যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক সাড়া আশা করছে সরকার
Published: 8th, April 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ট্রাম্প প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। সরকার এ সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক কিছু প্রত্যাশা করছে। সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হয় এমন ব্যবস্থা হবে বলে আশা করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এ সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র করে ফেলল, আমরা সমন্বয় করব, বিষয় সেটা নয়। আমরা আমাদের ইস্যুটা তুলে ধরব। আমরাও সহযোগিতা করব, তারাও সহযোগিতা করবে। যেটা হতে একটা উইন উইন অবস্থা। আমার বিশ্বাস, বিষয়টির সমাধান হবে। ইতিবাচক কিছু হবে। ইতিবাচক বলতে তাদেরও লাভ হবে, বাংলাদেশেরও লাভ হবে।’
এ সময় শুল্ক সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দেওয়ার পর সেখান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘না, আমরা এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা। এ জন্য আরও ১০০ পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ নিয়ে সরকার কাজ করছে।
সামগ্রিকভাবে বিষয়টি সামাল দিতে কী কৌশল কী নেওয়া হচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিভিন্ন রকমের বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আসলে বিষয়টা অতি পরিবর্তনশীল একটা বিষয়। তিনি বলেন, সোমবার আমেরিকান প্রশাসন বলেছে, চীনের ট্যারিফ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে। এ ধরনের পরিবর্তনশীল অবস্থায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া জটিল।
ক্রয় কমিটিতে বিভিন্ন প্রস্তাব অনুমোদন
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে মসুর ডাল, চাল ও এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পণ্যগুলোর দামও আগের তুলনায় কম। আগে গুটিকয় সরবরাহকারী পণ্য দিতেন, উন্মুক্ত করার কারণে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ফলে কম দামে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে অনেক সাশ্রয় হচ্ছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরভিত্তিক এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। প্রতি টন ৪১৬ দশমিক ৪৪ ডলার দামে এ চাল কিনতে ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি টাকার বেশি। প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা। এর আগে গত ২৭ মার্চ ভারতের বগাদিয়া ব্রাদার্স থেকে প্রতি টন ৪২৪ দশমিক ৭৭ ডলার দরে ৫০ হাজার টন একই চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন হয়।
স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাবও বৈঠকে অনুমোদন করা হয়। এ দুই কার্গো এলএনজি আসবে সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কার্গো কেনা হবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া থেকে। প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১২ দশমিক ৩৮ ডলার দরে এই এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে প্রায় ৫৯৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার থেকে কেনা হবে আরেক কার্গো এলএনজি। প্রতি ইউনিট ১২ দশমিক ৬৭ ডলার হিসেবে ব্যয় হবে ৬০৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর আগে গত ২৭ মার্চ সিঙ্গাপুরের গানভর সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাজ্যের টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার থেকে যথাক্রমে প্রতি ইউনিট ১৪ দশমিক শূন্য ৮ এবং ১৪ দশমিক ৫৭ ডলারে দুই কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
বৈঠকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য পৃথক দুটি দরপত্রের মাধ্যমে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১ কোটি ২০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে শেখ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। প্রতি কেজি ৯২ টাকা ৭৫ পয়সা দরে এ ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
আরেক প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন করেছে কমিটি। প্রতি লিটার ১ দশমিক ২৮ ডলার অর্থাৎ স্থানীয় মুদ্রায় ১৫৬ টাকা ১৬ পয়সা দরে থাইল্যান্ডের লাইফ অ্যান্ড হেলথ (থাইল্যান্ড) থেকে এ তেল কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি টাকা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র প রস ত ব হ জ র টন দরপত র আমদ ন সরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
তিন প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় হবে ৩৯০ কোটি টাকা
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৩ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই ৩ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৯০ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৫ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাব দুটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটি সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ (কেরানীগঞ্জ, ঢাকা) প্রকল্পের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপত্র জমা পড়ে। ৪টি প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।তার মধ্যে ৩টি দরদাতার দর সর্বনিম্ন এবং সমদর হওয়ায় এ বিষয়ে বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসারে নির্বাচিত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান পদ্মা অ্যাসোসিয়েটস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬১ কোটি ৯০ লাখ ১২ হাজার ৮৬৪ টাকা।
সভায় ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মনাল ভবন নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৩০ এপ্রিল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ এর পূর্ত কাজ ২৭৫ কোটি টাকায় যৌথভাবে সিআরএফজি এবং এনডিইর সঙ্গে ক্রয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে প্রকল্প চলমান অবস্থায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড সমূহ পরিবর্তিত হওয়ায় নতুন করে বিভিন্ন ধরনের কমিউনিকেশন ও সিকিউরিটি সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৮৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৯ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
সভায় ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ প্রকল্পের আওতায় ঘোড়াশাল স্টেশনের নিকটবর্তী টেক অব পয়েন্ট থেকে পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার অভ্যন্তর পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ সাইডিং লাইন নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে।৩টি দরপ্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৪০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার ১০২ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ