দুই কার্গো এলএনজি আমদানি করবে সরকার
Published: 26th, March 2025 GMT
দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে ২ কার্গো এলএনজি আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স গানভর সিঙ্গাপুর প্রা.লি. ১ কার্গো এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লি. ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার ৪০০ টাকা।
সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদিত গ্যাসের পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে জি টু জি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২.
আগামী জানুয়ারি-ডিসেম্বরে স্পট মার্কেট থেকে ৫৯ কার্গো এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত বছরের নভেম্বর মাসে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর পেট্রোবাংলা ২ কার্গো এলএনজি কেনার পৃথক দুটি প্রস্তাব খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
উল্লেখ্য, ‘পিপিআর-২০০৮’-এর বিধি-৮৫ অনুযায়ী মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী ২২টি প্রতিষ্ঠানকে এলএসপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোটেশন দাখিলের জন্য ই-মেইলে পৃথক দুটি চিঠি পাঠানো হয়। ‘পিপিআয়, ২০০৮’ এর বিধি ৮৫ অনুসারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্বাক্ষরকারী ২২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা গত ১০ মার্চ চূড়ান্ত করা হয়। দর প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে দাখিলকৃত ৩টি কোটেশন দরপত্র ও প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কারিগরি ও আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নিকট দাখিল করে। দাখিলকৃত ৫টি কোটেশনের মধ্যে ৫টি কোটেশন রেসপন্সিভ হয়।
৫টি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত দর বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১ম সর্বনিম্ন প্রস্তাবিত একক দর ১৪.০৮ মা.ডলার/এমএমবিটিইউ, যা মেসার্স গানভর সিঙ্গাপুর প্রা.লি. দাখিল করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ ৩২,০০,০০০ এমএমবিটিইউ। স্বাক্ষরিত এমএসপিএ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কম-বেশি বিবেচনায় সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ হতে পারে। প্রতি এমমেবিটিইউ ১৪.০৮ মা.ডলার হিসেবে ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এএলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৪৭,৩০৮,৮০০,০০ মা. ডলার (ভ্যাট এবং এআইটি ব্যতীত)। গত ২৩ মার্চ সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মুদ্রা বিনিময় হার ১ মা.ডলার ১২২ টাকা হিসেবে এ অর্থের পরিমাণ ৫৭৭,১৬,৭৩,৬০০.০০ টাকা (ভ্যাট ও এআইটি ব্যতীত)। এলএনজি আমদানিতে ১৫% ভ্যাট ও ২% এআইটি প্রযোজ্য বিবেচনায় সর্বমোট ১৭% ভ্যাট এবং এআইট’র জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৯৮,১১,৮৪,৫১২,০০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হবে মোট (৫৭৭,১৬,৭৩,৬০০.০০ + ৯৮,১১,৮৪,৫১২,০০)=৬৭৫,২৮,৫৮,১১২.০০ টাকা (ভ্যাট ও এআইটিসহ)।
বাকি ১ কার্গো (১৬তম) এলএনজির জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান করা হলে মোট ৩টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেসার্স টোটালএনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লি. প্রতি ইউনিটের দাম ১৪.৪২ মা.ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এই এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ ৩২,০০,০০০ এমএমবিটিইউ। স্বাক্ষরিত এমএসপিএ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫% কম-বেশি বিবেচনায় সরবরাহতব্য এলএনজির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ হতে পারে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪.৪২ মা.ডলার হিসেবে ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৪৮,৪৫১,২০০,০০ মা. ডলার (ভ্যাট ও এআইটি ব্যতীত)। ২৩ মার্চ সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মুদ্রা বিনিময় হার ১ মা.ডলার ১২২ টাকা হিসেবে এ অর্থের পরিমাণ ৫৯১,১০,৪৬,৪০০,০০ টাকা (ভ্যাট ও এভাইটি ব্যতীত)।
এলএনজি আমদানিতে ১৫% ভ্যাট ও ২% এআইটি প্রযোজ্য বিবেচনায় সর্বমোট ১৭% ভ্যাট এবং এআইটি এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ১০০,৪৮,৭৭,৮৮৮.০০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩,৬০,০০০ এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হবে সর্বমোট (৫৯১,১০,৪৬,৮০০,০০+ ১০০,৪৮,৭৭,৮৮৮,০০১- ৬৯১,৫৯,২৪,২৮৮.০০ টাকা (ভ্যাট ও এআইটিসহ)। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে ২ কার্গো এলএনজি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে একহাজার ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার ৪০০ টাকা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন/জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত গ্যাসের মূল্যহার আদেশ অনুযায়ী এলএনজি চার্জ খাতে প্রাপ্ত অর্থ থেকে পেট্রোবাংলা পরিশোধ করবে।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব আমদ ন ত সরবর হ ব যত ত অন য য় ব ট ইউ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪