চার টাকার বিনিময়ে হাজার টাকার পণ্য পেলেন চা-শ্রমিকেরা
Published: 29th, March 2025 GMT
৪ টাকার বিনিময়ে প্রায় ১ হাজার টাকার পণ্য কেনার সুবিধা পেলেন চা-শ্রমিক ৬০টি পরিবারের সদস্য। পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে ‘ক্লিন সিটি সিলেট’ নামের একটি সংগঠন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সিলেট সদর উপজেলার দলদলি চা-বাগানে ‘৪ টাকার ঈদবাজার’ নামের এমন আয়োজন করা হয়।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে সংগঠনটি পাঁচ বছর ধরে নগরের হতদরিদ্র মানুষ, পথচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ টাকার ইফতারসামগ্রী দিয়ে আসছে। প্রতিটি প্যাকেটে প্রায় ১০০ টাকার ইফতারসামগ্রী থাকে। সেসব বিক্রি করা হচ্ছে নামমাত্র ৪ টাকায়। পরে ওই টাকার সঙ্গে নিজেরা আরও টাকা যোগ করে ঈদ উপহার বিতরণের জন্য কেনাকাটা সারেন সংগঠনের কর্মীরা।
শুক্রবার বিকেলে দলদলি চা-বাগানে ৬০টি মুসলিম চা-শ্রমিক পরিবার চার টাকা দিয়ে হাজার টাকার পণ্য কিনে। বিতরণ করা পণ্যের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, আলু, চিনি, পেঁয়াজ, ময়দা, সেমাই, দুধ ও সয়াবিন তেল। এর আগে রমজান মাস শুরু হওয়ার পর তিনটি শুক্রবার প্রায় ৮০০ পথচারী, হতদরিদ্র ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগঠনটি ৪ টাকার বিনিময়ে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করে।
চা-শ্রমিকদের ঈদসামগ্রী কেনাকাটার আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। ক্লিন সিটি সিলেটের সভাপতি নাজিব আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠান হয়। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট ভয়েসের প্রকাশক সেলিনা চৌধুরী, সাংবাদিক জয়ন্ত কুমার দাস, আয়োজক সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু তাহের, লজিস্টিক সম্পাদক তারেক রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সিলেটের চা-শ্রমিকেরা বেতন ও বোনাস না পেয়ে অসহায়ের মতো পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন যাপন করছেন। এক বেলা খেয়ে থাকলে, আরেক বেলা না খেয়ে থাকছেন। তখন ঈদ উপলক্ষে চা-শ্রমিকদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ব্যতিক্রমী এ আয়োজন অনন্য ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এমন চেষ্টা আরও প্রসারিত হোক। সবাই যদি এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসেন, তবে সত্যিকার অর্থেই একটি সমৃদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লিন সিটি সিলেট সব সময়ই মহতী কাজের মধ্যে যুক্ত থাকে। তারা রমজানের শুরু থেকে ৪ টাকায় ইফতার বিতরণ করেছে। এখন তারা মাত্র ৪ টাকায় ঈদসামগ্রী চা-শ্রমিকদের মধ্যে বিক্রি করছে। এ আয়োজন শুধু একটি সামাজিক উদ্যোগ নয়, এটি মানবতার এক অনন্যদৃষ্টান্ত। আমাদের সমাজে যাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেন, আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখেন, সেই চা-শ্রমিক ভাই-বোনদের মুখে হাসি ফোটাতে পারা, এটি সত্যিই গর্বের বিষয়।’
ক্লিন সিটি সিলেটের সভাপতি নাজিব আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক সচেতনতার পাশাপাশি সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং নিয়মিতভাবে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণের মতো আয়োজন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের সাক্ষাৎ
ঢাকাস্থ সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. মিচেল লি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ধান্যা লিঙ্গেশ, হিউ কক সিয়াং, ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মো. হাসান আব্দুল্লাহ তৌহিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
উত্তরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হামলা, আহত ৫
ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা
সাক্ষাৎকালে তারা পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যৌথ সহযোগিতামূলক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণের সম্ভাব্যতার নিয়ে আলোচনা করেন।
সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. মিচেল লি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং এর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে অবহিত করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন এবং এর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশের জন্য অতিথিদের ধন্যবাদ জানান।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এর উদ্যোগে আয়োজিত অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সিঙ্গাপুর হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. মিচেল লি ‘মেকিং ফ্রেন্ড অ্যান্ড স্টেইং রেলিভ্যান্ট: সিঙ্গাপুরস ফরেন পলিসি এক্সপ্লেইন্ড’ শীর্ষক বিশেষ বক্তব্য দেন।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অফিসের পরিচালক অধ্যাপক ড. সামসাদ মর্তুজার সভাপতিত্বে এতে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের বৈদেশিক নীতি ও কূটনৈতিক কৌশলসমূহ তুলে ধরে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. মিচেল লি বলেন, “সিঙ্গাপুর বিশ্ব রাজনীতি, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বৈশ্বিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। সিঙ্গাপুরের এই সফলতার পেছনে রয়েছে প্রাণবন্ত অর্থনীতি, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সংহতি, বৈশ্বিক বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং বিশ্বাসযোগ্য ও সামঞ্জস্যপূর্ণ অংশীদারিত্বের নীতি।”
শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতি, বাণিজ্যসহ দ্বিপাক্ষিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুর একযোগে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী