‘পেডে দুই মুঠ ভাতই জোডে না, ঈদের সওদা করুম ক্যামনে’
Published: 29th, March 2025 GMT
‘প্রায় এক মাস ধইরা মেঘনায় মাছ ধরতে পারতাছি না। সরকার থেইকা সাহায্য-সহযোগিতাও পাই নাই। রোজগার নাই। পরিবার লইয়া খাইয়া না খাইয়া আছি। পেডে দুই মুঠ ভাতই জোডে না। ঈদের কেনাকাটা ও সওদা করুম ক্যামনে। খুব বিপাকে আছি।’
কথাগুলো বলছিলেন মর্তুজা মিয়া। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নন্দলালপুর এলাকার জেলেপল্লিতে। ১ মার্চ থেকে মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ সময় সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় ঈদ সামনে রেখে পরিবার নিয়ে কষ্টের কথা জানান তিনি। তাঁর মতো মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১২ শতাধিক জেলে পরিবারেও একই অবস্থা বিরাজ করছেন।
মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, জাটকা রক্ষায় ১ মার্চ থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মেঘনার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। দুই উপজেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে ১৪ হাজার ৮৪০ জন। মাসে ৪০ কেজি করে ভিজিএফের খাদ্যসহায়তা (চাল) পাচ্ছেন ১২ হাজার ২৯৬ জন জেলে। খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন না ২ হাজার ৫৪৪ জন জেলে। এর মধ্যে সহায়তাবঞ্চিত ইসলাম ধর্মাবলম্বী জেলে ১ হাজার ২৭২ জন।
শুক্রবার সকালে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর, আমিরাবাদ, নন্দলালপুর ও ষাটনল এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাইশপুর ও কাজিরবাজার এলাকার জেলেপাড়ায় দেখা যায়, অনেক জেলে পরিবারে ঈদের আমেজ নেই। মনমরা হয়ে আছেন পরিবারের সদস্যরা। মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এবং রোজগার না থাকায় অধিকাংশ জেলের পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। ঘরে চুলা জ্বলছে না তাঁদের। আর্থিক সমস্যায় ঈদের কেনাকাটা ও সওদা করাও বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জাল মেরামত করে সময় কাটাচ্ছেন এক জেলে। শুক্রবার সকালে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর এলাকায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাবা মারা গেছেন ৭ দিন আগে, আজ বাসচাপায় প্রাণ গেল ছেলেরও
মাত্র সাত দিন আগে বাবা মারা গেছেন। আজ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন ছেলে। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মোটরসাইকেলচালক মো. মুরাদ (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বরদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মুরাদ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা সদ্যপ্রয়াত মো. শাহজাহানের ছেলে। তিনি ঢাকার উচ্চ আদালতে কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদের ছুটিতে মুরাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা গ্রামের বাড়িতে আসেন। মুরাদ তখন ঢাকায় ছিলেন। ছুটি শেষে আজ সকালে মোটরসাইকেল চালিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের আনতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে বরদিয়া এলাকায় পৌঁছালে চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী ‘জৈনপুর এক্সপ্রেস’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে তাঁর মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মুরাদ বাসের নিচে চাপা পড়েন। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মুরাদের চাচাতো ভাই মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর (মুরাদ) বাবা মারা যান। সপ্তাহ না যেতেই আজ দুর্ঘটনায় মারা গেল মুরাদ। এত অল্প সময়ের মধ্যে পরিবারের দুজন সদস্যের মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। এ ঘটনায় পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্ত্রী-সন্তানদের আর ঢাকায় নেওয়া হলো না তাঁর। এর আগেই সব শেষ।’
মুরাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেহ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ওই বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ বা মামলা হয়নি। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে।