নিষেধাজ্ঞার সময়েও জাটকা ধরছেন জেলেরা
Published: 4th, April 2025 GMT
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেঘনা অভয়াশ্রমে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাল ফেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মাছ শিকার চলছেই। অবৈধ জাল ব্যবহার করে জাটকাসহ নানা প্রজাতির পোনা ধরছেন জেলেরা। এতে ভরা মৌসুমে মেঘনায় ইলিশের আকাল দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, জাটকা রক্ষায় ও ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধিতে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার নৌসীমাকে সরকার ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ অভয়াশ্রম এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধের
পাশাপাশি মাছ ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও পরিবহনেও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। কিন্তু উপজেলার পাটারীরহাট, লুধুয়া ও মাতাব্বরহাট মাছঘাট এলাকার কয়েক অসাধু ব্যবসায়ী রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে জেলেদের দিয়ে নদীতে মাছ শিকার করাচ্ছেন। ওইসব মাছ তারা আড়তে না পাঠিয়ে ঘাট এলাকা বা নদীর পারে ব্যাপারীদের কাছে গোপনে বিক্রি করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, নিষিদ্ধ সময়ে মাছ শিকারের জন্য গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট অবৈধ ওই মাছ শিকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ওই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত জেলেরা প্রতিদিন অন্তত ১০টি বেহুন্দি জালসহ কারেন্ট জাল দিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ শিকার করছেন। এ ছাড়া মেঘনা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা ‘মাঝের চরে’ বাঁশের বেড়া ও কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার করে আসছেন। এতে জাটকাসহ প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিপুল পরিমাণ পোনা ধ্বংস হচ্ছে।
এদিকে উপজেলা সদরের হাজিরহাটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রকাশ্যেই জাটকাসহ মেঘনা নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করেও ওইসব মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। নিষেধাজ্ঞার এ সময় এসব পোনা ধরা নিষিদ্ধ হলেও মাছ বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই বললেই চলে। আবার এসব মাছ পিকআপ ও মিনি ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছেন কিছু ব্যবসায়ী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গরিব ও অসহায় জেলেরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকলেও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করে’ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছেন। এ কারণে ওই জেলেরা প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের কমলনগর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ জানান, নিষিদ্ধ সময়ে মেঘনায় জাটকাসহ মাছ শিকার বন্ধে কোস্টগার্ডের সদস্যরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে মাছ, জাল, ট্রলারসহ বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করেছেন তারা।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, মাছ শিকার বন্ধে মৎস্য বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শিগগির আরও জোরালোভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র ম ছ শ ক র কর উপজ ল করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।