পুঁজিবাজার গতিশীল হলেই ঈদ আনন্দ করবেন বিনিয়োগকারীরা
Published: 6th, April 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলেছে দেশের পুঁজিবাজার। রবিবার (৬ এপ্রিল) অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই বাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিনিয়োগকারীরা এই বাজার থেকে কাঙ্খিত মুনাফা পাচ্ছেন না বরং পুঁজি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ফলে এবার ঈদ অনেকটাই কষ্টের মধ্যে দিয়েই পার করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
তাই ঈদ পরবর্তী এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনে একটি গতিশীল পুঁজিবাজার প্রত্যাশা করেছেন সবাই। আর তখনই বিনিয়োগকারীরা প্রকৃত ঈদ আনন্দ উপভোগ করবেন বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য মতে, গত দেড় দশক ধরে চরম সংকটময় পরিস্থিতি পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। গত কয়েক বছর ধরে চলমান বৈশ্বিক অনৈতিক মন্দা, ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, অর্থ পাচার ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গত বছর পুঁজিবাজারে মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আশা-নিরাশার দোলাচলে শুরু হয় ২০২৫ সাল।
সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, সমন্বিত প্রচেষ্টায় নতুন বছরে পুঁজিবাজার যেন ঘুরে দাঁড়ায়। এতে অতীতে হারানো পুঁজি যেন ফিরে পেতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। সরকার পতনের পর শেয়ারবাজার উন্নয়নে নানামুখী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব সংস্কার যথাযথভাবে সম্পন্ন করা গেলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে ফিরতে হবে। তারা বিনিয়োগে ফিরলেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে। এতেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো.
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মুখপাত্র মো. নুরুল ইসলাম মানিক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমাদের পুঁজি বাজারের বিনিয়োগকারীরা আবারও একটা কষ্টের মাঝে ঈদ পার করছে। দীর্ঘ দেড় দশকের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার হতাশা নিয়ে যাচ্ছে। আমরা রাষ্ট্রীয় সরকার পরিবর্তনের পর আশান্বিত হলাম, যে হয়তো বিনিয়োগকারীদের এবার ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কিন্তু গত ৮ মাসে রাষ্ট্রের রিজার্ভ থেকে শুরু করে অনেক কিছু ইতিবাচক ধারায় এসেছে, শুধুমাত্র পুঁজিবাজার ছাড়া। বর্তমানে আবার মার্কিন প্রেসিডেন্স ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ নীতির অংশ হিসেবে শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর অনেক দেশের পুঁজিবাজারে ধস নামেছে। এদিকে চীনও পাল্টা শুল্কারোপ করায় আমেরিকার পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থনীতির পরাশক্তিগুলো যদি পাল্টা পাল্টি শুল্ক আরোপের খেলায় মেতে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের দায়িত্বশীলরা এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরাতে পারেনি। তাই পুঁজিবাজারকে গতিশীল করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “কয়েকটি ঈদ ছাড়া গত প্রায় দেড় দশক যাবত প্রান্তিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা পরিবারবর্গ নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। সে ধারাবাহিকতা বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও বিদ্যমান ছিল, যা বিনিয়োগকারীদের আশাহত করেছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী খুবই হতাশাজনক ছিল এবারের ঈদ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য। ঈদ পরবর্তী প্রত্যাশা থাকবে, বর্তমান অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ছোঁয়ায় পুঁজিবাজার গতিশীলতায় ফিরবে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাজার সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডাররা প্রত্যাশিত দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন।”
তথ্য মতে, গত ৩০ মার্চ (রবিবার) থেকে শুরু হয় পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি, যা শেষ হয়েছে গত ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতবার)। তবে টানা পাঁচ দিন বন্ধের পূর্বে এবং পরে দুদিন করে মোট চার দিন সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। ফলে টানা ৯ দিনের বিরাট ছুটির কবলে পড়েছিল দেশেল উভয় পুঁজিবাজার। টানা এ ছুটি শেষে রবিবার থেকে পুনরায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু হলো।
এদিকে, রমজানে পুঁজিবাজারের লেনদেন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলছিল। পোস্ট ক্লোজিং সেশন ছিলো ১ টা ৪০ থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। তবে ঈদের ছুটি শেষে আগের নিয়মে ফিরেছে পুঁজিবাজার। সেই হিসেবে ঈদের ছুটির পর ৬ এপ্রিল থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন সকাল ১০টায় শুরু হয়েছে। এ লেনদেন চলবে দুপুর ২টা ২০মিনিট পর্যন্ত চলবে। ওইদিন থেকে পোস্ট ক্লোজিং দুপুর ২টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত হবে। এছাড়া, অফিস সময় হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
ঢাকা/এনটি/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল নদ ন গত শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জনতার প্রত্যাশা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনায় কাজে লাগাতে চাই : মাসুদুজ্জামান
নারায়ণগঞ্জের জনগণের প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতা ও উন্নয়নমূলক চাহিদাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত “মাসুদুজ্জামানের প্রত্যাশার ক্যানভাস” ৪ দিন ব্যাপী কার্যক্রমের সমাপনী অনুষ্ঠান বুধবার সকালে চাষাড়া শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, বিশিষ্ট সমাজসেবী, ও ক্রীড়ানুরাগী মাসুদুজ্জামান। বিগত চার দিন যাবৎ সদর ও বন্দরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারী হাজী ইব্রাহীম আলমচান স্কুল এন্ড কলেজ ও মদনপুর নাজিম উদ্দিন ভূইয়া কলেজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দিনব্যাপী জনমত গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
যেখানে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন এবং মাদক, যানযট, ছিনতাই ও সন্ত্রাস-সহ শিক্ষা, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, যুব উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও স্থানীয় সেবা–ব্যবস্থা বিষয়ে প্রায় ২,০০০ মানুষ তাদের প্রত্যাশা ও মতামত লিখিতভাবে ক্যানভাসে তুলে ধরেন।
আজকের সমাপনী অনুষ্ঠানে মাসুদুজ্জামান বলেন, “নারায়ণগঞ্জের মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা জানাই আমাদের প্রকৃত লক্ষ্য। যে পরিবর্তন মানুষ দেখতে চায়, তাদের কাছ থেকেই তা সরাসরি জানা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি জানান, গত চারদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত “জনতার প্রত্যাশার ক্যানভাস” কার্যক্রমে সংগ্রহ করা সব লিখিত মতামত ইতোমধ্যে নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং এগুলো ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, গবেষণা ও নীতি–প্রস্তাবনার ভিত্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো, সড়কব্যবস্থা, নগরসেবা ও স্থানীয় সুযোগ–সুবিধার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অনেক সময় নাগরিকের প্রকৃত চাহিদা পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয় না, যার ফলে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নকশা, এবং উন্নয়ন অবকাঠামোয় সীমাবদ্ধতা দেখা দেয় যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো নারায়ণগঞ্জেও এমন উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মানুষের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় বিভিন্ন প্রকল্প টেকসই হয়নি বা সাধারণ মানুষের উপকারে আসেনি।
জনসাধারণের মতামতের গুরুত্ব আজ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আমরা বিশ্বাস করি নাগরিকদের প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতা ও বাস্তব সমস্যাকে ভিত্তি করে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনবান্ধব উন্নয়নের পথ তৈরি হয়।
এই উদ্যোগে মানুষ সরাসরি লিখিতভাবে জানিয়েছেন তারা কোন পরিবর্তন চান, কোন সমস্যার সমাধান জরুরি এবং স্থানীয় উন্নয়ন নিয়ে তাদের অভিমত কী। সব মতামত অগ্রাধিকার অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজে লাগাতে চাই।
আজকের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।
জনতার প্রত্যাশার ক্যানভাস” নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা পালন করেছে, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ স্বাধীনভাবে তাঁদের চাহিদা, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।
সংগৃহীত এই লিখিত মতামতই নারায়ণগঞ্জের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন–অগ্রাধিকার নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হবে— মনটাই বিশ্বাস করেন নারায়ণগঞ্জের সাধারন জনগণ।