চিরচেনা রূপে ফিরেছে লঞ্চের ঈদযাত্রা, বরিশাল বন্দর যাত্রীদের পদচারণে মুখর
Published: 29th, March 2025 GMT
বরিশাল নদীবন্দরে ভোর নামার আগেই যাত্রীদের পদচারণে মুখর। পন্টুনে নোঙর করার মতো আর অবশিষ্ট জায়গা নেই। পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের সবচেয়ে বড় এই বন্দর জৌলুশ হারায়। যাত্রীরা ঝুঁকে পড়েন সড়কপথে। কিন্তু ঈদ ঘিরে আবার সেই চিরচেনা রূপ ফিরেছে।
আজ শনিবার ভোর ৪টায় বাঁক পার হয়ে কীর্তনখোলার বুকে উঁকি দিচ্ছিল ঢাকা থেকে যাত্রীতে ঠাসা লঞ্চগুলো। লঞ্চগুলোর অভ্যন্তরীণ আলোকসজ্জা দেখে মনে হচ্ছিল—নদীর বুকে ছোট ছোট শহর, মানুষের কোলাহল-ব্যস্ততা। ভোরের আলো ফোটার আগেই হুইসেল বাজিয়ে নোঙর করছিল একের পর এক লঞ্চ। সোয়া চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বন্দরে ফেরে অ্যাডভেঞ্চার-১, মানামী, কুয়াকাটা-২, পারাবাত-১৮, ১১, সুন্দরবন-১৫, ১৬ ও ১২। এভাবে সরাসরি সাতটি এবং ভায়া পথের আরও চারটিসহ ১১টি লঞ্চ ঘরে ফেরা যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে পৌঁছায়। বন্দরে তখন পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে অনেক কষ্টে, নির্ঘুম রাত শেষে যাত্রীরা যখন গন্তব্যে পৌঁছান তখন তাঁদের চোখে ক্লান্তির ছাপ। তবু ঘরে ফেরার আনন্দ সেই ক্লান্তি মুছে লঞ্চ থেকে কে কার আগে নেমে স্বজনদের কাছে ফিরবেন, সেই তাড়া দেখা গেল।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার চৈতা এলাকার জামাল হোসেন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। কাঁধে, হাতে বড় ব্যাগ নিয়ে লঞ্চ থেকে নামছিলেন। তিনি বললেন, ‘লঞ্চে এত ভিড় যে রাইতে একফোঁটা ঘুমাইতে পারি নাই। শরীর ক্লান্ত, খুব কষ্ট অইছে আসতে। কিন্তু অনেক দিন পর বাড়িতে যামু, সবাই মিইল্লা ঈদ করমু, হেইতে এই কষ্টরে কষ্ট মনে অয় না।’
নদীবন্দরে যাত্রীদের এই কোলাহল অনেক দিন ধরে অনুপস্থিত। তাই বন্দরে কর্মরত শ্রমিক, হকার, ভাসমান দোকানিরা কর্মব্যস্ত। একজন শ্রমিক কয়েকটি ব্যাগ মাথায় ও কাঁধে নিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘হারা বছর কাম থাহে না, ঈদের সময় যাত্রীরা লঞ্চে দ্যাশে ফেরে। মোরাও এই সময়ের লাইগা অপেক্ষা করি। মোরা গরিব, মোগোও তো ঈদ আছে, বাড়িত দুই পয়সা কামাই না হরলে ঈদ ক্যামনে অইবে?’
পবিত্র ঈদ উপলক্ষে এবার ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বিশেষ সার্ভিস চালু হয় ২৫ মার্চ থেকে। দুই ঈদে যাত্রীদের চাপ সামলাতে ঈদের আগে-পরে অতিরিক্ত লঞ্চ সংযোজন করে এই নৌপথে ঈদের বিশেষ সার্ভিস হয়। তবে এবার ঈদে অতিরিক্ত লঞ্চ চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিলেও লঞ্চমালিকেরা এটাকে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশেষ সার্ভিস বলতে চান না।
মালিকদের দাবি, পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়ায় তাঁরা লোকসানে আছেন। গত ঈদে বিশেষ সার্ভিস দিতে গিয়েও তাঁরা লোকসান গুনেছেন। তাই এবার ঈদের যাত্রী পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত লঞ্চ প্রস্তুত থাকবে আর তা চলাচল করবে যাত্রীদের ভিড়ের ওপর নির্ভর করে।
লঞ্চগুলোর অভ্যন্তরীণ আলোকসজ্জা দেখে মনে হচ্ছিল—নদীর বুকে ছোট ছোট শহর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সাবেক কাউন্সিলরের মৃত্যু
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার বলছে, পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। তবে পুলিশ বলছে, তারা অন্য কাজে এলাকায় গিয়েছিল, ওই কাউন্সিলরকে ধরতে যায়নি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে নগরের দাসপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া ওই কাউন্সিলরের নাম কামাল হোসেন (৫৫)। তিনি নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা। একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তবে দলে তাঁর কোনো পদ–পদবি ছিল না।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কামাল হোসেনের নামে চারটি মামলা হয়। তিনি এলাকায় থাকলেও গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন। পরিবারের ধারণা, মামলা থাকায় পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে কিংবা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
কামালের ছেলে সোহান শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে আমাদের এলাকায় পুলিশ এসেছিল। পুলিশ দেখে আমার বাবা তবজুল হক নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠতে যান। তখন সিঁড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মারা যান।’
নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। শুনেছি রাতে তিনি মারা গেছেন।’
ওসি বলেন, রাতে দাসপুকুর এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। তবে কামালকে ধরতে যায়নি। পুলিশ গিয়েছিল অন্য কাজে। কিন্তু পুলিশ দেখে পালাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। তখন হৃদ্রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশ পরিবারের কাছেই আছে। তারা দাফনের ব্যবস্থা করছে।