কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি, জেলেশূন্য মেঘনার অভয়াশ্রম
Published: 28th, March 2025 GMT
ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় জাটকাসহ সব ধরেনর মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে টাস্কফোর্স অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ফলে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অনেকটাই জেলে শূন্য অভয়াশ্রম এলাকা।
দুই মাসের অভিযান সফল হলে ধারাবাহিক ইলিশ উৎপাদন বাড়বে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৪৩ হাজার জেলের বসবাস। মাছ ধরাই তাদের পেশা। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক জেলেকে ৪ মাসের জন্য ১৬০ কেজি চাল খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেঘনা উপকূলীয় সদর উপজেলার আনন্দ বাজার, টিলাবাড়ি ও পুরান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নদী অনেকটাই জেলে শূন্য। কারণ হিসেবে জানা গেছে সদর ও হাইমচর উপজেলার নদীসংযুক্ত খালে মৎস্য বিভাগের লোকজন স্পীড বোট নিয়ে পাহাড়া দিচ্ছে। দিন ও রাতে এই দুই উপজেলায় ১০টি স্পীড বোট নিয়ে মৎস্য কর্মকর্তারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন।
সদরের আনন্দ বাজার এলাকার জেলে মানিক খান, হযরত আলী বকাউল, বিল্লাল দর্জি ও ইদ্রিস আলী প্রধানীয়া বলেন, ‘‘জাটকা রক্ষায় এখন আমরাই মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করি। আমরা জাটকা ধরা থেকে বিরত আছি এবং কেউ আমাদের এলাকায় জাটকা ধরতে এলে প্রশাসনকে জানাই।’’
‘‘বিগত বছরের তুলনায় এ বছর মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের অভিযান কঠোর হওয়ায় জাটকা ধরতে নামছে না জেলেরা। কারণ শুধু নিষিদ্ধ কারেন্ট জালই নয়, যে কোন জাল নদীতে ফেলা হলেই প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’ বলেন তারা।
চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, ‘‘অভয়াশ্রমে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার অর্ধেক সময় অতিবাহিত হয়েছে। এই সময়ে আমরা দিন ও রাত নদীতে অবস্থান করছি। বিভিন্ন খালের মুখে আমাদের অবস্থান থাকায় জেলেরা নামতে পারছে না। ফলে ২৪ ঘণ্টা আমরা নদী জাল ও জেলে শূন্য রেখেছি।’’
ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, ‘‘জাটকা রক্ষার জন্য দেশের পাঁচটি অভয়াশ্রমের মধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা অন্যতম। কারণ হচ্ছে সবগুলো অভয়াশ্রমে যে পরিমান জাটকা এর মধ্যে অর্ধেকই হচ্ছে চাঁদপুরে। সদর ও হাইমচর মেঘনায় এসব জাটকার বিচরণ বেশি থাকে। যে কারণে মৎস্য বিভাগ এ বছর ১০টি স্পীড বোট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করছে। তারা ২৪ ঘণ্টা নদী পাহারায় আছেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের এই কঠোর অবস্থান ও জাটকা রক্ষা করার ফলে ইলিশের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাবে।’’
অমরেশ//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মৎস য ব ভ গ উপজ ল র র এল ক য় জ টক
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।
ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’
টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’
আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’
জাতিসংঘের বিশেষ এই র্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’
ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।