বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করায় গত দুই দিনে মার্কিন শেয়ারবাজার ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাজার মূলধন হারিয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। মার্কিন অন্যতম স্টক মার্কেট নাসডাক সূচকের বড় পতন গত কয়েক দশকের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে গত শুক্রবার চীন ঘোষণা দেয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসাবে। এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে। 

ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুদের হার কমানোর জন্য ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের ওপর চাপ তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এতে বিনিয়োগকারীদের আশা জেগেছিল, পাওয়েল সুদের হার কমাতে প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়ে বাজারকে কিছুটা স্বস্তি দেবেন। কিন্তু সেই আশা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। এ ঘটনা ওয়াল স্ট্রিটে আরও হতাশা ডেকে আনে। মাত্র দুই দিনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের মূল্যমান ৬ শতাংশ কমেছে, শেয়ারবাজার থেকে উধাও হয়েছে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

এদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ এখন এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। মন্দার ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে ও মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। শেয়ারবাজারে বড় ধস, আত্মবিশ্বাসের পতন ও অতি অনিশ্চিত পরিস্থিতি দেখে ফেডারেল রিজার্ভ যদি ৬-৭ মে বৈঠকে সুদের হার কমায়, তা খুব একটা চমকপ্রদ হবে না। শেয়ারবাজারের এই পতন পরবর্তী সপ্তাহেও চলতে থাকলে বড় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। 

মার্কিন শেয়ারবাজারের এ পতন ২০২০ সালের কভিড মহামারি-পরবর্তী সময়ের চেয়ে বড় পতন। জেপি মর্গান বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৬৮ সালের পর সবচেয়ে বড় মার্কিন কর বৃদ্ধি ও এর প্রভাবে একটি বৈশ্বিক মন্দার অনেক বেশি আশঙ্কা রয়েছে। বারক্লেইসের অর্থনীতিবিদরা এখন বলছেন, এই বছর মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে এবং চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপি সংকুচিত হবে, যা মন্দার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

এদিকে সব মার্কিন সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও শুল্ক গুদামে ভিত্তি শুল্ক ১০ শতাংশ কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার প্রথম প্রহর থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা পণ্য থেকে নতুন শুল্ক নেওয়া শুরু করেন। শুক্রবার লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত টানা দুই দিনে এসঅ্যান্ডপি ৫০০তে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলো ৫ লাখ কোটি ডলার হারিয়েছে। ১০ শতাংশ শুল্কের শিকার হওয়া দেশগুলো হলো– অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, মিসর ও সৌদি আরব। 

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভের প্রস্তুতি
অন্যদিকে, স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিসহ সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নিতে ইচ্ছুকরা ট্রাম্পের শুল্ক পদক্ষেপকে ‘সরকার, অর্থনীতি এবং মৌলিক অধিকারের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

সম্পদ খোয়ালেন মার্কিন ধনকুবেররা   
শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ধনী এক দিনে মোট ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন। ব্লুমবার্গের সম্পদ সূচক অনুসারে, ব্যবসায়ীদের গড়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন মার্কিন ধনকুবেররা। মেটার শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ কমে গেছে। ফলে প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ ১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার খোয়ান, যা তাঁর মোট সম্পদের ৯ শতাংশ। অ্যামাজনের শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ পড়ে যায়। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বেজোস ব্যক্তিগত মোট সম্পদ থেকে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার খোয়ান। টেসলা সিইও ইলন মাস্ক ১১ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন। তাঁর সম্পদ কমেছে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। বিবিসি, রয়টার্স ও গার্ডিয়ান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র মন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ