যেভাবে জয়পুরহাটে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখার ক্যাশিয়ারের টাকা আত্মসাৎ
Published: 26th, March 2025 GMT
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় অনলাইন স্লিপের বদলে ছাপা ভাউচার স্লিপ ব্যবহার করে অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছেন ক্যাশিয়ার। এরপর সেই টাকা গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া সার্ভারে সমস্যার কথা বলে একাধিকবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েও গ্রাহকদের হিসাব থেকে কৌশলে টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি। অনেকের স্থায়ী আমানতের টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা করেননি তিনি।
ইসলামী ব্যাংকের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখার কয়েকজন গ্রাহক ও ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। গত রোববার এজেন্ট শাখাটিতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধরে পড়ে। পুলিশ সূত্র বলছে, এজেন্ট শাখাটির ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা একাই গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আক্কেলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম রব্বানী বলেন, মাসুদ রানা গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন গতকাল মঙ্গলবার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার পর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁরা হলেন আক্কেলপুর এজেন্ট শাখার ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা, ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানা ও এজেন্ট ব্যাংকের মালিক জাহিদুল ইসলাম।
জয়পুরহাট আদালত পুলিশের পরির্দশক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের মামলার তিন আসামি গতকাল আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাঁদের জামিন দেন। ওই দিনই তাঁরা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
আরও পড়ুনজয়পুরহাটে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ২৩ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনগ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাৎ করে জমি কিনেছেন এজেন্ট ব্যাংকের ক্যাশিয়ার২৪ মার্চ ২০২৫গতকালও ইসলামী ব্যাংকের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখা বন্ধ ছিল। আতঙ্কিত গ্রাহকেরা ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখা ও আশপাশের এজেন্ট শাখায় গিয়ে হিসাব যাচাই করেছেন। গতকাল এজেন্ট শাখার সামনে ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ বুথ খোলা হয়। সেখানে ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রতারিত গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করেন। অভিযোগ বুথে থাকা প্রিন্সিপাল অফিসার জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ৩৮ জন গ্রাহকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছুটির দিন ছাড়া আরও দুই দিন অভিযোগ বুথ থাকবে। তিনি এই ৩৮ জনের খোয়া যাওয়া টাকার পরিমাণ জানাননি।
সেখানে ১০ জন গ্রাহকদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তাঁদের দাবি, খোয়া যাওয়া টাকার পরিমাণ ৬৭ লাখ। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ গ্রাহকই ছাপা ভাউচার স্লিপে ক্যাশিয়ারের কাছে টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের হিসাব নম্বরে টাকা জমা হয়নি।
আতিকুর রহমান নামের এক গ্রাহক বলেন, ভাউচার স্লিপে ক্যাশিয়ার ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাংক হিসাবে সেই টাকা জমা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট বলেন, এজেন্ট শাখায় অনলাইন স্লিপ ছাড়া ব্যাংকের ভাউচার ব্যবহার করা যাবে না—এটাই নিয়ম। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের ওই এজেন্ট শাখায় ছাপা ভাউচার ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর গ র হকদ র কর মকর ত গ র হক র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতে গতি আসবে না
শ্রম আইন এবং শ্রমিক সংগঠন গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ইস্যুর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি আগামী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশেরও উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে না। আর জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দিতে জাতিসংঘে আবেদনের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আজ সোমবার দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস আয়োজিত অর্থনৈতিক সংস্কারবিষয়ক এক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন ব্যবসায়ীরা। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ। সেমিনারে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা তাঁদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ থাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘শ্রম আইন এবং শ্রমিক সংগঠন গঠনের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কেন? তিন মাস পরই নির্বাচিত সরকার আসবে, এ বিষয়ে নির্বাচিত সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেন। এখন আমরা অর্থনৈতিক অনেক সংস্কারের কথা বলছি। কিন্তু কিচ্ছু হচ্ছে না। কোনো মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) হচ্ছে না।’
নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের যে অবস্থা, তাতে এখনই এলডিসি উত্তরণের পরিস্থিতি নেই। এরই মধ্যে আমরা ১৬টি ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, প্রয়োজনে জাতিসংঘ এসে আমাদের পরিস্থিতি তদন্ত করে দেখুক। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হোক।’
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘এখন আমাদের নির্বাচিত সরকার দরকার। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর মানুষ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না পেলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে না।’
সিরামিকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সুশাসন ছাড়া কোনো দেশের ও ব্যবসা–বাণিজ্য পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। ক্রেতারা এখন আতঙ্কিত, তারা পণ্য কিনতে চায় না। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র সমাধান নির্বাচন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যবসা সহজ করার পরিবেশ ৯৯ শতাংশ খারাপ ছিল। এখন সেটা হয়তো ৯৫ শতাংশে এসেছে। ধীরে ধীরে এটা ৯০ শতাংশ হবে এবং আরও উন্নতি হবে। কেন এটা হয় না, সেটা নিয়ে আলোচনা দরকার। বর্তমান সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করেছে। এতে দুই মাসে প্রায় ১২ লাখ সরাসরি সাক্ষাৎ কমেছে। অর্থাৎ ১২ লাখ বার এনবিআর এ কাগজ নিয়ে আসতে হয়নি।’ বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছে বলে জানান তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহীর, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান-উজ জামান, আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রমুখ।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আপনারা বেপরোয়া (ডেসপারেট) হচ্ছেন। কিন্তু যে দেশের বিমানবন্দর আগুনে পোড়ে, সেখানে কে বিনিয়োগ করবে? দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নেই।’
ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন, ব্যাংক খাতে বিগত সরকারের সময়ের মতো অবস্থা চলতে থাকলে খাতটিকে দুই বছরের বেশি টিকে থাকতে পারত না। বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের মামলা নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।