সংস্কারের প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হবে এক মাসে: আলী রীয়াজ
Published: 7th, April 2025 GMT
পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া মতামতের বিষয়ে সংলাপ আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে। সাধারণ মানুষেরও মতামত নেওয়া হবে, এসব সুপারিশের বিষয়ে।
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠকের এসব তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
প্রধান উপদেষ্টা ড.
আলী রীয়াজ জানান, সংস্কারের সুপারিশের সব শ্রেণি-পেশার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে জরিপ করা হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও মতামত জানতে পারবে আগ্রহীরা। শুধু রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু এর বাইরেও অনেক মানুষ আছেন। তাদের মতামত নিতে চাই। কমিশনের আন্তরিক প্রচেষ্টা হচ্ছে সবার অংশগ্রহণে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।
১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ মাস। কমিশন নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করবে জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, আশা করি, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হবে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হবে। যেসব সুপারিশে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। তা নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ হবে। কমিশনের লক্ষ্য জুলাইয়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা।
এদিকে বৈঠকের পর এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, তাদের দলের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের সুপারিশে ভিন্নমত থাকলেও, কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় তা দূর হয়েছে। নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার চায় এবি পার্টি। ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে বিদ্যমান সংবিধান মেনেই সংস্কার সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, গ্রহণযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বার্থে এবি পার্টি নমনীয় অবস্থানে থাকবে। সংবিধানের মূলনীতি, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, নির্বাচনে প্রার্থীদের বয়সসীমা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যসহ যেসব বিষয়ে ভিন্নমত ছিল তা নিয়ে অবস্থান বদল করেছে। তবে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। ঐকমত্য কমিশন জেলা এবং সিটি করপোরেশনগুলোকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করেছে। এবি পার্টি আগে ভিন্নমত জানালেও বৈঠকে এতে একমত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ যদি কোনো পদ-পদবি হবে না- এ শর্তে এবি পার্টি একমত জানিয়েছে।
এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার অংশ নেন। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দলটির ১৩ সদস্য ছিলেন।
এবি পার্টি ১৬৬ সুপারিশের ১০৮টিতে একমত, ২৬টিতে আংশিক একমত এবং ৩২টিতে ভিন্নমত জানিয়েছিল। দলটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের বিরোধী ছিল। সরাসরি ভোটের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছিল। প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলে প্রধান বিচারপতিকে সদস্য করার বিরোধী ছিল।
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক বলেন, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আগের মতে ভিন্নমত রয়েছে। এতে একমত হবে না এবি পার্টি।
কমিশন সংসদের ১০ শতাংশ আসনে তরুণদের প্রার্থী করার সুপারিশ করেছে। কমিশনের বরাতে সানী আব্দুল হক বলেন, তরুণের সংজ্ঞা ঐকমত্যে নির্ধারিত হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল র য় জ ভ ন নমত মত জ ন প রথম মত মত দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘মানবিক করিডর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে: চরমোনাই পীর
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)। তিনি বলেছেন, মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি শুধু মানবিক বিষয় নয়, এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। তাই বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
আজ মঙ্গলবার দলের কুমিল্লা মহানগর শাখার শুরা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এ কথাগুলো বলেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি এ তথ্য জানিয়েছে।
রেজাউল করীম বলেন, ‘রাখাইন রাজ্য নিয়ে আমাদের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য করে আসছে। বর্তমানেও বাংলাদেশে ১৪ থেকে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট মানবিক পরিস্থিতির প্রতি আমরা সংবেদনশীল। বিপর্যস্ত মানুষের জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরনের করিডর কেবল “মানবিক” রাখা যায় না। এর সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ফলে (করিডরের জন্য) মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে বা অন্য বিকল্পগুলোকেই বিবেচনা করা উচিত। কারণ, এ ধরনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার বা আরাকান আর্মি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কোনো অংশীদার নয়। তাই এ বিষয়ে তাড়াহুড়া না করে বুঝেশুনে সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী গণ–অভ্যুত্থান হয়ে গেল, কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও চরিত্রে সেই অর্থে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ক্ষমতার জন্য উদগ্র ব্যাকুলতা, প্রতিহিংসা, হানাহানি ও কূটকৌশল এখনো চলমান। এই পরিস্থিতে নির্বাচনের চেয়ে ব্যক্তি, দল ও রাষ্ট্রের সংস্কারই প্রধান মুখ্য হওয়া উচিত।
ক্ষোভ প্রকাশ করে চরমোনাই পীর বলেন, স্বৈরতন্ত্র পতনে যে ব্যক্তি জীবন দিয়েছেন, তাঁর কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করা হলো। সেই মেয়ে পরে আত্মহত্যাও করল। এর চেয়ে কষ্টদায়ক ঘটনা আর কী হতে পারে? নিপীড়িত মেয়েটাকে কেন রাষ্ট্র রক্ষা করতে পারল না, সেই জবাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্যই পতিত স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক এম এম বিলাল হুসাইনের সভাপতিত্বে শুরা অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জয়নাল আবেদীন, ইসলামী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হারুনুর রশিদ প্রমুখ।