বালতিতে করে ককটেল নিয়ে ‘খইয়ের মতো’ ফুটিয়ে দেশজুড়ে এখন আলোচনায় শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাশপুর। এখানে কিছু থেকে কিছু হলেই ককটেল ফোটানো হয়। গত ২৫ বছরে ককটেল বিস্ফোরণে এখানে প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন। আহত হয়েছেন কয়েক শ বাসিন্দা।

তবে বিরোধ আরও পুরোনো। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অন্তত ৪০ বছর ধরে এখানকার দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতা চলছে। বিলাশপুর ইউনিয়নের ২১ গ্রামেই ছড়িয়ে পড়েছে এই বিরোধ।

বর্তমানে এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী, আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিল মাদবর। তাঁদের বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় ককটেল বোমা তৈরি করেন, এমন অভিযোগ আছে।

জাজিরা থানা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলার ওপর দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা বিলাশপুর ইউনিয়নটি ভাঙনপ্রবণ। ওই এলাকার জেগে ওঠা চরের জমির দখল নেওয়া, পদ্মা নদীর নৌপথ নিয়ন্ত্রণ, বালু তোলা নিয়ন্ত্রণ, মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণ, ইউপি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংস বিরোধ চলে।

১৯৮৪ সালে ইউপি নির্বাচনের পর বিলাশপুরে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ ওরফে মেছের মাস্টার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একটি হত্যা মামলায় আবদুল লতিফ দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর এবং আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০০৯ সালের দিকে ওই দুটি পক্ষের নেতৃত্ব চলে যায় কুদ্দুস ব্যাপারী ও জলিল মাদবরের কাছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ওই দুই পক্ষকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক ও ইকবাল হোসেন নানাভাবে সমর্থন দিতে থাকেন। তাঁদের সমর্থন পেয়ে পক্ষ দুটি এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দুই পক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে ওঠে। তাঁরা নৌপথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য এনে এলাকায় বসে ককটেল বোমা তৈরি করেন। এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখার জন্য তাঁরা বিভিন্ন সময় সংঘর্ষ ও হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনায় জড়ান। তখন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করা হয়। এরপর প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

আরও পড়ুনশরীয়তপুরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৮৩ ঘণ্টা আগে

গত বছরের ২৭ মার্চ দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাতে ককটেল হামলায় নিহত হন জলিল মাদবরের সমর্থক বিলাশপুরের মিয়াচাঁন মুন্সিকান্দি গ্রামের সজীব মুন্সি। এর এক মাস পর ২৪ এপ্রিল ওই দুই পক্ষ পুনরায় সংঘর্ষে জড়ায়। তখনো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। তখন ককটেল হামলায় মুলাই ব্যাপারীকান্দি গ্রামের সৈকত সরদার নামের এক কিশোর নিহত হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় কুদ্দুস ও জলিলকে আসামি করা হয়। তাঁরা দুজনেই কারাগারে যান। গত মাসে কুদ্দুস ব্যাপারী জামিনে মুক্তি পান। আর জলিল মাদবর এখনো কারাগারে আছেন।

এর মধ্যে ওই দুই পক্ষ গতকাল শনিবার সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের সমর্থকেরা শতাধিক ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। তাতে ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মারুফ মাল (২৫) নামের এক ব্যক্তির হাতের কবজি উড়ে যায়। আর হাসান মুন্সি (৫০) নামের এক ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।

সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের পর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাসপুর এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য় স ঘর ষ র সমর

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে বিভিন্ন ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার ৪  

বন্দরে একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামীসহ  বিভিন্ন ওয়ারেন্টে ৪ পলাতক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের  বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর)  দুপুরে উল্লেখিত ওয়ারেন্টে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকায় ওয়ারেন্ট তামিল অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো বন্দর থানার ২২ নং ওয়ার্ডের লের্জাস ১নং গল্লী এলাকার মৃত আজিম মিয়ার ছেলে বন্দর থানা ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানার একাধিক জিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী রুবেল (৩৪) একই থানার সোনাকান্দা মসজিদ এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে জিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী জনি (৩৫)|r

একই থানার রামনগর এলাকার মৃত সিদ্দিক মুন্সী ছেলে সিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত  আব্দুল কুদ্দুস (৫২) ও গকুলদাশেরবাগ এলাকার আনোয়ার মিয়ার ছেলে সিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী ইব্রাহিম (৩০)। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ