কিছু হলেই ককটেল ফোটে, ঝরেছে ৭ প্রাণ; কারা বানান, রসদ কোথায় পান
Published: 6th, April 2025 GMT
বালতিতে করে ককটেল নিয়ে ‘খইয়ের মতো’ ফুটিয়ে দেশজুড়ে এখন আলোচনায় শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাশপুর। এখানে কিছু থেকে কিছু হলেই ককটেল ফোটানো হয়। গত ২৫ বছরে ককটেল বিস্ফোরণে এখানে প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন। আহত হয়েছেন কয়েক শ বাসিন্দা।
তবে বিরোধ আরও পুরোনো। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অন্তত ৪০ বছর ধরে এখানকার দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতা চলছে। বিলাশপুর ইউনিয়নের ২১ গ্রামেই ছড়িয়ে পড়েছে এই বিরোধ।
বর্তমানে এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী, আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিল মাদবর। তাঁদের বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় ককটেল বোমা তৈরি করেন, এমন অভিযোগ আছে।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলার ওপর দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা বিলাশপুর ইউনিয়নটি ভাঙনপ্রবণ। ওই এলাকার জেগে ওঠা চরের জমির দখল নেওয়া, পদ্মা নদীর নৌপথ নিয়ন্ত্রণ, বালু তোলা নিয়ন্ত্রণ, মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণ, ইউপি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংস বিরোধ চলে।
১৯৮৪ সালে ইউপি নির্বাচনের পর বিলাশপুরে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ ওরফে মেছের মাস্টার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একটি হত্যা মামলায় আবদুল লতিফ দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর এবং আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০০৯ সালের দিকে ওই দুটি পক্ষের নেতৃত্ব চলে যায় কুদ্দুস ব্যাপারী ও জলিল মাদবরের কাছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ওই দুই পক্ষকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক ও ইকবাল হোসেন নানাভাবে সমর্থন দিতে থাকেন। তাঁদের সমর্থন পেয়ে পক্ষ দুটি এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দুই পক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে ওঠে। তাঁরা নৌপথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য এনে এলাকায় বসে ককটেল বোমা তৈরি করেন। এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখার জন্য তাঁরা বিভিন্ন সময় সংঘর্ষ ও হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনায় জড়ান। তখন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করা হয়। এরপর প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
আরও পড়ুনশরীয়তপুরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৮৩ ঘণ্টা আগেগত বছরের ২৭ মার্চ দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাতে ককটেল হামলায় নিহত হন জলিল মাদবরের সমর্থক বিলাশপুরের মিয়াচাঁন মুন্সিকান্দি গ্রামের সজীব মুন্সি। এর এক মাস পর ২৪ এপ্রিল ওই দুই পক্ষ পুনরায় সংঘর্ষে জড়ায়। তখনো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। তখন ককটেল হামলায় মুলাই ব্যাপারীকান্দি গ্রামের সৈকত সরদার নামের এক কিশোর নিহত হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় কুদ্দুস ও জলিলকে আসামি করা হয়। তাঁরা দুজনেই কারাগারে যান। গত মাসে কুদ্দুস ব্যাপারী জামিনে মুক্তি পান। আর জলিল মাদবর এখনো কারাগারে আছেন।
এর মধ্যে ওই দুই পক্ষ গতকাল শনিবার সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের সমর্থকেরা শতাধিক ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। তাতে ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মারুফ মাল (২৫) নামের এক ব্যক্তির হাতের কবজি উড়ে যায়। আর হাসান মুন্সি (৫০) নামের এক ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের পর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাসপুর এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য় স ঘর ষ র সমর
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।