ঢাকার বাসযোগ্যতা, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও ড্যাপ
Published: 24th, March 2025 GMT
এ কথা অনস্বীকার্য, বাসযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে। এটা এমনি এমনি হয়নি। সঠিক প্ররিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সীমাহীন ব্যর্থতাই ঢাকা শহরকে বর্তমান অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ভার ঢাকা শহর আর বইতে পারছে না। তারপরও জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। কারণ, একদিকে জীবিকার সন্ধানে প্রতিদিন সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে, অন্যদিকে শহরে বসবাসরত মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। সে তুলনায় জনপরিষেবা অর্থাৎ পানি, বিদ্যুৎ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার পরিধি বাড়ছে না। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের জন্য নেই প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট। যেটুকু আছে তারও অর্ধেকের বেশি বেদখল। গণপরিবহন ব্যবস্থার কথা নাইবা বললাম। অন্যদিকে বিদ্যমান অসহনীয় যানজট, জলাবদ্ধতা ও দূষিত বাতাস পৃথিবীর কম শহরেই আছে। তারপরও একটা কথা মানতেই হবে, যে শহরে মানুষ বাস করে (ফুটপাত কিংবা অট্টালিকা), সে শহরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন ও গণপরিবহনের ব্যবস্থা থাকতেই হবে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো বিধিমালা ছিল বলে আমার জানা নেই। তবে শুনেছি, তখন নাকি টি.
২০০২ সালে রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. এমদাদুল ইসলাম একটি নতুন বিধিমালার খসড়া তৈরি করে তার ওপর মতামত প্রদানের জন্য পেশাজীবী সংগঠন আইইবি, আইএবি ও বিআইপির পাশাপাশি রিহ্যাব বরাবর পাঠান। ওই বিধিমালা প্রণয়নের প্রধান লক্ষ্য ছিল, গায়ে গা লাগিয়ে ভবন নির্মাণ বন্ধ করা। এ লক্ষ্যে ন্যূনতম ৩২.৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জমি উন্মুক্ত রেখে ভবন তৈরি করা, যার অর্ধেক অর্থাৎ ন্যূনতম ১৬.২৫ থেকে ২৫ শতাংশ জমি বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য নরম মাটি সংরক্ষিত রাখা। প্লট বিভাজন নিরুৎসাহিত করা এবং তুলনামূলক বড় আকারের প্লটের জন্য কিছু ফ্লাড এরিয়া রেশিও দিয়ে প্লট একত্রিতকরণে উৎসাহিত করা।
এই পুরো কাজ সমাপ্ত করতে প্রায় ৪ বছর লেগে যায়। এই বিধিমালা ২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল প্রথম গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর চারদিকে হইচই পড়ে যায়। অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, ঢাকা শহরের এত দামি জমির ৪০-৫০ ভাগ ছেড়ে দিতে হবে! এটি কী করে মানা যায়? ইতোমধ্যে রিহ্যাবের সভাপতি হিসেবে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হই। বিষয়টিকে সহজে বোঝানোর জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ভবনগুলোর ভিডিও ধারণ করে ওইসব কর্মসূচিতে উপস্থাপন করি।
ইতোমধ্যে ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) এর একটি খসড়াও প্রকাশিত হয়। ওই খসড়ায় ড্যাপ প্রণেতাদের বক্তব্য ছিল– ‘বহুতল ভবনে বসবাসকারীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব তৈরি হয়’; ‘অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।’ তা ছাড়া ‘ঢাকা শহরে বিদ্যমান ২০ ফুটের কম প্রশস্ত রাস্তাসমূহ প্রশস্ত করা ঠিক হবে না। কারণ তা করা হলে গাড়ি চলাচলে সুবিধা হবে এবং মানুষ বেশি বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয় করবে। ফলে ঢাকা শহরে যানজট আরও বাড়বে।’ এর চাইতেও বেশি ভয়ংকর যে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত ও গেজেটকৃত ড্যাপে (২০২২-২০৩৫) বিদ্যমান, তা হলো ‘জলাধার আইন ২০০০ না মেনে ঢাকা শহরের চারপাশের জলাভূমিকে মুখ্য জলস্রোত এবং গৌণ জলস্রোত– এই দুই ভাগে সংজ্ঞায়িত করে ভরাট করার অবাধ সুযোগ তৈরি করা হয়।’ জলাধার আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঢাকা শহরের চারদিকের জলাভূমি ভরাট করার লাইসেন্স বহাল থাকে, যা এখনও বিদ্যমান।
অবাক করার বিষয়, বিধিমালা ২০০৮, যেটি এখনও রহিত করা হয়নি। বিধিমালা ২০০৮-এর ফ্লাড এরিয়া রেশিও চার্টের পরিবর্তে ড্যাপের ফ্লাড এরিয়া রেশিও চার্ট অনুসারে রাজউক নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করে। ফলে আবাসন ব্যবসায় ধস নামার পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্পও অবর্ণনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যার প্রভাব জাতীয় রাজস্ব আদায়ের ওপরেও পড়ে। সংগত কারণেই বিগত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজউক কর্তৃক ড্যাপ ও বিধিমালা পর্যালোচনাপূর্বক যৌক্তিকীকরণের কাজ শুরু হয়, যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আশা করা যায়, অচিরেই এই সংশোধিত ড্যাপ এবং বিধিমালা অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।
প্রকৌশলী মো. আব্দুল আউয়াল: ব্যবস্থাপনা
পরিচালক, দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লি.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ গ রহণ ব যবস থ র জন য শহর র র জউক
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নে হলো দেখা
কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে।
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়।
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v