বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কথা বিভিন্ন কারণে খবরের শিরোনামে আসে। সেখানে নির্বাচনের সময় দুই প্রধান দলের মধ্যে হয় তুমুল লড়াই। আবার শোনা যায় যে কর সুবিধার জন্য অনেক ধনী মানুষ বা উচ্চ আয়ের কর্মকর্তারা সেখানে বসতি দেখান। তারই সাম্প্রতিক উদাহরণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সেখানে গীতশ্রী এবং আমার প্রথম যাত্রার (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২) কয়েকদিন আগে হারিকেন ইয়ান চোখ রাঙাতে শুরু করল। তবে ফ্লাইটের আগের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে বুঝলাম যে ঝড়টি যাবে উত্তর-পশ্চিম উপকূলের দিকে আর আমাদের গন্তব্য– বোকা রেটন ও তার কাছের এয়ারপোর্ট ফোর্ট লাউডারডেল দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দিকে। অন্যদিকে ডেলটা এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইট অন টাইম দেখিয়ে যাচ্ছে।
আমরা সৃষ্টিকর্তার নাম করে রওয়ানা দিয়ে দিলাম– যদিও অনেকেই শুনে বলেছিল, তোমরা এ দুর্যোগে সেখানে যাচ্ছ! কিন্তু আমরা যাচ্ছিলাম আমার বড় বোন আর দুলাভাইকে (যাঁকে আমরা বাচ্চুভাই ডাকি) দেখতে– করোনার কারণে যাদের সাথে আমাদের প্রায় তিন বছর দেখা হয়নি। সুতরাং ফ্লাইট গেলে আমরাও যাবো– এরকমই ছিল আমাদের মত।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস ঠিকঠাক হলে কী সুবিধে তার নিদর্শন পেলাম ২৭ সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্ক থেকে ফ্লাইট যথাসময়ে উড়ে সামান্য দেরিতে হলেও নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেল গন্তব্যে। আমাদের ভাগ্য এবং সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে প্লেন থেকে বের হলাম। আপা এবং বাচ্চুভাই এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং তাদের সাথে সেখানেই দেখা হয়ে গেল, আর তাদের বাড়ি পর্যন্ত বাইশ মাইল পথ আরামে এবং গল্পগুজবে দ্রুত কেটে গেল। পরের দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হারিকেন পশ্চিম উপকূলের ট্যাম্পা, ফোর্ট মেয়ার্স, এসব এলাকায় আঘাত করবার কথা। বোকা রেটনের আকাশ একটু মেঘলা আর বাতাসে তেজ থাকলেও তেমন সিরিয়াস কিছু মনে হলো না। সুতরাং আমরা দুপুরের একটু আগে লাঞ্চ খাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।
বাড়ির কাছেই কিছু দোকানপাট, আর সেখানে সুন্দর একটি ফরাসি ধরনের কাফে। আমরা প্রথমে কফি খেয়ে তারপর খাবার অর্ডার করলাম। খাওয়া প্রায় শেষ, আর তখনই আমার পেছন দিকের এক টেবিল থেকে ‘ধন্যবাদ’ শব্দটি শুনলাম । গীতশ্রীর মুখে মুচকি হাসি দেখে বুঝলাম যে ওর দিকে লক্ষ্য করেই শব্দটি পাঠানো হয়েছে। সাথে সাথেই অন্যরাও মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম প্রেরকের দিকে। শুরু হয়ে গেল আলাপ। নাম মার্ক লাইবারম্যান। আমরা বাংলাদেশের মানুষ শুনতে তিনি উৎসাহী হয় জানতে চাইলেন দেশটির ইতিহাস। কেন আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা চাইলাম। তাহলে কি পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়াটা ভুল ছিল?
আলোচনার এক পর্যায়ে জানা গেল যে মার্ক ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তাঁর পূর্বপুরুষ লিথুয়ানিয়া থেকে এসেছে কানাডায়। কেন? তাদের দেশে তো তৃতীয় বিশ্বের মতো দারিদ্র্য ছিল না। ছিল ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ। সে কারণে দেশ ছেড়েছে অনেক মানুষ। মার্কের পূর্বপুরুষ কানাডায় এলেও তিনি নিজে আমেরিকায় থাকেন। অনেকদিন থেকেই ফ্লোরিডায়।
মার্কের প্রশ্ন করার ধরন থেকে বুঝতে পারলাম যে বাংলাদেশের পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া সম্পর্কে তাঁর কিছুটা ধারণা আছে। সুতরাং আমি সংক্ষেপে তাঁকে বিষয়টা জানানোর চেষ্টা করলাম, এবং সফল হলাম বলে মনে হলো। কিন্তু তিনি ক্রমেই জটিলতর প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। ভারতেও তো বাংলাভাষী রয়েছে। তাহলে দুই অঞ্চল একসাথে হয়ে একটি দেশ হয় না কেন? আমাদের দিক থেকে আমার দুলাভাই তাঁর কিছু মত দিলেন। কথা মনে হয় আমিই বেশি বলছিলাম। এক পর্যায়ে মার্ক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি শিক্ষকতা কর? সরাসরি জবাব না দিয়ে আমি বললাম, কেন, আমি কি খুব লম্বা বক্তৃতা দিয়েছি? তার জবাবে যা বললেন সেটি আমাকে খুশি করবার জন্য বললেন কিনা জানি না, তবে আমি খুশিই হলাম। আর বললাম যে এখন না করলেও কর্মজীবনের শুরুতে কয়েক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি– যদিও সচ্ছল জীবনের আকর্ষণে সেই পেশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।
উঠি উঠি করেও মার্ক উঠছিলেন না। এবং শেষে মাফ চেয়ে নিয়ে উত্থাপন করলেন জটিল প্রশ্ন। আমরা (অর্থাৎ যে চারজন ওখানে ছিলাম) কি মুসলমান? তাহলে যে দু’জন মহিলা আছেন তাঁরা হিজাব পরেননি কেন? এই প্রশ্নের কারণও তিনি বললেন। কানাডায় যে শহরে তাঁর জন্ম এবং লেখাপড়া সেখানে প্রায় সব মুসলমান নারীই নাকি হিজাব পরেন। আমি তাঁকে দু’একটা পাল্টা প্রশ্ন করে বুঝলাম যে তাঁর পরিচিতদের প্রায় সকলেরই শিকড় উত্তর আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম (বা যে কোনো ধর্মই) তো অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয় না। সুতরাং এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমি বললাম, বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। তুমি কখনও জেনেভা এলে আমরা কফি খেতে খেতে সে আলোচনায় যেতে পারি। এর জবাবে মার্ক যা বললেন তা ছিল আমার জন্য একেবারে অপ্রত্যাশিত। বললেন, আমি স্কি করতে পছন্দ করি, এবং প্রতি বছর একবার করে সুইজারল্যান্ড যাই। তোমার সাথে দেখা হলে তো ভালোই হবে।
ধন্যবাদ এবং গুড বাই বলে চলে যাওয়ার সময় অবশ্য মার্ক আমার টেলিফোন নম্বর চাননি। তবে যাওয়ার আগে আপা এবং বাচ্চুভাইকে একটি ভালো পরামর্শ দিয়ে গেলেন– হারিকেনের প্রস্তুতি হিসেবে বাথটাবে পানি ভরে রেখো। এ কথাটি আমি সেখানকার সরকারি পরামর্শের তালিকায়ও দেখেছি, কিন্তু মার্কের ব্যাখ্যায় বোঝো গেল এটা কেন দরকার। শুধু নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, টয়লেট ফ্লাশ করবার জন্য যে এ পানি ব্যবহার করা যেতে পারে সেটি মার্ক না বললে আমার মনে হতো না।
বিয়ে কর আমাকে নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের কথা কে না জানে। আমি আগে সেখানকার কথা লিখেছি। সেখানে হাঁটতে যাওয়া আমার পছন্দের তালিকায় বেশ ওপরের দিকে। শুধু যে হাঁটা এবং দৌড়ানোর জন্য ভালো জায়গা তা-ই নয়, দেখার এবং আনন্দের জন্যও।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ রমণ আম দ র ফ ল ইট র জন য বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫