‘আগুন আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী হয়ে গেছি ফুটপাতের বিক্রেতা।’
Published: 28th, March 2025 GMT
রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকায় রাস্তার ধারে তীব্র রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছেলেদের শার্ট- প্যান্ট বিক্রি করছিলেন ৬৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ তসলিম। তবে ঈদের এই ভরা মৌসুমেও তাঁর দোকানে ক্রেতার সংখ্যা নেহাত কম। মোহাম্মদ তসলিম বলেন, ‘আগুন আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে হয়ে গেছি ফুটপাতের বিক্রেতা।’
বঙ্গবাজারে প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন মোহাম্মদ তসলিম। দুই বছর আগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বঙ্গবাজার। তাতে তসলিমের মতো কয়েক শ ব্যবসায়ীকে রাতারাতি পথে বসতে হয়। সেই ক্ষয়ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেননি অধিকাংশ ব্যবসায়ী।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ তসলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গবাজারে আগুনে আমার ক্ষতি হয়েছিল অন্তত ৩০ লাখ টাকা। আগে ঈদ মৌসুমে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছেই প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন ফুটে (রাস্তায়) আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন না। দিনে বড়জোর ৪ থেকে ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়।’
রাজধানীতে পোশাকের অন্যতম পাইকারি ও খুচরা বিক্রির স্থান বঙ্গবাজার। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটের সব দোকান পুড়ে যায়। আগুনে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারান। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৩০৩ কোটি টাকার। এরপর তোড়জোড় শুরু হয় বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরির। রোদ-বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে ত্রিপলের ছাউনিও দেওয়া হয়। এভাবেই কিছুদিন পণ্য বিক্রি করেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। তবে তা বেশি দিন চলেনি।
বঙ্গবাজারের জায়গায় ১০ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান নির্মাণ হবে। ইতিমধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ফলে এখন আর নেই সেই বাঁশের তৈরি অস্থায়ী দোকান। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা অন্য মার্কেটে ব্যবসা সরিয়েছেন। যাঁরা অন্য স্থানে যেতে পারেননি, তাঁদের অনেকে বঙ্গবাজারের নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশেই রাস্তার ধারে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন। আবার কেউ কেউ আগুনের ক্ষতি পোষাতে না পেরে একেবারে ব্যবসা ছেড়েছেন।
সরেজমিনে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা অন্য মার্কেটে ব্যবসা সরিয়েছেন, তাঁরা বর্তমানে কিছুটা ভালো ব্যবসা করতে পারছেন। তবে বেহাল অবস্থা বঙ্গবাজারের ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের। তাঁরা ভালো ব্যবসা করতে পারছেন না; ক্ষেত্রবিশেষ লোকসান দিয়ে ব্যবসা ধরে রেখেছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে ফুটপাতে পাইকারি বেচাকেনা না হওয়ায় তাঁরা বেশি অসুবিধায় পড়েছেন।
সরেজমিনে যা দেখা গেলসম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, আগের বঙ্গবাজার মার্কেট সংলগ্ন রাস্তার পাশে ৮০ থেকে ১০০টি অস্থায়ী দোকান রয়েছে। তাঁদের সূর্যের প্রখর তাপ সয়ে ব্যবসা করতে হয়। এর ওপর ধুলাবালু ও গাড়ির হর্ন যন্ত্রণাও আছে। আর ছোট্ট দোকানে পোশাকের সমাহারও সীমিত। এসব কারণে ক্রেতা আসে কম।
ফুটপাতে দোকান বসানো মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরেও অস্থায়ী মার্কেটে তাঁর মোটামুটি ব্যবসা হতো। কিন্তু এখন মার্কেটের কাজ চলায় রাস্তায় দোকান করতে হচ্ছে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অস্থায়ী দোকানে পণ্য রাখেন না তিনি। প্রতিদিনই বাসা থেকে পোশাক বয়ে আনেন, আবার নিয়ে যান। তাতে ব্যয় হয় ২০০ টাকার মতো।
মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অস্থায়ী মার্কেটে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হতো। তবে এখন ৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতেও কষ্ট হয়।
বঙ্গবাজারে পোশাক বিক্রেতা ছাড়াও শতাধিক দর্জি বা টেইলরের (কাপড় সেলাইকারী) দোকান ছিল। অগ্নিকাণ্ডের পরে তাঁদের অনেকে স্থান পরিবর্তন করেছেন। তবে ৩০–৪০ জন দর্জি এখন ফুটপাতেই অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসেছেন। তাঁরা জানান, ফুটপাতে কাজ পান কম। ফলে তাঁদের আয়ও কম।
আবুল হোসেন নামের একজন দর্জি বলেন, ‘আগের তুলনায় এখন অর্ধেক কাজও নেই। আগে প্রতিদিন কয়েক শ শার্ট, প্যান্ট ও গেঞ্জি সেলাই করতাম। এখন তার অর্ধেক সেলাইয়ের কাজও পাওয়া যায় না।’
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ীই ব্যবসা ছেড়ে গেছেন। কেউ কেউ বিদেশে চলে যান। অনেকে এখন অন্য পেশায় আছেন।
এদিকে বঙ্গবাজারের সামর্থ্যবান ব্যবসায়ীরা আশপাশের গোল্ডেন প্লাজা, বরিশাল প্লাজা, রোজ গার্ডেন, রোজ মেরিনাজ, সিটি প্লাজা, নগর প্লাজা, জাকের সুপার, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স ও বঙ্গ ইসলামিয়া সুপার মার্কেটে দোকান নিয়ে ব্যবসা করছেন।
তেমনই একজন নিউ মুক্তা গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন। তিনি বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ব্যবসা করেন। এতে ব্যবসা টিকে গেলেও, বেচাকেনা আশানুরূপ নয় বলে জানান তিনি। এই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রি আগের তুলনায় কম। কারণ, এখানে শুধু পরিচিত পাইকারি ক্রেতারা পণ্য কিনতে আসেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র ব যবস য় র র ব যবস য় ফ টপ ত
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।