নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের ওপর হামলার ঘটনায় সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সোমবার রাত আটটা থেকে হাতিয়ার জাহাজমারা বাজারে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে হামলাকারীদের ধরতে প্রশাসনের অভিযানের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে এনসিপি নেতা-কর্মীরা সড়ক থেকে সরে যান।

এদিকে হান্নান মাসউদসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাত সোয়া ১২টার দিকে জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা শহরের জামে মসজিদ মোড় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে গণপূর্ত ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তুহিন ইমরান, জেলা সংগঠক ইয়াছিন আরাফাত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, বনি আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, ‘এ ধরনের হামলা আগে আওয়ামী লীগ করত। এখন যারা হামলা করছে, তাদের পরিণতিও আওয়ামী লীগের মতো হবে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। এখন আওয়ামী কায়দায় একটি দল মানুষের মুখে ভাষা কেড়ে নিতে চায়।’

গত সোমবার বিকেলে এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ তাঁর নিজ উপজেলা হাতিয়ার জাহাজমারা এলাকায় গণসংযোগে যান। তিনি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জাহাজমারা বাজারে একটি পথসভা করছিলেন। সভায় হান্নান মাসউদের বক্তৃতা চলাকালে কিছু ব্যক্তি পথসভায় বাধা দেন এবং একপর্যায়ে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মারধর শুরু করেন। হামলাকারীরা বিএনপির নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।

এ হামলার পর রাত আটটার দিকে হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে জাহাজমারা বাজারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে দ্বিতীয় দফায় লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা হয়। তখন আরও কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে আবদুল হান্নান মাসউদও আহত হন। হামলার মধ্যেও অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা।

হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের দল। এনসিপির সমর্থকেরা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন ঘটনাস্থলে, তখনো জাহাজমারা বাজারে হামলাকারীরা ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আবদুল হান্নান মাসউদের প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইউছুফ প্রথম আলোকে বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি বলেন, দুই দফায় সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে তাঁদের কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় যখন হামলা চালানো হয়, তখন হামলাকারীদের অনেকের হাতে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র ছিল। তাঁরা হান্নান মাসউদকে হত্যার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার হামলা করেছেন। অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও আজ জাহাজমারায় গণসংযোগ কর্মসূচি পালিত হবে।

হামলার অভিযোগের বিষয়ে জাহাজমারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.

শাহরাজ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবদুর রবের ওপর সোনাদিয়া এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জাহাজমারা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন। এ সময় হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে একটি মিছিলের সঙ্গে তাঁরা মুখোমুখি হন। তখন সেখানে দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়েছে। বিষয়টি ভুল–বোঝাবুঝি।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হামলার ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ন ন ন ম সউদ হ ন ন ন ম সউদ র অবস থ ন এনস প র কর ম র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু

৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহের পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ বিশেষ যাতায়াত সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে শাখা ছাত্রদলের কর্মী নাফিস ইকবাল পিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে এ তথ্য জানিয়ে পোস্ট দেন। একইসঙ্গে শাখা সভাপতি সাগর নাইম ও সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপুও তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে পরীক্ষার্থীদের এ সুবিধা গ্রহণের আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন:

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের জায়গা: ইউজিসি চেয়ারম্যান

ছাত্রদল জানিয়েছে, ক্যাম্পাস থেকে দুটি বাস ছাড়বে। একটি ঢাকা রুটে এবং অপরটি ময়মনসিংহ রুটে যাবে। প্রতিটি বাসে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী এই ফ্রি সার্ভিসের আওতায় যাতায়াত করতে পারবেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আগাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গুগল ফর্মের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ এই সার্ভিসের সুবিধা নিতে পারবেন না।

শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী পোস্ট দিয়ে ছাত্রদলের এ পদক্ষেপকে ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ও সময়োপযোগী উদ্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

শাখা সভাপতি সাগর নাইম তার পোস্টে বলেন, “প্রতি বছর বিসিএসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাফল্যের আলো ছড়িয়ে দেন। আমরা চাই এ সুনাম আরো দূরে ছড়িয়ে পড়ুক, আরো উজ্জ্বল হোক। এ ধারাবাহিক সাফল্যের পথে আপনাদের পাশে থাকতে, ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে মাভাবিপ্রবি ছাত্রদল ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে।”

এ বিষয়ে শাখা সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপু বলেন, “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে থাকে। গত বিসিএসে আমাদের বড় ভাই বিসিএস প্রশাসনে প্রথম হয়েছেন। এটি শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই গর্বের বিষয়। সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমরা এবার পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করেছি।”

তিনি বলেন, “বিশেষ করে অনেক নারী শিক্ষার্থী আছেন, যারা ক্যাম্পাস থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র অনেক দূরে হওয়ায় অংশ নিতে পারেন না। আবার অনেকে যানবাহন না পেয়ে দেরিতে কেন্দ্রে পৌঁছান। আমরা চাইনি কেউ যেন যাতায়াত সমস্যার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়েন। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ভাইয়ের সহায়তায় আমরা এ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি।”

ঢাকা/আবিদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ