রাতে স্বপ্নে জয়াসুরিয়া-মুরালিকে পিটিয়ে পরের দিন বিশ্ব রেকর্ড আফ্রিদির
Published: 6th, April 2025 GMT
সাহিবজাদা মোহাম্মদ শহীদ খান আফ্রিদি; শুধু শহীদ আফ্রিদিতেই পরিচয়। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক, সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সেরা অলরাউন্ডারদেরও একজন। কিন্তু এ স্রেফ পরিচয়, আফ্রিদি মানে সুদর্শন এক তরুণ, গ্যালারিতে যাঁর জন্য ‘ম্যারি মি…’ প্ল্যাকার্ড আর মাঠে তাঁর চার-ছক্কার চাষাবাদ। বল পেটানোর মতাদর্শে খুব কড়া বিশ্বাস বলেই যেকোনো জায়গা থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারতেন, হয়ে উঠেছিলেন ‘গেম চেঞ্জার’। ২০১৯ সালে প্রকাশিত আফ্রিদির আত্মজীবনীর নামও সেটাই—গেম চেঞ্জার।
বইটি আসলে আফ্রিদির অভিজ্ঞতা-ভ্রমণ। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিতটি সবারই জানা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি আসার ৯ বছর আগে ওয়ানডেতে প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমেই ৩৭ বলে সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড। ১৯৯৬ সালে নাইরোবির সেই ইনিংসের গল্পটা আফ্রিদি লিখেছেন তাঁর বইয়ে ‘দ্য ইনসমনিয়াকস ড্রিম ডেব্যু’ অধ্যায়ে। চলুন পড়ি সেই গল্পটা। কী লিখেছেন আফ্রিদি
প্রাথমিক উত্তেজনা কাটল একসময়। আমার প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর তখন ভীতি ও আত্মদর্শনের। তখন বয়সই বা কত! ঠিক যেটার স্বপ্ন দেখেছি, সেটাই পেয়েছি। তবে দুশ্চিন্তা যে ছিল না, তা–ও নয়।
বাবার আর্থিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা হতো। আমি সফল হতে না পারলে পরিবারের যে কী হবে! ড্রেসিংরুমে প্রতিবারই বের হওয়ার সময় মনের মধ্যে একটা ছবি উঁকি দিত। দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ক্যানভাসে আঁকা একটি পরিবার।
আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলোয়াড়েরা করাচি থেকে বিমানে উঠেছি। অনেকেরই সেটা প্রথম বিমান ভ্রমণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওড়ার পর ক্যারিবিয়ানে নেমে আমরা বাধাবিপত্তি, বিতর্কের সন্মুখীন হয়েছি, বিহিতও করেছি সবাই মিলে। একে অপরের সঙ্গে এই সম্পর্কটুকু থেকেই আমরা সারা জীবনের বন্ধুত্বের দেখা পাই এবং সেটা শুধু পাকিস্তান দলে নয়, প্রতিপক্ষ দলেও—সারওয়ান, হাইন্ডস, গেইল, কিং। এক দল তরুণের জন্য মনে রাখার মতো প্রথম সফর।
কিন্তু হারুন রশিদের সেই ‘টুথব্রাশ কলে’র (কোচ তাঁকে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবর দিয়েছেন ব্রাশ করার সময়) পর আমার দুনিয়াটাই পাল্টে গেল। জিসান পেরভেইজকে নিয়ে বিতর্কে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। প্রমাণের অভাবে মামলা খারিজ। কথা–কাটাকাটির পরও আফ্রিদি তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন) সতীর্থদের কেউ কেউ আমাকে সন্দেহ করায় খারাপ লেগেছে। ওরা ভেবেছিল, আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেদিনের সেই (জাতীয় দলে) ডাকের পর সেসব কিছুই এখন ঝাপসা স্মৃতি।
কঠিন ভ্রমণসূচিটি মনে আছে। বার্বাডোজ থেকে গায়ানা, গায়ানা থেকে লন্ডন, লন্ডন থেকে দুবাই, দুবাই থেকে করাচি—সেখানে এক ঘণ্টা দাঁড়াতে পারব, পরিবারের সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য দেখা হবে। আমার খেলার সরঞ্জামগুলো নিতে হবে তাঁদের কাছ থেকে। এরপর করাচি থেকে দুবাই ফিরে সেখান থেকে নাইরোবি। সবকিছু সেরে নাইরোবির বিমানে ওঠার পর এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে ঘুম আর হয়নি। এক মিনিটও না।
ঘুম হয় কীভাবে?
নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ইনিংসেই ইতিহাস গড়েন আফ্রিদি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।