Samakal:
2025-08-01@21:55:57 GMT

টুকরো কথার ঝাঁপি

Published: 4th, April 2025 GMT

টুকরো কথার ঝাঁপি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কথা বিভিন্ন কারণে খবরের শিরোনামে আসে। সেখানে নির্বাচনের সময় দুই প্রধান দলের মধ্যে হয় তুমুল লড়াই। আবার শোনা যায় যে কর সুবিধার জন্য অনেক ধনী মানুষ বা উচ্চ আয়ের কর্মকর্তারা সেখানে বসতি দেখান। তারই সাম্প্রতিক উদাহরণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সেখানে গীতশ্রী এবং আমার প্রথম যাত্রার (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২) কয়েকদিন আগে হারিকেন ইয়ান চোখ রাঙাতে শুরু করল। তবে ফ্লাইটের আগের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে বুঝলাম যে ঝড়টি যাবে উত্তর-পশ্চিম উপকূলের দিকে আর আমাদের গন্তব্য– বোকা রেটন ও তার কাছের এয়ারপোর্ট ফোর্ট লাউডারডেল দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দিকে। অন্যদিকে ডেলটা এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইট অন টাইম দেখিয়ে যাচ্ছে।

আমরা সৃষ্টিকর্তার নাম করে রওয়ানা দিয়ে দিলাম– যদিও অনেকেই শুনে বলেছিল, তোমরা এ দুর্যোগে সেখানে যাচ্ছ! কিন্তু আমরা যাচ্ছিলাম আমার বড় বোন আর দুলাভাইকে (যাঁকে আমরা বাচ্চুভাই ডাকি) দেখতে– করোনার কারণে যাদের সাথে আমাদের প্রায় তিন বছর দেখা হয়নি। সুতরাং ফ্লাইট গেলে আমরাও যাবো– এরকমই ছিল আমাদের মত।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস ঠিকঠাক হলে কী সুবিধে তার নিদর্শন পেলাম ২৭ সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্ক থেকে ফ্লাইট যথাসময়ে উড়ে সামান্য দেরিতে হলেও নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেল গন্তব্যে। আমাদের ভাগ্য এবং সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে প্লেন থেকে বের হলাম। আপা এবং বাচ্চুভাই এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং তাদের সাথে সেখানেই দেখা হয়ে গেল, আর তাদের বাড়ি পর্যন্ত বাইশ মাইল পথ আরামে এবং গল্পগুজবে দ্রুত কেটে গেল। পরের দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হারিকেন পশ্চিম উপকূলের ট্যাম্পা, ফোর্ট মেয়ার্স, এসব এলাকায় আঘাত করবার কথা। বোকা রেটনের আকাশ একটু মেঘলা আর বাতাসে তেজ থাকলেও তেমন সিরিয়াস কিছু মনে হলো না। সুতরাং আমরা দুপুরের একটু আগে লাঞ্চ খাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

বাড়ির কাছেই কিছু দোকানপাট, আর সেখানে সুন্দর একটি ফরাসি ধরনের কাফে। আমরা প্রথমে কফি খেয়ে তারপর খাবার অর্ডার করলাম। খাওয়া প্রায় শেষ, আর তখনই আমার পেছন দিকের এক টেবিল থেকে ‘ধন্যবাদ’ শব্দটি শুনলাম । গীতশ্রীর মুখে মুচকি হাসি দেখে বুঝলাম যে ওর দিকে লক্ষ্য করেই  শব্দটি পাঠানো হয়েছে। সাথে সাথেই অন্যরাও মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম প্রেরকের দিকে। শুরু হয়ে গেল আলাপ। নাম মার্ক লাইবারম্যান। আমরা বাংলাদেশের মানুষ শুনতে তিনি উৎসাহী হয় জানতে চাইলেন দেশটির ইতিহাস। কেন আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা চাইলাম। তাহলে কি পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়াটা ভুল ছিল?

আলোচনার এক পর্যায়ে জানা গেল যে মার্ক ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তাঁর পূর্বপুরুষ লিথুয়ানিয়া থেকে এসেছে কানাডায়। কেন? তাদের দেশে তো তৃতীয় বিশ্বের মতো দারিদ্র্য ছিল না। ছিল ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ। সে কারণে দেশ ছেড়েছে অনেক মানুষ। মার্কের পূর্বপুরুষ কানাডায় এলেও তিনি নিজে আমেরিকায় থাকেন। অনেকদিন থেকেই ফ্লোরিডায়।

মার্কের প্রশ্ন করার ধরন থেকে বুঝতে পারলাম যে বাংলাদেশের পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া সম্পর্কে তাঁর কিছুটা ধারণা আছে। সুতরাং আমি সংক্ষেপে তাঁকে বিষয়টা জানানোর চেষ্টা করলাম, এবং সফল হলাম বলে মনে হলো। কিন্তু তিনি ক্রমেই জটিলতর প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। ভারতেও তো বাংলাভাষী রয়েছে। তাহলে দুই অঞ্চল একসাথে হয়ে একটি দেশ হয় না কেন? আমাদের দিক থেকে আমার দুলাভাই তাঁর কিছু মত দিলেন। কথা মনে হয় আমিই বেশি বলছিলাম। এক পর্যায়ে মার্ক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি শিক্ষকতা কর? সরাসরি জবাব না দিয়ে আমি বললাম, কেন, আমি কি খুব লম্বা বক্তৃতা দিয়েছি? তার জবাবে যা বললেন সেটি আমাকে খুশি করবার জন্য বললেন কিনা জানি না, তবে আমি খুশিই হলাম। আর বললাম যে এখন না করলেও কর্মজীবনের শুরুতে কয়েক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি– যদিও সচ্ছল জীবনের আকর্ষণে সেই পেশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।

উঠি উঠি করেও মার্ক উঠছিলেন না। এবং শেষে মাফ চেয়ে নিয়ে উত্থাপন করলেন জটিল প্রশ্ন। আমরা (অর্থাৎ যে চারজন ওখানে ছিলাম) কি মুসলমান? তাহলে যে দু’জন মহিলা আছেন তাঁরা হিজাব পরেননি কেন? এই প্রশ্নের কারণও তিনি বললেন। কানাডায় যে শহরে তাঁর জন্ম এবং লেখাপড়া সেখানে প্রায় সব মুসলমান নারীই নাকি হিজাব পরেন। আমি তাঁকে দু’একটা পাল্টা প্রশ্ন করে বুঝলাম যে তাঁর পরিচিতদের প্রায় সকলেরই শিকড় উত্তর আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম (বা যে কোনো ধর্মই) তো অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয় না। সুতরাং এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমি বললাম, বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। তুমি কখনও জেনেভা এলে আমরা কফি খেতে খেতে সে আলোচনায় যেতে পারি। এর জবাবে মার্ক যা বললেন তা ছিল আমার জন্য একেবারে অপ্রত্যাশিত। বললেন, আমি স্কি করতে পছন্দ করি, এবং প্রতি বছর একবার করে সুইজারল্যান্ড যাই। তোমার সাথে দেখা হলে তো ভালোই হবে।

ধন্যবাদ এবং গুড বাই বলে চলে যাওয়ার সময় অবশ্য মার্ক আমার টেলিফোন নম্বর চাননি। তবে যাওয়ার আগে আপা এবং বাচ্চুভাইকে একটি ভালো পরামর্শ দিয়ে গেলেন– হারিকেনের প্রস্তুতি হিসেবে বাথটাবে পানি ভরে রেখো। এ কথাটি আমি সেখানকার সরকারি পরামর্শের তালিকায়ও দেখেছি, কিন্তু মার্কের ব্যাখ্যায় বোঝো গেল এটা কেন দরকার। শুধু নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, টয়লেট ফ্লাশ করবার জন্য যে এ পানি ব্যবহার করা যেতে পারে সেটি মার্ক না বললে আমার মনে হতো না।

বিয়ে কর আমাকে নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের কথা কে না জানে। আমি আগে সেখানকার কথা লিখেছি। সেখানে হাঁটতে যাওয়া আমার পছন্দের তালিকায় বেশ ওপরের দিকে। শুধু যে হাঁটা এবং দৌড়ানোর জন্য ভালো জায়গা তা-ই নয়, দেখার এবং আনন্দের জন্যও। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ রমণ আম দ র ফ ল ইট র জন য বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ