মিয়ানমারে ভূমিকম্প: বাতাসে লাশের গন্ধ ভেসে আসছে
Published: 31st, March 2025 GMT
বাতাসের প্রতিটি ঝাপটায় ভেসে আসছে লাশের গন্ধ, মিয়ানমারের সাগাইংয়ের বাসিন্দা থার এনগি সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে এ কথা বলেন।
গতকাল রোববার এনগি বলেন, ‘এখন জীবিতদের চেয়ে মৃতদেহ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’
গত শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল মিয়ানমার। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সাগাইং অঞ্চলে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কিন্তু ইরাবতী নদীর ওপর একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছিলেন না।
থার বলেন, ইরাবতী নদীর ওপর ইয়াদানাবন সেতু আবার খুলে দেওয়ার পর রোববার সকালে কাছের মান্দালয় শহর থেকে উদ্ধারকর্মীরা সাগাইংয়ে আসেন।
কাছেই আভা নামে আরেকটি সেতু ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে। প্রায় ৯০ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে এই সেতু তৈরি করা হয়েছিল।
ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩ হাজার ৪০০ জন। বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
নিখোঁজদের মধ্যে একজন থারের ছেলে। তিনি বলেন, ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের আশা তিনি প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। নগরীর অনেকে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
থার বলেন, তাঁদের এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিপরীতে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছেন ৩৬ জনকে।
সাগাইং থেকে ২২ কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মান্দালয়। প্রাচীনকালে এটি মিয়ানমারের রাজধানী ছিল। ভূমিকম্পে মান্দালয়েও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বহু অবকাঠামো ধসে পড়েছে। কিন্তু ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকর্মীরা ঠিকমতো উদ্ধারকাজ চালাতে পারছেন না। খালি হাতেই তাঁরা জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ভূমিকম্পের পর মান্দালয় এবং সাগাইংয়ের বেশির ভাগ অংশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। উভয় শহরেই রোববার তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
মিয়ানমারের অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সদস্য তেত ওয়াই রোববার ইয়াঙ্গুন থেকে মান্দালয়ে পৌঁছান।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্প: ৬০ ঘণ্টা পর চারজনকে জীবিত উদ্ধার১৫ ঘণ্টা আগেতেত ওয়াই বলেন, মান্দালয়ে তাঁরা প্রথম যেখানে উদ্ধার অভিযানে যান, সেখান থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে জীবিত মানুষের চেয়ে মৃতদেহ বেশি পাওয়া যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তবে মানুষের জীবন রক্ষায় তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন বলেও জানান তেত ওয়াই।
তেত ওয়াই বলেন, ‘আমরা যে মৃতদেহটি খুঁজে পেয়েছি, সেটি পচতে শুরু করেছে। এটা খুবই হৃদয় বিদারক। এই দুর্যোগ আমাদের পক্ষে একা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’
আরও পড়ুনপ্রাণহানি বেড়ে ১৭০০, উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি১৮ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।