চীনের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ থেকে সরবেন না ট্রাম্প: হোয়াইট হাউস
Published: 9th, April 2025 GMT
হোয়াইট হাউস মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না। এই পদক্ষেপটি চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্র করবে, কারণ চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোসণা দিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, চীনের উচিত ছিল না পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, যখন আমেরিকা আঘাত পায়, তখন আরও জোরালোভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। সেই কারণে আজ রাত ১২টা থেকে চীনের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। তবে প্রেসিডেন্ট মনে করেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও চীন একটি চুক্তি করতে চান, কিন্তু তারা জানে না কীভাবে শুরু করবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ‘শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই শুল্ক যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
লেভিট বলেন, যদি চীন আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখায়, প্রেসিডেন্ট দারুণ উদার মনোভাব দেখাবেন। লেভিট ট্রাম্পের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, চীন একটি চুক্তি করতে চায়, যা ট্রাম্পও ট্রুথ সোশ্যাল- এ আগেই বলেছিলেন, ‘চীন মরিয়া হয়ে একটি চুক্তি চায়, কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে তা জানে না। আমরা তাদের ফোনের অপেক্ষায় আছি। সেটা হবেই।’
ট্রাম্প এর আগের দিন ট্রুথ সোশ্যাল-এ হুঁশিয়ারি দেন, বর্তমানে বিদ্যমান ৫৪ শতাংশ শুল্কের ওপর আরও ৫০ শতাংশ যুক্ত করবেন। এর আগে ট্রাম্প গত সপ্তাহে চীনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ কর আরোপ করেছিলেন।
চীনের পক্ষ থেকে পাল্টা হুমকি আসে সোমবার সন্ধ্যায়, তারা জানায়, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব এবং আমেরিকার ওপর আরও কর আরোপ করা হবে। চীন বলেছে, ট্রাম্পের শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় তারা ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে, যা এই সপ্তাহেই কার্যকর হবে। তারা যুক্তি দিয়েছে, আমদানির ওপর ব্যাপক শুল্ক শুধু আমেরিকার স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে না, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতি, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাও বিপন্ন করে।
হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনে তৈরি হওয়া আইফোনের উৎপাদন আমেরিকায় স্থানান্তর করা যেতে পারে। তবে যদি অ্যাপল কর বহনের পরিবর্তে তা ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়, তাহলে আইফোনের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে।
লেভিট বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের চাকরি- প্রথাগত ম্যানুফ্যাকচারিং থেকে শুরু করে উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর কাজ- সবই প্রেসিডেন্ট দেশে ফেরাতে চান।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন আমাদের সেই সক্ষমতা, শ্রমশক্তি ও সম্পদ আছে।’
এদিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, ভিয়েতনাম ও জাপানও আলোচনার টেবিলে আসছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প চ ন র ওপর ব যবস থ আম র ক
এছাড়াও পড়ুন:
টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎসের একটি পণ্য রপ্তানি স্বস্তিতে নেই। টানা তিন মাস ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তারপরের দুই মাস, অর্থাৎ আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ এবং সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। তাতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ বিদায়ী অর্থবছর পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান আজ সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।
দেশের মোট রপ্তানি ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে এই খাতের রপ্তানি। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ৩৮ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। শুধু গত মাসে ১০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৯ শতাংশ।
এদিকে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি গত মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।
দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।