রাজবাড়ীর কালুখালীতে পুনর্মিলনী, নবীনবরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব কালুখালীর উদ্যোগে বুধবার বিকেলে কালুখালী সরকারি কলেজ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি নবীন প্রবীণের মিলনমেলায় পরিণত হয়, যেখানে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকরাও ছিলেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তারা হারিয়ে যান শৈশবে। একই সঙ্গে সংগঠনকে গতিশীল করার কথাও বলেন তারা।

কালুখালী উপজেলার বাসিন্দা যারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি কার্যালয়ে চাকরি করছেন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন কিংবা সদ্য ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন এমন ২৫০ জন যোগ দেন এ অনুষ্ঠানে। তাদের মধ্যে ছিলেন ফরিদপুর ইয়াছিন কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক খান, ফরিদপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল আলম খান, কালুখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ খান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর নাসির উদ্দিন, ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কামাল হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আশরাফুল আলম, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফ আলী খান, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রশিদ, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফজলুল হক গোলাপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আহাদ আলী, সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল আন্ড কলেজের শিক্ষক এমডি ইমরান হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের অতিথি দৈনিক সমকালের প্রকাশক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই অনুষ্ঠানে এসে আমি মুগ্ধ। অনেক মেধাবীর সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে। নিশ্চয় তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করি। চেষ্টার ভেতর থেকে যতদূর সফল হতে পারি। শিক্ষার্থীদের তিনি সমকালের শিক্ষা পাতায় লেখার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা অনেক। আমরা সাধারণ মানুষের ট্যাক্সে পড়াশোনা করেছি। আমরা শুধুমাত্র পরিবারের জন্য কাজ করব না, দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করব।

ফরিদপুর ইয়াছিন কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক খান বলেন, ১৯৮৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা গিয়েছি। নিভৃত পল্লী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। অর্থের জন্য পড়াশোনা থেমে থাকেনি। আমাদের সময় কোনো কোচিং ছিল না। তবুও আমরা এগিয়ে গেছি। অনেক অনেক মেধাবীদের সমন্বয়ে গড়া এ সংগঠন নিশ্চয় থেমে যাবে না। অনেক দূর এগিয়ে যাবে। 

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে ফরিদপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল আলম খান বলেন, আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম তখন নিমতলায় একটা ঘাট ছিল। এখন সেখানে ব্রিজ হয়েছে। ওই সময় বাড়ি থেকে হেঁটে রতনদিয়া হাই স্কুলে যেতাম। সকাল বেলা প্রাইভেট পড়তে যেতাম বোয়ালিয়ায় অমল স্যারের কাছে। এখন যেখানে হেলথ কমপ্লেক্স মাঠ। সেখানে কোনো ফসল ভালো হতো না। তখন আমি চিন্তা করতাম এই জনপদের কি উন্নতি হবে না, এমনই থাকবে? এখন কালুখালী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ওই জায়গাটি।  

নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে বক্তৃতা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী প্রেয়সী পাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমন বিশ্বাস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র আল আমিন হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র আহাদ আলী, শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।

তারা বলেন, পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব কালুখালী নামের এই সংগঠনটি ভালো কাজের মাধ্যমে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে- এটি আমাদের প্রতাশা। এর সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তারা সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করলে অনেক ভালো কাজ করা সম্ভব। নবীন শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা নবীন প্রবীণের মধ্যে একটি দৃঢ়বন্ধন তৈরি করার জন্য এ আয়োজন করেছি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মনিরুল ইসলাম উজ্জল। আলোচনা সভা শেষে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগপ্রাপ্ত ২০ জন শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র জন য প বল ক ক জ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

রাবেয়া বেগম আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার বেড়াগামী আলহামরা পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন। গন্তব্যের ২০ কিলোমিটার আগে পৌঁছার পর জানতে পারেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হয়ে পাবনার বাস যেতে পারবে না। শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডের অনেক আগে তালগাছি এলাকায় সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে বেড়ায় পৌঁছাতে হয়।

পাবনা ও শাহজাদপুরের অনেক যাত্রীকে আজ রোববার দিনভর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের কারণ, পাবনা ও শাহজাদপুর বাসমালিকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব। আজ সকাল থেকে দুই এলাকার বাস চলাচল আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। পাবনা থেকে শাহজাদপুর হয়ে ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে শাহজাদপুর থেকেও পাবনার দিকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।

বাসমালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে চলতি বছরেই অন্তত চারবার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। আর গত সাত-আট বছরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল অন্তত ৩০ বার। একবার বাস চলাচল বন্ধ হলে তা চালু হতে সময় লেগেছে পাঁচ দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত।

বাসমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি ও পাবনার নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রুট ও সময়সূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। পাঁচ-ছয় দিন আগে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির লোকজন শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির মালিকানাধীন নবীনবরণ পরিবহন নামের একটি বাস আটকায়। এর প্রতিবাদে শাহজাদপুরের বাসমালিকেরা নগরবাড়ী সমিতির মালিকানাধীন বাসগুলো চলাচলে বাধা দেন। ঘটনার জেরে গতকাল শনিবার পাবনার দাশুড়িয়ায় নবীনবরণ পরিবহনের একটি বাস আটকে রাখে পাবনা বাসমালিক সমিতি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আজ সকালে শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পাবনার সড়ক দিয়েও শাহজাদপুরের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাবনা ও শাহজাদপুর উভয় সমিতির দুই শতাধিক বাস আজ সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরাও।

এদিকে পাবনা থেকে বেড়া হয়ে ঢাকাগামী বেশির ভাগ পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দু–একটি বাসের কাউন্টার খোলা থাকলেও সেসব বাস বেড়া থেকে যাত্রী নিয়ে কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে অথবা নাটোরের বনপাড়া হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।

পাবনা এক্সপ্রেস পরিবহনের বেড়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘শাহজাদপুর হয়ে পাবনার কোনো বাস যেতে না পারায় আমাদের বাসগুলো হয় ফেরি হয়ে, না হয় নাটোরের বনপাড়া ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।’

শাহজাদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাবনা ও নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতি আমাদের বাস চলাচলে বাধা দেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি উভয় মালিক সমিতিরই ক্ষতি হচ্ছে। দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে আশা করি সমাধানের পথ পাওয়া যাবে।’

পাবনা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোমিন মোল্লা বলেন, ‘শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির লোকজন প্রায় এক মাস ধরে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির বাসগুলো শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। আজ থেকে তারা পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দিল। শাহজাদপুর মালিক সমিতি ছোটখাট যেকোনো ব্যাপার হলেই তাদের এলাকার ওপর দিয়ে পাবনার বাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা