না। প্রিয়মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য নোকিয়া বা সিম্পনির মতো বাটন ফোন ব্যবহৃত হত। শুভেচ্ছা কার্ড তৈরি করে বাড়িতে গিয়ে ঈদের দাওয়াত না দিলে বিশেষ দিনটি জমত না। রাত জেগে চিঠি বা কার্ড লিখে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়দের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া। প্রতিটি কলমের ছোঁয়ায় ছিল ভালোবাসা।
এখন দিনের পর দিন আমরা অনলাইনে থাকলেও, দীর্ঘক্ষণ নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বললেও কেউ কারো খোঁজ নেই না। সবকিছু হাতের মুঠোয় থেকেও যেন অনেক দূরে। যান্ত্রিকতার মায়াজালে আটকে যেন সর্ম্পকগুলো মেকি হয়ে যাচ্ছে। সবার মধ্যে অদৃশ্য এক দূরত্ব, ছায়াদের যেমন কাছে পেয়েও আমরা ছুতে পারি না।
(লেখক: খাদিজা আক্তার সায়মা, শিক্ষার্থী, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ)
বাঁকা চাঁদের ঈদ আনন্দ
পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর আনন্দধারা বয়ে আনে। শৈশবে ঈদের যে গাঢ় আনন্দের স্বাদ পেয়েছি, তার স্মৃতি এখনো হৃদয়ে অমলিন। ঈদ মানেই আনন্দ ভাগাভাগি, সৌহার্দ্য আর ভালোবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন।
শৈশবের ঈদ স্মৃতির পাতায় এখনো আঁকা আছে চাঁদ রাতের বিশেষ আয়োজন। মায়ের হাতে বানানো ফিরনি-মিষ্টান্ন, নতুন জামা পরে বড়দের কাছ থেকে ঈদ সালামি আদায় করার সেই মজার খুঁনসুটি। সময় বদলেছে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক রীতিরই রূপান্তর ঘটেছে। এখন মেহেদি সন্ধ্যা, ঈদ কার্ডের জায়গা নিয়েছে ভার্চুয়াল আড্ডা আর মুঠোফোনে সালাম বিনিময়।
তবুও আমি চেষ্টা করি আমার পরিবারের ছোট্ট সদস্যদের জন্য মধুর স্মৃতি তৈরি করতে। অনলাইন থেকে কারুকাজ খচিত ঈদ কার্ড আর সালামি কার্ড এনে তাদের হাতে তুলে দিই। দিন শেষে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, আনন্দ ভাগাভাগি করে ঈদুল ফিতরের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করাই আমার কাছে ঈদের আসল স্বার্থকতা।
(লেখক: মোছা. জেরিন ফেরদৌস, শিক্ষার্থী, পাইজার-বিইউপি)
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ ঈদ র আনন দ ঈদ ক র ড র ঈদ র ন ম জ আনন দ ভ গ নত ন জ ম আনন দ র এক সময় ছ ল ঈদ ঈদ ম ন র জন য র পর ব পর ব র বড়দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে