বরিশাল নদীবন্দরে ভোর নামার আগেই যাত্রীদের পদচারণে মুখর। পন্টুনে নোঙর করার মতো আর অবশিষ্ট জায়গা নেই। পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের সবচেয়ে বড় এই বন্দর জৌলুশ হারায়। যাত্রীরা ঝুঁকে পড়েন সড়কপথে। কিন্তু ঈদ ঘিরে আবার সেই চিরচেনা রূপ ফিরেছে।

আজ শনিবার ভোর ৪টায় বাঁক পার হয়ে কীর্তনখোলার বুকে উঁকি দিচ্ছিল ঢাকা থেকে যাত্রীতে ঠাসা লঞ্চগুলো। লঞ্চগুলোর অভ্যন্তরীণ আলোকসজ্জা দেখে মনে হচ্ছিল—নদীর বুকে ছোট ছোট শহর, মানুষের কোলাহল-ব্যস্ততা। ভোরের আলো ফোটার আগেই হুইসেল বাজিয়ে নোঙর করছিল একের পর এক লঞ্চ। সোয়া চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বন্দরে ফেরে অ্যাডভেঞ্চার-১, মানামী, কুয়াকাটা-২, পারাবাত-১৮, ১১, সুন্দরবন-১৫, ১৬ ও ১২। এভাবে সরাসরি সাতটি এবং ভায়া পথের আরও চারটিসহ ১১টি লঞ্চ ঘরে ফেরা যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে পৌঁছায়। বন্দরে তখন পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে অনেক কষ্টে, নির্ঘুম রাত শেষে যাত্রীরা যখন গন্তব্যে পৌঁছান তখন তাঁদের চোখে ক্লান্তির ছাপ। তবু ঘরে ফেরার আনন্দ সেই ক্লান্তি মুছে লঞ্চ থেকে কে কার আগে নেমে স্বজনদের কাছে ফিরবেন, সেই তাড়া দেখা গেল।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার চৈতা এলাকার জামাল হোসেন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। কাঁধে, হাতে বড় ব্যাগ নিয়ে লঞ্চ থেকে নামছিলেন। তিনি বললেন, ‘লঞ্চে এত ভিড় যে রাইতে একফোঁটা ঘুমাইতে পারি নাই। শরীর ক্লান্ত, খুব কষ্ট অইছে আসতে। কিন্তু অনেক দিন পর বাড়িতে যামু, সবাই মিইল্লা ঈদ করমু, হেইতে এই কষ্টরে কষ্ট মনে অয় না।’

নদীবন্দরে যাত্রীদের এই কোলাহল অনেক দিন ধরে অনুপস্থিত। তাই বন্দরে কর্মরত শ্রমিক, হকার, ভাসমান দোকানিরা কর্মব্যস্ত। একজন শ্রমিক কয়েকটি ব্যাগ মাথায় ও কাঁধে নিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘হারা বছর কাম থাহে না, ঈদের সময় যাত্রীরা লঞ্চে দ্যাশে ফেরে। মোরাও এই সময়ের লাইগা অপেক্ষা করি। মোরা গরিব, মোগোও তো ঈদ আছে, বাড়িত দুই পয়সা কামাই না হরলে ঈদ ক্যামনে অইবে?’

পবিত্র ঈদ উপলক্ষে এবার ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বিশেষ সার্ভিস চালু হয় ২৫ মার্চ থেকে। দুই ঈদে যাত্রীদের চাপ সামলাতে ঈদের আগে-পরে অতিরিক্ত লঞ্চ সংযোজন করে এই নৌপথে ঈদের বিশেষ সার্ভিস হয়। তবে এবার ঈদে অতিরিক্ত লঞ্চ চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিলেও লঞ্চমালিকেরা এটাকে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিশেষ সার্ভিস বলতে চান না।

মালিকদের দাবি, পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়ায় তাঁরা লোকসানে আছেন। গত ঈদে বিশেষ সার্ভিস দিতে গিয়েও তাঁরা লোকসান গুনেছেন। তাই এবার ঈদের যাত্রী পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত লঞ্চ প্রস্তুত থাকবে আর তা চলাচল করবে যাত্রীদের ভিড়ের ওপর নির্ভর করে।

লঞ্চগুলোর অভ্যন্তরীণ আলোকসজ্জা দেখে মনে হচ্ছিল—নদীর বুকে ছোট ছোট শহর.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসির ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠন করার নির্দেশ

বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এমন নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ।

এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফররাজ হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত করা এবং তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ

বৈঠকে কমিশন সদস্যরা জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’

‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাঁদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তাঁরা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তাঁরা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে তাঁর (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আলোচনা করেছেন, মতামত দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেখানেই গিয়েছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, “আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?” আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ