রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকায় রাস্তার ধারে তীব্র রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছেলেদের শার্ট- প্যান্ট বিক্রি করছিলেন ৬৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ তসলিম। তবে ঈদের এই ভরা মৌসুমেও তাঁর দোকানে ক্রেতার সংখ্যা নেহাত কম। মোহাম্মদ তসলিম বলেন, ‘আগুন আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে হয়ে গেছি ফুটপাতের বিক্রেতা।’

বঙ্গবাজারে প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন মোহাম্মদ তসলিম। দুই বছর আগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বঙ্গবাজার। তাতে তসলিমের মতো কয়েক শ ব্যবসায়ীকে রাতারাতি পথে বসতে হয়। সেই ক্ষয়ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেননি অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ তসলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গবাজারে আগুনে আমার ক্ষতি হয়েছিল অন্তত ৩০ লাখ টাকা। আগে ঈদ মৌসুমে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছেই প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন ফুটে (রাস্তায়) আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন না। দিনে বড়জোর ৪ থেকে ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়।’

রাজধানীতে পোশাকের অন্যতম পাইকারি ও খুচরা বিক্রির স্থান বঙ্গবাজার। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটের সব দোকান পুড়ে যায়। আগুনে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারান। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৩০৩ কোটি টাকার। এরপর তোড়জোড় শুরু হয় বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরির। রোদ-বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে ত্রিপলের ছাউনিও দেওয়া হয়। এভাবেই কিছুদিন পণ্য বিক্রি করেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। তবে তা বেশি দিন চলেনি।

বঙ্গবাজারের জায়গায় ১০ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান নির্মাণ হবে। ইতিমধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ফলে এখন আর নেই সেই বাঁশের তৈরি অস্থায়ী দোকান। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা অন্য মার্কেটে ব্যবসা সরিয়েছেন। যাঁরা অন্য স্থানে যেতে পারেননি, তাঁদের অনেকে বঙ্গবাজারের নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশেই রাস্তার ধারে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন। আবার কেউ কেউ আগুনের ক্ষতি পোষাতে না পেরে একেবারে ব্যবসা ছেড়েছেন।

সরেজমিনে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা অন্য মার্কেটে ব্যবসা সরিয়েছেন, তাঁরা বর্তমানে কিছুটা ভালো ব্যবসা করতে পারছেন। তবে বেহাল অবস্থা বঙ্গবাজারের ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের। তাঁরা ভালো ব্যবসা করতে পারছেন না; ক্ষেত্রবিশেষ লোকসান দিয়ে ব্যবসা ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে ফুটপাতে পাইকারি বেচাকেনা না হওয়ায় তাঁরা বেশি অসুবিধায় পড়েছেন।  

সরেজমিনে যা দেখা গেল

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, আগের বঙ্গবাজার মার্কেট সংলগ্ন রাস্তার পাশে ৮০ থেকে ১০০টি অস্থায়ী দোকান রয়েছে। তাঁদের সূর্যের প্রখর তাপ সয়ে ব্যবসা করতে হয়। এর ওপর ধুলাবালু ও গাড়ির হর্ন যন্ত্রণাও আছে। আর ছোট্ট দোকানে পোশাকের সমাহারও সীমিত। এসব কারণে ক্রেতা আসে কম।

ফুটপাতে দোকান বসানো মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরেও অস্থায়ী মার্কেটে তাঁর মোটামুটি ব্যবসা হতো। কিন্তু এখন মার্কেটের কাজ চলায় রাস্তায় দোকান করতে হচ্ছে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অস্থায়ী দোকানে পণ্য রাখেন না তিনি। প্রতিদিনই বাসা থেকে পোশাক বয়ে আনেন, আবার নিয়ে যান। তাতে ব্যয় হয় ২০০ টাকার মতো।

মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অস্থায়ী মার্কেটে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হতো। তবে এখন ৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতেও কষ্ট হয়।

বঙ্গবাজারে পোশাক বিক্রেতা ছাড়াও শতাধিক দর্জি বা টেইলরের (কাপড় সেলাইকারী) দোকান ছিল। অগ্নিকাণ্ডের পরে তাঁদের অনেকে স্থান পরিবর্তন করেছেন। তবে ৩০–৪০ জন দর্জি এখন ফুটপাতেই অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসেছেন। তাঁরা জানান, ফুটপাতে কাজ পান কম। ফলে তাঁদের আয়ও কম।

আবুল হোসেন নামের একজন দর্জি বলেন, ‘আগের তুলনায় এখন অর্ধেক কাজও নেই। আগে প্রতিদিন কয়েক শ শার্ট, প্যান্ট ও গেঞ্জি সেলাই করতাম। এখন তার অর্ধেক সেলাইয়ের কাজও পাওয়া যায় না।’

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ীই ব্যবসা ছেড়ে গেছেন। কেউ কেউ বিদেশে চলে যান। অনেকে এখন অন্য পেশায় আছেন।  

এদিকে বঙ্গবাজারের সামর্থ্যবান ব্যবসায়ীরা আশপাশের গোল্ডেন প্লাজা, বরিশাল প্লাজা, রোজ গার্ডেন, রোজ মেরিনাজ, সিটি প্লাজা, নগর প্লাজা, জাকের সুপার, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স ও বঙ্গ ইসলামিয়া সুপার মার্কেটে দোকান নিয়ে ব্যবসা করছেন।

তেমনই একজন নিউ মুক্তা গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন। তিনি বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ব্যবসা করেন। এতে ব্যবসা টিকে গেলেও, বেচাকেনা আশানুরূপ নয় বলে জানান তিনি। এই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রি আগের তুলনায় কম। কারণ, এখানে শুধু পরিচিত পাইকারি ক্রেতারা পণ্য কিনতে আসেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র ব যবস য় র র ব যবস য় ফ টপ ত

এছাড়াও পড়ুন:

সোনামসজিদ বন্দরে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। সোমবার (১৬ জুন) বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট থেকে আমদানি পণ্য বোঝাই ট্রাক সোনামসজিদ বন্দরের ইয়ার্ডে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মাঈনুল ইসলাম সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

এর আগে, ভারতের মহদিপুর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সার্ভারে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে পণ্যের ছাড়পত্র না পাওয়ায় গতকাল রবিবার (১৫ জুন) ভারতীয় পণ্যবাহী কোনো ট্রাক বাংলাদেশের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে প্রবেশ করেনি।

আরো পড়ুন:

সার্ভারে কারিগরি ত্রুটি, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আসেনি আমদানি পণ্য

ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু

আরো পড়ুন: সার্ভারে কারিগরি ত্রুটি, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আসেনি আমদানি পণ্য

ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের অন্যতম সোনামসজিদ স্থলবন্দরে গত ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী ভারত থেকে পণ্য আমদানি শুরু হওয়ার কথা ছিল গতকাল রবিবার। 

পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মাঈনুল ইসলাম বলেন, “রবিবার ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেয়। যে কারণে সেখানকার কর্মকর্তারা পণ্যের ছাড়পত্র দিতে পারেনি। ফলে বন্দরের আমদানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।”

তিনি আরো বলেন, ‘সার্ভার চালুর পর সোমবার বিকেলে ৩টা ৪০ মিনিট থেকে আমদানি পণ্য বোঝাই ট্রাক সোনামসজিদ বন্দরের ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। বন্দরের আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ