দেশের বাজারে বাড়লেও এশিয়ার বাজারে কমছে চালের দাম
Published: 29th, March 2025 GMT
এশিয়ার দেশগুলোয় চালের দাম কমছে। কম চাহিদা ও বাড়তি সরবরাহের কারণে ভারতে চালের দাম ২০২৩ সালের জুনের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডে চালের রপ্তানির মূল্য দুই বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন।
থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম টনপ্রতি ৪০৫ ডলারে নেমে এসেছে। ফলে ২০২২ সালের অক্টোবরের পর চালের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চেও দেশটিতে চালের দাম নিম্নমুখী। এ নিয়ে টানা তিন মাসে সে দেশে চালের দাম নিম্নমুখী। খবর দ্য মিন্ট
এদিকে এশিয়ার প্রধান বাজারগুলোয় চালের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। অন্তর্বর্তী সরকার চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক অনেকটাই কমিয়েছে। সরকারিভাবে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কারণ, আমদানি ততটা হয়নি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, রাজধানী ঢাকার বাজারে এক বছর আগের তুলনায় সরু চালের দাম এখন ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। মাঝারি চালের দাম কেজিতে ১৪ শতাংশ ও মোটা চালের দাম ১৫ শতাংশ বেশি। সরকার নিজে আমদানি করছে এবং বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করছে, কিন্তু চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমছে না। বাজার–সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, বোরো চাল বাজারে আসা না পর্যন্ত এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিনিকেট চালের মজুত শেষের দিকে। বোরো মৌসুমে এ চালের উৎপাদন হবে। এখন বোরো ধান কৃষকের খেতে রয়েছে। বোরোর ফলন ভালো হলে দাম কমতে পারে।
ভারতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল টনপ্রতি ৩৯৫ থেকে ৪০১ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে। চলিত মাসের শুরুতে যা ছিল ৪০৩ থেকে ৪১০ ডলার। একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নয়াদিল্লিভিত্তিক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ক্রেতা দেশগুলোর চাহিদা এখনো কম। তারা অনেকেই দাম আরও কমার অপেক্ষা করছে।’ এদিকে চলতি মাসের শুরুতে ভারত খুদ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এই মানের চাল রপ্তানি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নিষিদ্ধ ছিল। ফলে এশিয়ার বাজারে চালের দাম কমছে।
থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল টনপ্রতি ৪০৫ ডলারে স্থিতিশীল। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে চালের দামে স্থিতিশীলতার প্রধান কারণ চাহিদা কমে যাওয়া ও বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া। বাজারে বাড়তি সরবরাহ থাকলেও চালের মজুতের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।
ব্যাংককভিত্তিক এক ব্যবসায়ী দ্য মিন্টকে বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল। ভারত ও ভিয়েতনামের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে চলতি বছর থাই রপ্তানিকারকদের জন্য কঠিন হতে পারে।’ ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশটিতে চলতি সপ্তাহে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল টনপ্রতি ৪০০ ডলারে বেচাকেনা হয়েছে। আগের সপ্তাহে এটি ছিল টনপ্রতি ৩৯৪ ডলার। মেকং ডেল্টার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে কয়েক দিনের বেচাকেনায় দাম একই থাকতে পারে।’
চালের রপ্তানিমূল্য কম থাকায় ভিয়েতনাম সরকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দিতে বিশেষ আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মজুতে চাল কেনার মতো একাধিক পদক্ষেপও নিয়েছে দেশটি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে চালের দাম ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। সংস্থাটির অল রাইস প্রাইস ইনডেক্স ফেব্রুয়ারিতে ১০৫ দশমিক ৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে যা সর্বনিম্ন। চালের বড় উৎপাদন কেন্দ্রেই গত মাসে দাম কমেছে। চলতি মাসেও সেই ধারা অব্যাহত আছে।
চাল আমদানির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ। ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশ থেকে বাংলাদেশ চাল আমদানি করে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ল র দ ম কম ব যবস য় আমদ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ নেই, ৯০ কারখানায় ছুটি
সাভারের আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। কাজ বন্ধ থাকায় ডিইপিজেডের সব কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।
ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ডিইপিজেডের সব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি বলছে, বিল বকেয়া থাকায় ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ নেই, কারখানাগুলোতে ছুটি
ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ না থাকায় সব কারখানায় কর্মীদের ছুটি দেওয়া হয়।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রায় ৯০টি কারখানার ১ লাখ শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। মঙ্গলবারও যদি বিদ্যুৎ না থাকে, তাহলে সংকট আরো বাড়বে। শ্রমিকরা কাজ করতে না পারলে বিক্ষুব্ধ হবেন। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, কোনো নোটিশ ছাড়াই গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় কারখানাগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ার বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি। এ বিষয়ে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে।
কেন গ্যাস নেই, জানে না ইউনাইটেড পাওয়ার
গ্যাস বিচ্ছিন্ন করার কারণ বলতে পারেনি ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, কোনো কারণ ছাড়াই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ।
ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান বলেছেন, কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরাও এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমার জানা মতে, বকেয়া বিল নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই।
তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন বলেছেন, বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এদিকে, নিরাপত্তাঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সহায়তায় ইপিজেডের ভেতরের সড়ক বাতিসহ আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ইপিজেডে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের আশ্বাস মিলেছে বলে নিশ্চিত করেছে ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন এলাকায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের অবস্থান। এখানে পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রায় ৯০টি কারখানা আছে। এসব কারখানায় শ্রমিক প্রায় ১ লাখ।
ঢাকা/সাব্বির/রফিক