হাফিজ উদ্দিন মৃধা তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন। বড় ভাই একদিন ডেকে বললেন, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। তোকে দুই ক্লাস বেশি পড়ালাম। এখন লাঙল ধর।’ ভাইয়ের এ কথা শুনে শিশু হাফিজ মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। বাবা নেই, তাই মা সেদিন কিছু করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে কলম ছেড়ে লাঙল ধরেন হাফিজ। তবে তিনি লাঙলেই ফলিয়েছেন সোনা।
এখন মাটিতে হাত দিলেই বুঝতে পারেন, কোন মাটি পেঁয়াজের। সংকরায়ণের মাধ্যমে পেয়েছেন ছয় জাতের বীজ। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ১৪ জেলায় ছড়িয়ে আছে সেই পেঁয়াজবীজের বাজার। তাঁর রয়েছে সাড়ে ৩০০ কন্টাক্ট ফারমার (চুক্তিবদ্ধ চাষি)। হাফিজ উদ্দিন (৫৭) সেই চাষিদের বপনের জন্য বীজ দেন, বিনা সুদে ঋণ দেন। তাঁদের উৎপাদিত পেঁয়াজবীজ নিয়েও চাষির দুশ্চিন্তা থাকে না। সব বীজ তিনিই নগদ টাকায় কিনে নেন। এভাবে তিনি নিজের পাশাপাশি দিন বদলে দিয়েছেন ভিটেমাটিহীন শতাধিক চাষির। কেউ জায়গাজমি কিনছেন, কেউ পাকা ঘরবাড়ি করেছেন।
সাধারণ পেঁয়াজ সহজে পচে যায়। চাতালে বেশি দিন টেকে না। একাধিক কন্দবিশিষ্ট হয়, ফেটে যায়। সংকরায়ণের মাধ্যমে পাওয়া হাফিজের বীজের পেঁয়াজ হয় এক কন্দবিশিষ্ট, এক মাপের ও চাতালে টেকে বেশি দিন। তাই চাষিরা ঝুঁকেছেন তাঁর বীজের দিকে। গত বছর হাফিজ উদ্দিনের উৎপাদিত পেঁয়াজবীজের পরিমাণ ছিল ২৯ মেট্রিক টন। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ মেট্রিক টন। তাঁর জীবনের ৩২ বছরের লড়াই তাঁকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এই কৃষকের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মেলান্দি গ্রামে।
হাফিজ উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর উৎপাদিত পেঁয়াজ ও বীজ দেখছেন স্বশিক্ষিত কৃষি বিজ্ঞানী নুর মোহাম্মদ ও বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সির কর্মকর্তারা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মো. আরিফুল। শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে তিনি ভবন থেকে পড়ে যান বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিংতম বলেন, বেলা এগারোটার দিকে কয়েকজন ওই শ্রমিককে নিয়ে আসেন। অবস্থা গুরুতর দেখে তখনই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোমিনুল করিম শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু শ্রমিক ওই ভবনে থাকেন। দুপুরের দিকে তিনি জানতে পারেন একজন শ্রমিক ভবন থেকে পড়ে গেছেন। তাঁকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে জানানো হয় ওই শ্রমিক মারা গেছেন।
তবে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর থেকে একজন রোগীকে আনা হয়েছিল। উনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন বলে জানানো হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।
শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আধা ঘণ্টা আগে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এমন একটি ঘটনা আমাদের আগে জানানো হয়নি কেন, তা জিজ্ঞাসা করেছি। বিষয়টি প্রো-ভিসি (এডমিন) দেখছেন।’