পৃথিবী থেকে ২ হাজার কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে খেয়াযান ভয়েজার। ভয়েজার ১ পৃথিবী থেকে ২ হাজার ৪১৪ কোটি কিলোমিটারের বেশি দূরে আর ভয়েজার ২ এখন ২ হাজার ৯২০ কোটি কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থান করছে। শক্তি-সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে দূরবর্তী মানব-নির্মিত বস্তু হিসেবে ভয়েজার ১ ও ২ অনন্য সব রেকর্ড করছে। মহাকাশ সংস্থা নাসার ভাষ্যে, ভয়েজারের চার্জযুক্ত কণা ও মহাজাগতিক রশ্মি পরিমাপ করার যন্ত্র এই মাসের শেষের দিকে বন্ধ হয়ে যাবে। নাসা মহাজাগতিক রশ্মি অধ্যয়নের জন্য ডিজাইন করা ভয়েজার ১ যানে একটি যন্ত্র চালু করেছে। ভয়েজার ২ যানের কম-শক্তির চার্জযুক্ত কণা পরীক্ষার যন্ত্র আমাদের সৌরজগৎ ও ছায়াপথ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন আয়ন, ইলেকট্রন ও মহাজাগতিক রশ্মি পরিমাপ করে। এই মাসের শেষের দিকে তা নিষ্ক্রিয় করা হবে। নাসা জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির ভয়েজার প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুজান ডড বলেন, মিশন সম্প্রসারণের জন্য শক্তি-সংরক্ষণকারী এমন পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল।
১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপণ করা যমজ মহাকাশযান বর্তমানে আন্তনাক্ষত্রিক মহাকাশে তারার মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে। ভয়েজার ১ বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের বেশ কয়েকটি চাঁদের চারপাশে পাতলা বলয় আবিষ্কার করেছে। ভয়েজার ২ যান একমাত্র মহাকাশযান, যা ইউরেনাস ও নেপচুন পরিদর্শন করেছে। প্রতিটি মহাকাশযানের কাছে এখনো সূর্যের প্রতিরক্ষামূলক ঢাল ও মহাকাশের বিস্তৃতি অধ্যয়ন করার জন্য তিনটি করে যন্ত্র রয়েছে। উৎক্ষেপণের পর থেকে ভয়েজাররা গভীর মহাকাশ রক স্টার হিসেবে কাজ করে আসছে। এই যন্ত্র যত দিন টিকবে, আমরা ততটা সম্ভব তা নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। যদিও এসব যন্ত্রের বৈদ্যুতিক শক্তির ক্ষমতা কমছে। আমরা যদি দুই ভয়েজারের একটি যন্ত্র বন্ধ না করি, তাহলে আরও কয়েক মাস বিদ্যুৎ থাকবে। তখন আমাদের মিশনের সমাপ্তি ঘোষণা করতে হবে।
দুটি মহাকাশযান ১০টি বিজ্ঞান যন্ত্র বহন করছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত কিছু যন্ত্র সৌরজগতের অনুসন্ধান শেষ করার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিজ্ঞানীরা এই যানের মাধ্যমে সৌরজগতের হেলিওস্ফিয়ার নিয়ে গবেষণা করার লক্ষ্য নিয়েছিলেন। সৌর বায়ু ও চৌম্বক ক্ষেত্রের একটি প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হেলিওস্ফিয়ার ও তার বাইরের অঞ্চলের আন্তনাক্ষত্রিক স্থান অধ্যয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ভয়েজার পাঠানো হয়েছিল। গত অক্টোবরে শক্তি সংরক্ষণের জন্য ভয়েজার ২ যানের প্লাজমা যন্ত্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই যন্ত্র প্লাজমার চার্জযুক্ত পরমাণুর পরিমাণ ও প্রবাহিত পরিমাপ করে। বিজ্ঞানী প্যাট্রিক কোহেন বলেন, ভয়েজার মহাকাশযান বাইরের গ্রহ অধ্যয়ন করার চেয়ে অনেক বেশি দূরে চলে গেছে। আমরা যে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করেছি, তা কেবল হেলিওফিজিকসের জন্য মূল্যবান ও বোনাস। প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে চালু হওয়া যন্ত্র আজও সক্রিয়।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভয় জ র
এছাড়াও পড়ুন:
সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহের প্রথম ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি
বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে ১০ গুণ বড় ‘ওয়াস্প-১৮ বি’ নামের দৈত্যকার একটি দূরবর্তী গ্যাসীয় গ্রহের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তথ্য ব্যবহার করে এবারই প্রথম সৌরজগতের বাইরে থাকা কোনো গ্রহের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, এই যুগান্তকারী মানচিত্র গ্রহ বিজ্ঞানের একটি বড় পদক্ষেপ। সূর্যের বাইরের অন্য কোনো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র এর আগে তৈরি করা হয়নি। মানচিত্র তৈরির এ কৌশল ব্যবহার করে মহাবিশ্বে আবিষ্কৃত ছয় হাজারের বেশি বহির্গ্রহকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।
বহির্গ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ অনেক দিনের। সৌরজগতের বাইরের নানা ধরনের গ্রহ দেখা যায়। কিছু গ্রহ আছে যাদের দুষ্টু গ্রহ বলা হয়। এসব গ্রহ কোনো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে না। মহাবিশ্বে অনেকটা স্বাধীনভাবে বা বন্ধনহীনভাবে ভেসে বেড়ায়। নাসার এক্সোপ্ল্যানেট সায়েন্স ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ২৮টি বহির্গ্রহ শনাক্ত করা হয়েছে। আরও প্রায় আট হাজার বহির্গ্রহ গ্রহের মর্যাদার পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, থ্রিডি ইক্লিপস ম্যাপিং কৌশল ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক মানচিত্রটি তৈরি করেছেন। এই প্রক্রিয়া স্পেকট্রোস্কোপিক ইক্লিপস ম্যাপিং নামেও পরিচিত। এর আগে বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তথ্য ব্যবহার করে বহির্গ্রহের টুডি বা দ্বিমাত্রিক মডেল তৈরি করেছিলেন। বিভিন্ন বহির্গ্রহ পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণ করা বিজ্ঞানীদের জন্য কঠিন বলে নতুন ত্রিমাত্রিক মানচিত্র বেশ উপকারী হবে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে আবিষ্কৃত ওয়াস্প-১৮ বি গ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের উপস্থিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী রায়ান চ্যালেঞ্জার বলেন, ‘টেলিস্কোপ ও এই নতুন কৌশলটির মাধ্যমে আমরা আমাদের সৌরজগতের প্রতিবেশীদের মতোই বহির্গ্রহকে বোঝার সুযোগ পাব।’
সূত্র: স্পেস ডট কম